Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পঞ্চম শ্রেণি পাসেই ড্রাইভিং লাইসেন্স

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন আসছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

৫ বছর আগে জনমতের প্রতিফলন ঘটিয়ে আইনটিতে সংযোজন করা হয়েছিল কঠিন কঠিন ধারা। এসব ধারা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ৫ বছরেও আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম থেকে নামিয়ে পঞ্চম শ্রেণি বা সমমান করা হচ্ছে। ঘুরে আবারো নতুন করে আইন সংশোধন করছে সরকার।

সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন ২০২২’-এর খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হলে তা আবার সংশ্লিষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিয়েছে। কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কমপক্ষে ১০ বছর মোটরযানের কাজ করে ড্রাইভার হিসেবে দক্ষ হয়ে উঠে ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্ট পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। তা হলে তাকে ড্রাইভিং লাইসন্স প্রদান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। এছাড়া তিনচাকা বিশিষ্ট মোটর যান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তির্ণ হলে চলবে। এমন বিধান যুক্তকরে সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন-২০২২ কতিপয় ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। পরিবহন সংগঠনগুলোর চাপের মুখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। খসড়া অনুযায়ী আইনটি সংশোধিত হলেÑ নিয়ন্ত্রণহীন এবং চালকের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে চালককে দায়ী করে বিচার করা যাবে না। তবে, কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তখন শুধু এটি প্রয়োগ করা যাবে।

খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই একজন চালক নিবন্ধনকৃত থ্রি-হুইলার বা তিন চাকার গাড়ি চালাতে পারবেন। অন্য পরিবহনগুলো চালানোর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে, একজন সহকারী বা সুপারভাইজারের ১০ বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলে এবং ড্রাইভিং সক্ষমতা বোর্ডে পাস করলে তার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত মানা প্রয়োজন হবে না বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি ধারা সংশোধন করা হবে। ভারি ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। এর পরপরই এটি পরিবর্তনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা দুই দফায় ধর্মঘট ডাকে। এর ফলে আইনটি কীভাবে প্রয়োগ করা যায় এ নিয়ে গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ওই বছরের নভেম্বরে সরকার আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে পরিবহন সংগঠনগুলো আবারো বেঁকে বসে, ধর্মঘটের ডাক দিয়ে অচল করে দেয় সারাদেশ। তাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, আইনটির অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে এবং কমাতে হবে শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার টাকা। পরিবহন নেতাদের চাপের মুখে নতিস্বীকার করে সরকার! উদ্যোগ নেওয়া হয় আলোচিত আইনটিকে সংশোধনের।

সংশোধীত খসড়ার প্রস্তবনায় বলা হয়, আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী-১০ ধারার উপধারা (১) বা উপধারা (২)-এর বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর বা কমপক্ষে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা বা কমপক্ষে ১ লাখ টাকা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বর্তমান আইনে কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত, প্রদান বা নবায়নে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের জোরালো দাবির মুখেই জরিমানার পরিমাণ ২ লাখ টাকা কমানো হয়েছে। তবে ধারা ১০-এর উপধারা (৩)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কোনো ব্যক্তি নকল, ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলেই তাকে এ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

২০১৮ সালের আইনের ৬৬ ধারা সংশোধন করে জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে ১০ হাজার। সংশোধনীতে বলা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত মোটরযান ও গণপরিবহন চালনার বিধিনিষেধ সংক্রান্ত ধারা ৪ এবং ৫-এর বিধান লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে সংশোধিত আইনে। ৭০ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১২-এর উপধারা (৩)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এই ধারায় আগে জরিমানার পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত আইনে জরিমানার পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও ধারা ১৩ (১) বা ১৩ (২) বা ১৩ (৩)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সর্বোচ্চ টাকা জরিমানা করা হবে। তবে সর্বনিম্ন জরিমানার উল্লেখ নেই সংশোধিত আইনে।

৭১ ধারার সংশোধনীতে শাস্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ধারা ১৪ (১) বা ১৫ (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ৮০ ধারায় পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে, ৩৪-এর উপধারা (৩) বা (৪)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কর্তন হবে। এ ধারায় আগের আইনে জরিমানার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা। সংশোধিত আইনে ৫ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।

৮১ ধারায় বলা হয়েছে, ৩৫-এর (২) উপধারার বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ ছাড়াও চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কর্তন হবে। এ ছাড়া ধারা ৩৫-এর (১) বা (৩) উপধারার বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।

৮৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি, মালিক, প্রতিষ্ঠান, বন্দোবস্তকারী সমিতি, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন ঠিকাদার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধারা ৪৩-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তা একটি অপরাধ এবং তার জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এ ছাড়া যদি কোনো চালক ৪৩-এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তা হলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজর জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকদের শাস্তির পরিমাণ কমানোর জন্যই এই ধরা সংযোজন করা হয়েছে।

৮৯ ধারায়ও কারাদণ্ড ও জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৪৬ ধার উপধারা (৪) বিধান লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আগের আইনে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। এ ছাড়া ৪৬-এর উপধারা (৪)-এর বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি হবে এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আগে সর্বোচ্চ শাস্তির পরিমাণ ছিল ৩ মাস। অর্থাৎ সংশোধিত আইনে কারাদণ্ড ২ মাস কমানো হয়েছে। আইনের ৯৮ ধারার কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এ ধারায় বলা আছে, নির্ধারিত গতিসীমার অতিরিক্ত গতিতে বা বেপরোয়াভাবে বা ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং বা ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর ফলে কোনো দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের চালক বা কন্ডাক্টর বা সহায়তকারী বা বন্দোবস্তকারী ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ ছাড়া আদালত জরিমানার সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক পরিবহন আইন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ