নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দিল্লিতে প্রথম ম্যাচে ২৬, রাজকোটের দ্বিতীয়টিতে ৩৬ আর সবশেষ নাগপুরে বিধ্বংসী ৮১- সিরিজের তিন ম্যাচে তার রানই বলে দেয় ধাপে ধাপে তার পরিপক্কতার আভাস। বয়স মাত্র ২০, এই ফরম্যাচে খেলেছেন মাত্র ১০টি ম্যাচ। ব্যাটিংয়ের ধরণ, লড়াকু মনোভাব আর ক্রিকেটীয় জ্ঞ্যানলব্ধ শট- এরই মধ্যে মোহাম্মদ নাইম শেখ পরিণত এক ক্রিকেটারের নাম।
হতে পারতেন বড় নায়ক, কেড়ে নিতে পারতেন সব আলো। অভাবনীয় কিছু পেতে নাঈম নিজের কাজটা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু এই তরুণের এনে দেওয়া ভিত হেলায় হারিয়েছেন বাকিরা। ভারতের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদেরই ডেরায় নিজেকে চেনাতে পারার তৃপ্তি আছে ঠিকই। কিন্তু তিনি আক্ষেপে পুড়ছেন আসলে দলের জন্য। আগে ব্যাট করা ভারতের দেয়া লক্ষ্যটা বড় হলেও জয়ের ভিত্তি ঠিকই গড়ে দিয়েছিলেন তরুণ এই ওপেনার। বুক চিতিয়ে লড়াই করে নাঈম খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিছু সময় সঙ্গে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুনকে। তার সঙ্গে গড়েছেন দারুণ এক জুটি। কিন্তু তার লড়াই বৃথা গেল বাকী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। নাঈম একা করেছেন ৮১ রান, দলের বাকি দশ মিলেই করেছেন আর ৬৩ রান! এরমধ্যে মোহাম্মদ মিঠুনের ২৭ বাদ দিলে নয়জনের সম্মিলিত রান মাত্র ৩৬। জেতার মতো অবস্থায় গিয়ে শেষ ৩৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
পায়ের কাজ অসাধারণ, লম্বা ইনিংস খেলার তাড়না আর দৃষ্টিনন্দন সব স্ট্রোকে মুগ্ধ করলেন নাঈম। নাঈম যখন মুগ্ধ করা শট খেলে চলেছেন ভারতীয় দর্শকদের মুখ ডুবে যাচ্ছিল হতাশার আঁধারে! তবুও তাঁরা ফিরে ফিরে তাকিয়ে দেখছেন ২০ বছরের এক তরুণ ওপেনার কী দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেন। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জেতা হয়নি। তবে এ সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নাঈম। ৩ ম্যাচে ৪৭.৬৬ গড়ে ১৪৩ রান করে সিরিজে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তিনিই।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজেই অভিষেক হয় নাঈমের। প্রথম ম্যাচে সৌম্য সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ার পথে করেছিলেন ২৬ রান। পরের ম্যাচে ৩০ বলে করেন ৩৬। তবে এসব মাঝারি ইনিংস তাকে ঠিক আলোয় আনতে পারছিল না। শেষ ম্যাচে সেসব ছাপিয়ে দেখান নিজের ডাকাবুকো ধরণ। অথচ এই দলের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে তরুণ নাঈম। মাত্র নেমেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে। তার চেয়ে অনেক অভিজ্ঞরা ব্যর্থ হওয়ায় ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জেতার সম্ভাবনার কবর হয়। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে গতকালই দেশে ফিরেছেন নাঈম। তার আগে চোখেমুখে জানিয়ে গেছেন তীব্র আক্ষেপ, ‘আক্ষেপতো অনেক বেশি, জিততে পারলে জেতা যেতো, অনেক বড় ব্যাপার হতো, অনেক ভালো লাগতো। জিততে পারিনি বলেই খারাপ লাগছে। আর একটা জুটি হলেও হয়তো আমরা জিততে পারতাম।’
১২ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদ মিঠুনকে এক পাশে নিয়ে ৬১ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন নাঈম। জুটিতে তিনিই ছিলেন আগ্রাসী। শুরুতে রান পেতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয় তাকে। প্রথম ১৫ বল থেকে নিতে পেরেছিলেন কেবল ৮ রান। পরে তা পুষিয়েছেন দারুণভাবে। বাকি ৩৩ বলে নিয়েছেন আরও ৭৩ রান। লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে টানা তিন চারে শুরু তার সাহসী ব্যাটিং। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দর নাঈমের ব্যাটে আছড়ে পড়েন সীমানার ওপারে। একটা সময় মনে হচ্ছিল নিজে সেঞ্চুরি তো পাবেনই, দলও জিতিয়ে আসবেন। কিন্তু হয়নি কিছুই।
পেসার শিবাম দুবেকে এর আগে খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু ভাল এক ইয়র্কারে ফেরত যান, তার বিদায়ে হুড়মুড় করে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশও। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হতাশায় শূন্যে পা ছুড়লেন নাঈম। উইকেটে আরেকটু না থাকার হতাশায় পুড়লেও যে ইনিংসটা খেলেছেন, বিধর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের দর্শকেরা তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেনি। দল না জিতলে ব্যক্তিগত সাফল্যের আর কি দাম। তাই ম্যাচ শেষে পাওয়া ভারতের সাবেক তারকাদের অভিনন্দনেও সান্ত¡না মেলেনি নাঈমের, ‘আমার কাছে মনে হয় পুরো ইনিংসে ওদের সেরা বল ছিল। আর সেঞ্চুরির জন্য খেলিনাই দল জেতানোর জন্য খেলছিললাম। এই জায়গায় সফল হতে পারিনি, এটা হয়তো খারাপ লাগছে।’
ভারতের বিপক্ষে এই ইনিংসের পর তারকা তকমা গায়ে লাগা নাঈম দেশে ফিরে আপাতত ইমার্জিং টিম এশিয়া কাপে মন দিবেন। জাতীয় দলে নিজেকে চিনিয়ে বার্তা দিলেও সব জায়গাতেই রাখতে চান ধারাবাহিকতার ছাপ। ম্যাচ শেষে সতীর্থদের অভিনন্দন তো পেয়েছেনই। তাকে বাহবা দিতে নিজ থেকে ছুটে এসেছিলেন ধারাভাষ্যের কাজে থাকা হরভজন সিং, ইরফান পাঠানরা। তাতে দগদগে ক্ষতে স্বস্তি মিললে খুব বেশি উপশম হয়নি, ‘আমাদের দলের অনেকে অনেক কিছু বলছে (প্রশংসা), এখানে আমার টিমমেট ছাড়াও ওদের কিছু ক্রিকেটার ছিলেন তারাও অভিনন্দন জানিয়েছেন। হারভজন সিং ছিলেন তিনি বলেছেন আমি আর দুই ওভার থাকলে হয়তো ম্যাচ জিততে পারতাম। এটা ভালোলাগার বিষয়। তবে দিনশেষে আমরা তো হেরেছি। এটাই সত্যি।’
গত সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের মাঝপথে আকস্মিক বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল নাঈমকে। একাদশে অবশ্য তাঁর জায়গা মেলেনি। সিরিজ শেষ যখন জানতে চাওয়া হলো, এতে কি কিছুটা হতাশ? বললেন, ‘না। বরং জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে জায়গা পাওয়াটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। অনেক কিছু শিখেছি, যা পরের সিরিজে কাজে দেবে।’ নাঈম আসলে অপেক্ষায় ছিলেন একটা সুযোগের। সে সুযোগ মিলে গেল এই ভারত সফরে। দিল্লিতে ভালো শুরু করেছিলেন, বেশি দূর এগোতে পারেননি (২৬)। রাজকোটে আরেকটু এগোলেন (৩৬), কিন্তু ইনিংসটার সুন্দর সমাপ্তি ছিল না। গতপরশু নাগপুরে নাঈম জানিয়ে দিলেন, তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়।
ফরিদপুরের শহরতলি থেকে উঠে আসা নাঈমের ক্যারিয়ারের বড় টার্নিং পয়েন্ট গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৫৩.৮০ গড়ে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৮০৭ রান করে হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স তাঁকে নিয়ে আসে নির্বাচকদের রাডারে। গত পাঁচ ম্যাচে ‘এ’ দল, ইমার্জিং দল- যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন ধারাবাহিক ভালো খেলেছেন। সবশেষ অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষেও দুর্দান্ত খেলেছেন। তবে ৮১ রানের ইনিংসটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার বড় সনদ হিসেবেই কাজ করবে নাঈমের।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
নাইম শেখ (বাংলাদেশ) ৩/৩ ১৪৩ ৮১ ৪৭.৬৬ ১৩৩.৬৪ ০/১
শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত) ৩/৩ ১০৮ ৬২ ৫৪.০০ ১৮৩.০৫ ০/১
রোহিত শর্মা (ভারত) ৩/৩ ৯৬ ৮৫ ৩২.০০ ১৭৭.৭৭ ০/১
শিখর ধাওয়ান (ভারত) ৩/৩ ৯১ ৪১ ৩০.৩৩ ১০৭.০৫ ০/০
লোকেশ রাহুল (ভারত) ৩/৩ ৭৫ ৫২ ৩৭.৫০ ১১৯.০৪ ০/১
বোলার ম্যাচ/ইনি. উই. সেরা গড় ইকো. ৪/৫
দীপক চাহার (ভারত) ৩/৩ ৮ ৬/৭ ৭.০০ ৫.৪১ ০/১
আমিনুল বিপ্লব (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৪ ২/২২ ২০.০০ ৮.০০ ০/০
শফিউল ইসলাম (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৪ ২/৩২ ২২.৭৫ ৯.১০ ০/০
যুজবেন্দ্র চাহাল (ভারত) ৩/৩ ৪ ২/২৮ ২৩.৭৫ ৭.৯১ ০/০
শিবাম দুবে (ভারত) ৩/৩ ৩ ৩/৩০ ১৭.০০ ৭.৮৪ ০/০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।