Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে গণহত্যার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিজেপি সরকারের পাস করা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর প্রতিবাদে ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। তারা এ বিল বাতিলের দাবীতে আন্দোলন করছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে এ নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি এবং সমাবেশ নিষিদ্ধ করেও তা সামাল দিতে পারছে না। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। সেখানের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। গত কয়েকদিনে পুলিশের গুলিতে ১৫ জন নিহত হয়েছে। পুলিশের দলন-পীড়ন, নির্যাতন ও গুলি উপেক্ষা করেই মানুষ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার এ নিয়ে তেমন কোনো ভ্রæক্ষেপ করছে না, যদিও দেশব্যাপী এনআরসি করার বিষয়ে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশে এনআরসির ঘোষণা এখনো হয়নি। যখন হবে তখন তা এমনভাবে করা হবে, যাতে কোনো ভারতীয় নাগরিক অসুবিধার মধ্যে না পড়েন। সরকারের এ ঘোষণা প্রতিবাদকারীদের কেউই বিশ্বাস করছে না। তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সিএবি বিল নিয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘ বলেছে, এটা করা হয়েছে সেখানের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিতাড়নের জন্য। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একই ধরনের কথা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত গণহত্যার দিকে ঝুঁকেছে। সেখানে গণহত্যা শুরু হতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, ভারতের নাগরিত্ব বিল মুসলমান ও ইসলামবিদ্বেষ থেকে করা হয়েছে।
আসামে এনআরসি, কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন করা এবং সর্বশেষ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করার মধ্য দিয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার যে মূলত দেশটি থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা এখন সকলেই বুঝে গেছে। বিজেপির লক্ষ্য এসব আইন ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। বিজেপি সরকারের এই উদ্যোগ দেশটির নাগরিকরা মানতে পারছে না এবং মেনে নিচ্ছে না। দেশটির বিরোধী নেতারাও স্পষ্ট করে বলেছেন, এনআরসি ও সিএবি চালু করে সরকার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে চাইছে। তারপর এনআরসি করে মুসলমানদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গত শুক্রবার এক সমাবেশে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বিজেপি নাগরিকত্ব দেয়ার কে? এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। অথচ বিজেপিবিরোধী ভোট রয়েছে ৬২ শতাংশ। তিনি বলেছেন, বিজেপি পেশিশক্তি দিয়ে আইন কার্যকর করছে। আমরা এ আইন মানছি না। কার্যকরও করতে দেব না। এদিকে দিল্লীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিলের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশটির অন্য রাজ্যগুলোতে আন্দোলন দমাতে পুলিশ নির্যাতন ও গুলি করছে। এতে সারা ভারত উত্তাল হয়ে উঠেছে। দেশটির নাগরিকদের আন্দোলন ঠেকাতে সরকারও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে তার অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ছে না। পর্যবেক্ষকরা তার এ আচরণকে আত্মঘাতী ও গোয়ার্তুমি হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, দেশটির যে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক পরিচিতি ছিল, বিজেপি তা থেকে পাল্টে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দেশে পরিণত করতে চাইছে। ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা সমর্থন করে। দেশটির এ বৈশিষ্ট্যর ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিজেপি সরকার একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। এতে ভারতের প্রায় বিশ কোটি মুসলমানের উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই ভারতে মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে, তার ওপর নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তাদের অস্তিত্বের ওপর প্রচন্ড আঘাতের শামিল।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ভারতে মুসলমানরা বিজেপি সরকার কর্তৃক নিপীড়িত ও বঞ্চিত হলেও দুয়েকটি দেশ বাদে মুসলমান দেশগুলো এর কোনো প্রতিবাদ বা ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। বিশেষ করে সউদী আরব এ ক্ষেত্রে টুঁ শব্দ করছে না। বিশ্বে প্রভাবশালী মুসলমান দেশ হিসেবে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতি তার যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা সে করছে না। দেশটির এ ধরনের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের। শুধু সউদী আরব নয়, মুসলমান দেশগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওআইসিও এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ। মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় সংগঠনটির নিস্ক্রিয়তা অতীতে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তেমনি বর্তমানেও হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের সংগঠন যদি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা এবং বিপদে পাশে না দাঁড়ায় তবে তা থাকা না থাকা একই কথা। ভারত যেভাবে মুসলমানদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক আইন ও বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এর বিরুদ্ধে মানবিক কারণে হলেও মুসলমান দেশ এবং ওআইসি’র কার্যকর প্রতিবাদ ও ভূমিকা রাখা জরুরি। সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও যদি এই প্রতিবাদ করা না হয়, তবে বিশ্বে কোনো দেশেই মুসলমানরা নিরাপদ থাকতে পারবে না। আমরা আশা করব, মুসলিম বিশ্ব এবং ওআইসি ভারতে মুসলমানবিরোধী যে নিবর্তনমূলক আইন ও পদক্ষেপ নেয় হয়েছে তার বিরুদ্ধে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।



 

Show all comments
  • Lion Sayeed ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    মোদি একজন দাঙ্গাবাজ,,, সে দাঙ্গাবাজী ছাড়া কি আর বুঝবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saifur Rahman ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    আল্লাহ সকল মুসলিম ভাই বোনদের হেফাজত করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • M Aziz Uddin ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    উপরওয়ালা সবাই কে হেফাজত করোক
    Total Reply(0) Reply
  • Abraham Bangol ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    ওআই‌সিতে যেই সব নেতারা আছে তারা সবাই .... মার্কা নেতা । তারা মুসলমান‌দের তা‌বেদারী ক‌রে না । তারা তা‌বেদারী ক‌রে ইহুদী , নাসার ও পুত্ত‌লিক‌দের । তারা মুনাসমান‌দের নয় , মুনা‌ফেক সর্দার আবদুল্লাহ ইব‌নে ওবাই‌য়ের অনুসারী ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Moinuddin ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    এই প্রথিবীতে মানবতা বলতে কিছুই নেই,,,। থাকলে মুসলিমরা কেন নির্যাতিত হয়। ভারত নিজের দেশের সজ্ঞালুদের অধিকার কেডে নিয়ে অন্যদেশের সজ্ঞালুদের নিজ দেশে বসবাস করাতে চাই। হয়তো নরেন্দ্র মোদি জানেন ইতিহাস মাত্র একশ বছরের হয়নায় হিন্দুরা ভারতে ক্ষমতায় আছে তাথে বুঝা জাচ্ছে হিন্দুরা কতটা উগ্রাবাদী।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rubel ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    যে দেশে হিন্দু রা কয়েক বছর ধরে শাসন করে মুসলিম হটাও আন্দোলন করতেছে ,আর মুসলিম রা হাজার বছর শাসন করে হিন্দু হটাও যদি আন্দোলন করতো ,এখন একটা হিন্দুও পাওয়া যেতো না ,
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Ahmed ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    মোদি তার ক্ষমতাকে দীর্ঘজীবী করার জন্য এই দানবীয় চাল চালছে।এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব হবে ভয়ংকর
    Total Reply(0) Reply
  • Ziared Rahman ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    জতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক ভাবে কেন ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে চুপ কিছু বুঝলাম না। এই ভাবে চোখের সামনে একটা জাতিকে শেষ করে দিবে সেটা দেখার জন্য কেউ নেই বা কথা বলার কেউ নেই এটা কেমন কথা হল? মুসলিম দেশ গুলা কেন চুপ কিছুই বুঝতে পারছি না!!! পৃথিবীতে মানবতা নামের অফিস গুলা ভেঙ্গে ফেলা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • মোস্তাফা কামাল ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:০০ এএম says : 0
    ওআইসি কি ইহুদি দের দখলে
    Total Reply(0) Reply
  • মোস্তাফা কামাল ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:০১ এএম says : 0
    ওআইসি কি ইহুদি দের দখলে
    Total Reply(0) Reply
  • Faruq Shikdar ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:২৩ এএম says : 0
    OIC কি এই সব দেখার জন্যে গঠন করা হয়েছে? নাকি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যে? যার যার স্থান থেকে এই বিলের প্রতিবাদ করা উচিত, আর ওয়াইসি কে একটা পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন