পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার-আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত রবিবার প্রকাশিত প্রথম দফায় প্রকাশিত তালিকা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে নিহত এবং যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটরের নামও রাজাকারের তালিকায় স্থান পেয়েছে, ফলে তালিকা নিয়ে ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়েও বিতর্ক ও সংশয় রয়েছে। এখন রাজাকারের তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর হাতে নিহতের নাম থাকায় দুই তালিকা নিয়েই বিভ্রান্তি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ তালিকা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে পাওয়া। এখানে নতুন করে কারো নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে এ তালিকা ১৯৭১ সালেই তৈরি হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরেও তা প্রকাশ করা হয়নি কেন? মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের প্রয়োজনে এ তালিকার একটা ঐতিহাসিক মূল্য থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে এ যাবৎ কোনো সরকারই এ তালিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কিন্তু কথিত তালিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাতে তালিকার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
পাকিস্তানিদের দুঃশাসন এবং বৈষম্যনীতি এবং বাংলাদেশে গণহত্যা শুরুর কারণেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের জনগণের মধ্যে একটি ব্যাপক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতার বিরোধী অংশের বাইরেও অনেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এহেন বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে এবং সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তুলতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর সাধারণ ক্ষমার প্রশ্ন উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় অনেকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি ও জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে এসে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করার পক্ষেও একটি জনমত গড়ে উঠেতে দেখা গেছে। এটি যদি চার দশক আগে শুরু হতো তাহলে হয়তো অনেক প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও প্রমাণাদি পাওয়া সহজ হতো, যা এখন পাওয়া সম্ভব নয়। পাকিস্তানিদের করা রাজাকারের তালিকায় যখন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের নাম উঠে আসে তখন সামগ্রিক বিষয়ের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা, অবিশ্বাস ও সন্দেহ তৈরি হয়। এ ধরনের বাস্তবতা পুরো বিষয়গুলোকে আরো জটিল ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক টানপোড়েন কাটিয়ে আমরা এখন একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে চলেছি। আর এক বছর পর ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে চলেছি। অর্থনৈতিক মুক্তি ও বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিভিন্নমতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যেমন একদিকে অর্থনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে চলেছি, অন্যদিকে সামাজিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত আন্তর্জাতিক সংকট এবং রোহিঙ্গা সমস্যাসহ আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সাথেও জড়িয়ে পড়েছি। এহেন বাস্তবতায় রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সব বিভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বিভক্ত জাতি জাতীয় কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকা প্রকাশে যে সব সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তা আগেই নিরূপণ করা বাঞ্ছনীয়। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে পাকিস্তানিদের দেওয়া রাজাকারের তালিকা প্রকাশের কারণে জাতি আবারো বিভক্তি ও তিক্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়–ক, এটা কারো কাম্য হতে পারে না। পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে হলে সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।