Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজাকারের তালিকায় বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জায়া সহ কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের নাম

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:৫৬ পিএম

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশালের ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও তার মা শহীদ জায়া ঊষা চক্রবর্তী, পাক বাহিনীর গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক মিহির দত্ত, পাকিস্তানী হানাদার-এর হাতে গ্রেফতার হয়ে যশোর কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাজাকারের এ বিতর্কিত তালিকা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় মুক্তযোদ্ধা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এমনকি তালিকার শুদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর পিতা তৎকালীন বিশিষ্ট আইনজীবী সুধীর চক্রবর্তীকে পাকিস্তানী সেনারা বাসা থেকে ধরে বরিশালের বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার লাশও পওয়া যায়নি। অথচ তার ছেলে ও স্ত্রীর নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় বিষ্ময়ে হতবাক সকলে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায়, বরিশাল সদর উপজেলার ১০৭ জন কথিত রাজাকারের নামের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীতা করার দায়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত সুধীর চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তীর নাম ৪৫ নম্বর ক্রমিকে এবং তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর নাম রয়েছে ৬৩ নম্বরে। তাদের দুজনের নামেই আবার মামলা দেখানো হয়েছে। ঐ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য ও শহীদ সুধীর চক্রবর্তীর নাতনী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং গত বছর বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশব্যাপী বিশেষ আলোচনায় এসেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও শহীদ জায়া ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুরমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা এ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, যার ক্রমিক নং ১১২, পৃষ্ঠা ৪,১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বারে। আমার ঠাকুরদা এ্যাড. সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানী মিলিটারি বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নাম্বারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। ভয় দেখিয়ে আমাদের কিছু করা যাবে না।’
এ প্রসঙ্গে মনীষা চক্রবর্তী সাংবাদিকদেও বলেন, বিষয়টি খুবই বিষ্ময়কর। কারন, আমাদের পরিবার স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার ঠাকুরদা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারেরা নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার বাবা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। এরকম একটি পরিবারকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং ষড়যন্ত্র। আমরা দাবি করবো, এর সঙ্গে যে চক্র জড়িত তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
এদিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একই দিনে বরিশালের প্রবীন অ্যাডভোকেট জীতেন্দ্র লাল দত্ত, তার পুত্র মিহির লাল দত্ত ও সুবীর দত্তকে ধরে নিয়ে নগরীর সিঅ্যান্ড রোডের পুলে গুলি করলে জীতেন্দ্র লাল দত্ত ও সুবীর দত্ত প্রাণ হারায়। মিহির লাল দত্তকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খালে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। স্বাধীনতা পরবর্তিকালে আইন ব্যবসা করে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। অপরদিকে তৎকালীন ইর্স্টান ব্যাংক অফ পাকিস্তানে কর্মরত কাশীপুরের জগদীশ মুখার্জীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নির্যাতন করে এবং বিচারের জন্য তাকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। দেশের স্বাধীনতার পর তিনি যশোর কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। তাকেও রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক- বীর প্রতীক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক। অবিলম্বে এসব তালিকা সংশোধন করে ঐসব পরিবারের সদস্যদের সম্মান সুরক্ষা করা উচিত। এই অসম্মানের জন্য তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমজি ভুলু বলেন, একজন শহীদের স্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান এ ব্যপাওে সাংবাদিকদেও বলেন, তিনি বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে এই নামের তালিকা দেয়া হয়নি। তালিকা হাতে পেলে যাচাই-বাছাই করে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।



 

Show all comments
  • ** হতদরিদ্র দিনমজুর কহে ** ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:১৬ পিএম says : 0
    দূঃখ করবেননা,ভুল হতে পারে।মুক্তি যোদ্ধাও রাজাকার হয়,আবার রাজাকারও ভাতা পায়।আচ্ছা এলাকার মানুষ দেখে নাই কে মুক্তি যোদ্ধা?কে রাজাকার?? মুক্তি যোদ্ধাওনা রাজাকার না এমন ও তো আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজাকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ