পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সাবেক এক শিক্ষকের প্রাইভেট কারের চাপায় এক নারীর মৃত্যুর পর নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সরব হয়েছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মানে গত দুই দিন ধরে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেন তারা। তুলে ধরেন ১১ দফা দাবি। গতকাল রোববার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার। শিক্ষার্থীদের ১১ দফার সাথে আরো কয়েকটি দাবি যুক্ত করে ২১ দফা দাবি জানায় নিরাপত্তা মঞ্চ।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘টিএসসিতে রক্ত কেন?’, ‘ইটস ভার্সিটি, নট পার্ক’, ‘চা, চপ, শিঙাড়া তো অনেক দিলেন, এবার একটু নিরাপত্তা দেন’, ‘কবরই কি শেষ নিরাপদ স্থান?’ ‘অনিয়মের ঠাঁই নাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’ প্রভৃতি স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশ থেকে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা। রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা। ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষে প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত রিকশা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা। ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে ন্যূনতম ৩০০ ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যবস্থা করা। প্রথম বর্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা। প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করা। নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।
সাড়ে এগারোটার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে কয়েকটি ইউনিটে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়ে ব্যারিকেড দেয় তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট গাড়ি ব্যতীত কাউকে ঢুকতে দেয়নি শিক্ষার্থীরা। বহিরাগত সকল যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। এমনকি পুলিশের গাড়িকেও আঁটকাতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তাদের এ কর্মসূচি চলতে থাকে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সহমত প্রকাশ করেন ভিসি। এর আগের দিন রাতেই টিএসসি এলাকার সকল ভাসমান দোকানীকে হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে গতকাল টিএসসিতে কোনো ভাসমান দোকানপাট ছিল না। শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের ফলে ক্যাম্পাসে কোনো বহিরাগত গাড়ি ঢুকতে পারেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথ মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ভিসি চত্বর, কার্জন হল এলাকা, ঢাকা মেডিকেল এরিয়ায় শক্ত অবস্থান। শিক্ষার্থীরা জানান, নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মূলত তাদের এই অবস্থান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।
আন্দোলনকারী শাফিউল ইসলাম শাফিন নামের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আর কারো রক্ত ঝড়ুক তা চাই না। বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই।
কাজী জিয়াউল হক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই ক্যাম্পাসে চলার মতো কোন পরিবেশ নাই। সবসময় আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়। যানবাহন, কোলাহল, বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ এই ক্যাম্পাসকে পার্কে পরিণত করেছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আজকে রুবিনার (শুক্রবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো নারী) জায়গায় গাড়ির চাকার নিচে আমাদের কোনো সহপাঠী বন্ধু কিংবা আমি নিজেই হতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখন একজন নারী নিরাপদ নয় তখন আমরা যে নিরাপদ তা কীভাবে বুঝব? মূলত আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। এসময় ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নেয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন তারা। একই দাবিতে এদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র আন্দোলন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।