Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক পরিবহন ধর্মঘট কার স্বার্থে

| প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এই আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে হঠাৎ করেই অঘোষিত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। গত সোমবার থেকে দেশের অন্তত ১২টি জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস মিনিবাস যাত্রা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। আকস্মিক বাস ধর্মঘটে বিপদে পড়েছেন হাজার হাজার বাসযাত্রী। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংশ্লিষ্টরা। দেশের সড়ক পরিবহন আইনের পরিবর্তন ও যুগোপযোগী করার দাবি দীর্ঘদিনের। সড়ক পরিবহন চালক-শ্রমিকদের বেপরোয়া মনোভাব ও পুরনো আইনে গুরু অপরাধে লঘুদ-ের সুযোগ নিয়ে তারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ যাত্রী ও পথচারীদের হতাহতের পেছনে চালকদের প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর তথ্যসহ সড়ক পরিবহন আইনের ও লঙ্ঘন ও ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালানোর তথ্য উঠে এসেছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের গাফিলতি, অদক্ষতা ও ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় অপেক্ষাকৃত কঠোর শাস্তির বিধানসহ সড়কে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনে জরিমানার হার কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই এই আইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও গাড়ি চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দু’ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আইন কার্যকর করা শুরু হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিচ্ছিন্নভাবে ধর্মঘট নামতে শুরু করে।
সড়কে দুর্ঘটনা, যানজটসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন অন্যতম জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সড়কপথে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান কোনো সংস্থার হাতেই নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন বাসযাত্রী দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছেন। আহত হওয়ার সংখ্যা গড়ে শতাধিক। তবে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামের একটি সংস্থা থেকে পরিচালিত জরিপে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। আর্থিক ক্ষতির হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি হয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির ২ শতাংশ। গবেষকরা দুর্ঘটনার সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতির অঙ্ক আরো অনেক বেশি বলে মনে করেন। দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যমান আইনে গুরু পাপে লঘুদ- এবং আইনের প্রয়োগ না হওয়া, চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালনা, পরিবহনের ফিটনেস না থাকা এবং সড়কের বেহালদশা, পথচারীদের অসতর্কতা এবং যথেচ্ছ আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলেই কেবল সড়ক দুর্ঘটনা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য আমাদের জাতয়ি উন্নয়ন অগ্রগতির অন্যতম অন্তরায়। একশ্রেণির পরিবহন মালিক-শ্রমিকের কাছে দেশের কোটি কোটি মানুষ জিম্মি দশা অবসানের প্রয়োজনেই নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। গত বছর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সারাদেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের জোরালো দাবি উঠে। এর পর পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ধর্মঘটে দেশ অচল হয়ে পড়তে দেখা গেছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে এবার নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যত চাপই আসুক না কেন সড়ক আইন বাস্তবায়ন করা হবে। সেই সাথে তিনি আইন প্রয়োগে অযথা বাড়াবাড়ি না করতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন। আইনের সফলতা বা সুফল নির্ভর করে এর অপপ্রয়োগ ও অন্যায্য প্রয়োগ বন্ধ করার উপর। দেশে লাখ লাখ গাড়ির ফিটনেস নেই, লাখ লাখ চালকের লাইসেন্স সার্টিফিকেট নেই। বেশিরভাগ চালক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসছেন। ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এবং পুরনো আইনে কয়েকশ টাকা জরিমানা দিয়ে তারা বছরের পর বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। এখন শাস্তি ও জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের সিদ্ধান্ত তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। মূলত এসব অবৈধ ও ভূয়া লাইসেন্সধারী চালক এবং ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ির মালিক, চালক ও শ্রমিকরাই ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে নতুন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। তাদের সাথে সমঝোতা বা নরম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও বিশৃঙ্খলা রোধ করতে আইনের যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রয়োগের পাশাপাশি গাড়ির মালিক, চালক, যাত্রী, পথচারী ও নাগরিক সমাজকে সচেতন ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক পরিবহন


আরও
আরও পড়ুন