Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাস সিলিন্ডার ট্রাজেডির শেষ কোথায়

| প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর মিরপুর রূপনগরে মঙ্গলবার বেলুনে গ্যাস ভরাব সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। আরো অন্তত ১০ জন এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক। মূলত শিশুদের প্রিয় খেলনা এবং অনুষ্ঠানাদিতে দৃষ্টি নন্দন সাজসজ্জার জন্য গ্যাস বেলুন ব্যবহার করা হয়। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে তা বেলুন বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে আসছে। ঘরে ঘরে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সিলিন্ডারের মতো গ্যাস বেলুন সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রচুর না হলেও প্রায়শই ঘটছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা। এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা হতাহত হয়। রাজধানীসহ সারাদেশেই বেলুন বিক্রেতারা এমন বিপজ্জনক সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে বেলুন বিক্রি করছে। গত বছর অক্টোবরে পাবনার ঈশ্বরদীতে বেলুন বিক্রেতার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫ শিশু দগ্ধ হয়েছিল। তবে রূপনগরের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ট্রাজিক-প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যদিকে বাসাবাড়িতে ও গাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাঝে মাঝেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে লেখালেখিও কম হচ্ছে না। তবে কাজের কাজ তেমন কিছু হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন কানে তুলা দিয়ে বসে আছেন।

সিএনজি বা প্রাকৃতিক গ্যাসের বোতলজাত ব্যবহার সারাবিশ্বেই বাড়ছে। তবে বিশ্বের আর কোথাও এমন যথেচ্ছ, নিরাপত্তাহীন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার আছে কিনা আমাদের জানা নেই। সিলিন্ডারের যথাযথ মান, উৎপাদনের পর নিরাপদ মেয়াদ ও গ্যাসের যথাযথ পরিমাপ ও মূল্য কোনোটাই যথার্থভাবে রক্ষিত হয় না। এ কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনুমোদনহীনভাবে মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিরাপত্তাহীন সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রি করছে। এ কারণেই যত্রতত্র ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশিরভাগই রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শিকার। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে এলেও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এ চাহিদা পূরণে পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগের বদলে সিলিন্ডার ব্যবহারের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করছে সরকার। শিল্পখাতে গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ইতোমধ্যে সমুদ্রোপকূলে এলএনজি টার্মিনাল এবং ডিপোতে সরবরাহ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। অপচয় রোধ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। তবে সিলিন্ডার ব্যবহারের চেয়ে এর নিরাপত্তা ও ব্যবহারিক সহজলভ্যতা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে দেশের লাখ লাখ বাড়ি এবং রাস্তার গাড়ি টাইমবোমার মতো বিস্ফোরণের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডারের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে বাসাবাড়িতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা পূরণে সরকারের নীতির প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন ভরে বেলুন ফোলানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উন্নত দেশগুলোতে ২০০ বছর আগেই তা নিষিদ্ধ হয়েছে। সেখানে বেলুন ফোলানোর জন্য হাইড্রোজেনের পরিবর্তে নিরাপদ হিলিয়াম গ্যাসের প্রচলন রয়েছে। এমনিতেই হাইড্রোজেন গ্যাসে বেলুন ফোলানো নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারখানায় হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিলিন্ডারে ভরে তা ব্যবহার না করে কেউ কেউ সরাসরি সিলিন্ডার বোতলেই কস্টিক সোডা ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার ভরে হাইড্রোজেন তৈরি করে ব্যবহারের পন্থা গ্রহণ করার কারণেই তা বিষ্ফোরণের শিকার হয়। অন্যদিকে সিএনজি, এলএনজি গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন, রিফিলিং এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথাযথ নিয়মাবলি ও তদারকি না থাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। জীবন ধারণের প্রয়োজনে আমাদের রান্নাবান্না করতে হয়, যাতায়াতে যানবাহনে চড়তে হয়, সব ক্ষেত্রেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার এই বাস্তবতা চলতে পারে না। নিরাপদ খাদ্য ও সড়ক নিরাপত্তার মতো সিলিন্ডার নিরাপত্তার উপর বিশেষ গুরুত্ব ও নজরদারি বাড়ানোর জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরনো, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিসহ কঠোর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। বেলুন ফোলাতে হাইড্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডার নিষিদ্ধ করতে হবে। রাস্তায়, স্কুলে, উৎসবে বা খেলার মাঠে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুদের মৃত্যুর এমন মর্মান্তিক দৃশ্য চিরতরে বন্ধ হোক। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিক্রেতা এবং ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন