Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৪ দাবিতে ভিসিকে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের স্মারকলিপি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০২ পিএম

ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ প্রক্টরকে অপসারণসহ ৪ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের স্মারকলিপি দিয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী ১২টি ছাত্র সংগঠন। বৃহস্পতি দুপুরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসি কার্যালয়ে যায়।

১২টি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, স্বতন্ত্র জোট, ছাত্র গণমঞ্চ।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ভিপি নূরুল হক নূরসহ সকল শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার ও আইনানুগ বিচার করতে হবে, শির্ক্ষাথীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরকে অপসারণ করতে হবে, ডাকসুতে হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে। হামলায় আহতদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হলে হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছি যে, ডাকসু ভবনে নৃশংস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ আহত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হেয়েছে যার বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য আমরা পাই নি। উপরন্ত আহতদেরকেই দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্খিত।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, এস এম হলে, বিজয় ৭১ হলসহ ক্যাম্পাসে বারংবার নুরুল হক নুরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হচ্ছে। কিন্তু হামলাকারীরা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। যার ফলে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। যার দায়ভার প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

জনাব আপনি জানেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতায় আবুবকর, হাফিজুর মোল্লাসহ অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে হল প্রশাসন বারবার ব্যর্থ তার পরিচয় দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদখলদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।অনেক ঘটনা প্রতিদিন ঘটে যা তারা প্রশাসনের কাছে প্রকাশ করার মতো নিশ্চয়তাও পায় না। সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের পক্ষ নিতে গিয়ে প্রতিটি ঘটনায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি আবাসিক হলে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব জারি রেখে, ছাত্রদেরকে গেস্টরুমে ম্যানার শেখানোর নামে ভয় দেখিয়ে গেস্টরুমগুলোকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছে। গেস্টরুম নির্যাতনে ছাত্র নিহত হবার ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে দীর্ঘস্থায়ী আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

শিক্ষাঙ্গনের এমন দমবদ্ধ ও অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার ভূলণ্ঠিত। মতপ্রকাশ করা একজন ছাত্রের স্বাভাবিক অধিকার হলেও বুয়েটের আবরার ফাহাদকে স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।

ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নূরুল হক নূরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করা হয়েছে। সেই হামলার দিন আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রক্টরকে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নৃশংসতা বন্ধ করতে উদ্যোগী হবার কথা বললে উনি যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হন নি, তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে হামলাকারীদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর এই আচরণ এটা স্পষ্ট করে যে, তিনি হামলাকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং হামলার সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। অর্থাৎ ছাত্রদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রক্টর দায়িত্ব পালনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এরকম পক্ষপাতদুষ্টু নির্লজ্জ একজন ব্যক্তি কোনোভাবেই প্রক্টরের পদে বহাল থাকতে পারেনা।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য সিসি টিভি লাগানো হয়েছে অথচ সেই সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রক্টরিয়াল প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

এমতাবস্থায়, আমরা আপনার মাধ্যমে অবিলম্বে নিম্নোক্ত ৪ দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই। অন্যথায়, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে ‍তুলবো।

জনাব, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ক্যাম্পাসে চলমান সন্ত্রাস দখলদারিত্ব ও সহিংসতার অবসানের জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রসমাজের স্বার্থে আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ১২ টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’’ গঠন করছি। যেকোনো সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের লড়াই-সংগ্রাম পরিচালনা করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ