Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য ও শিল্পকলায় মেসোপটেমিয়া

ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

উত্তরে আর্মেনিয়ার পার্বত্য অঞ্চল, দক্ষিণ ও পশ্চিমে আরব মরুভ‚মি ও পূর্বে জাগরাস পার্বত্য অঞ্চলের ভেতরে দু’টি নদীর মধ্যে থাকা উর্বর ও অর্ধচন্দ্রাকৃতি অববাহিকার নাম ছিল মেসোপটেমিয়া। নদী দু’টি হচ্ছে টাইগ্রিস বা দজলা ও ইউফ্রেটিস বা ফোরাত। পূর্ব তুরস্কের আনাতোলিয়া পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি তাদের। ঈসা নবীর জন্মের ৬০০০ বছর আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গার মানুষেরা আসতে থাকে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মেসোপটেমিয়ায়।
সভ্যতার প্রথম স্তরে মেসোপটেমিয়রা সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠীর সুমেরীয় ভাষায় কথা বলত। এই ভাষা দিয়ে তারা দৈনন্দিন ভাবের আদান প্রদান ছাড়াও প্রশাসনিক কাজকর্ম, ধর্ম ও বিজ্ঞানচর্চা করত। ভাব বা বার্তা বোঝানোর জন্য আধুনিক লেখন পদ্ধতির উদ্ভাবক তারাই। তাই মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষাকে পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে পুরনো লিখিত ভাষা হিসেবে ধরা হয়। প্রথম পাওয়া লিপিটির বয়স ৫,১০০ থেকে ৪,৯০০ বছরের মতো।
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন এই সভ্যতাটিকে আজও পৃথিবীতে পথীকৃত হয়ে আছে। এর সমৃদ্ধি, নগর জীবন ও অত্যন্ত উন্নতমানের গণিতবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাহিত্যের উন্নতি ও উৎকর্ষতার জন্য। সাহিত্যের জন্য মেসোপটেমিয়রা যে ভাষা ব্যবহার করত তাকে বিজ্ঞানীরা হেমেটিক ভাষা বলে চিহ্নিত করেছেন। হোমার তার ইলিয়াড এবং ওডিসি লেখারও প্রায় এক হাজার বছর আগে সুমেরীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিল। দপ্তরিক এবং রাজকীয় দলিলপত্র ছাড়াও মেসোপটেমিয় সভ্যতায় প্রচুর ধর্মীয় এবং সমাজভিত্তিক সাহিত্য লেখা হয়েছিল। বিশ্ববিখ্যাত মহাকাব্যিক কাহিনী গিলগামেশ এই ভাষাতেই রচিত। যা লেখা হয়েছিল তৎকালীন বিখ্যাত মেসোপটেমিয় নগর উরুকের প্রথম দিকের এক শাসককে নিয়ে। তবে মেসোপটেমিয়ার নগরজীবন, বাণিজ্য ও সাহিত্যর অভ্যন্তরীণ সম্পর্কও উঠে এসেছিল এই কাহিনীটিতে। তবে ‘গিলগামেশ’ পড়লে বোঝা যাবে এখানকার লোকজন অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ ছিল। যেটা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অন্যতম মূলধন বলে প্রমাণিত। আবার এই সভ্যতার কিছু লেখায় পারলৌকিক চিন্তাভাবনা দেখা গেছে। তবে সেগুলি ছিল ধর্মীয় সাহিত্য।
ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামের মধ্যপ্রাচ্যের পুরাকীর্তি বিভাগের কিউরেটর অ্যারিয়ান থমাস বলেছিলেন, ‘মেসোপটেমিয়ার দীর্ঘ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে একটি স্বতন্ত্র ও অত্যাধুনিক সংস্কৃতি তো ছিলই। এর পাশাপাশি কাল্পনিক ও পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণাও।’
আক্কাদীয় ভাষায় মার্গনের পুত্র নরমইসনের বীরত্ব কাহিনী লেখা পাথরের একটি খন্ড মেসোপটেমিয়ান সাহিত্যের বিশিষ্ট উদাহরন (ভিক্টরিস টেল অফ নরম সিন ফ্রম সুসু, ২২০০ খ্রীষ্টপূর্ব, পিঙ্ক, স্যান্ডস্টোন)। এই খন্ডটি প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু। এর গায়ে যুদ্ধ দৃশ্য উৎকীর্ণ। এতে রাজা নারামসিন তীর ধনুক হাতে পাহাড়ে উঠছেন সৈন্যদল নিয়ে। রাজাকে এখানে বড় করে দেখানো হয়েছে যা মিশরীয় শিল্পকলার অনুরূপ।
একসময় বহিরাগত ও আদিম আরব যাযাবর সংস্কৃতির মিলনে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও উন্নত এই সভ্যতা। যে সভ্যতাকে বলা হয় আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতির জন্মস্থান। মূলত চারটি সভ্যতার ধারা নিয়ে এই আধুনিক সভ্যতাটি গড়ে উঠেছিল। সেগুলি হল সবচেয়ে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা, আক্কাদীয় সভ্যতা, অ্যাসিরীয় সভ্যতা ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতা।
সুমেরীয় শিল্পকলা : মেসোপটেমিয়ায় প্রথমেই যারা সভ্যতার গোড়াপত্তন করে, তারা সুমের জাতি। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এই দুটি নদী বেষ্টিত সুমের ছিলো কাদামাটির অঞ্চল। সুরক্ষিত শহর নির্মানে তারা ছিলো দক্ষ। ভাস্কর্য নির্মানে সুমেরীয়রা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সুমেরীয়ান ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য বড় বড় চোখ ও সিলিন্ডার আকৃতির দেহ পরিলক্ষিত হয়। সুমেরীয়ান ভাস্কর্যের মধ্যে অন্যতম টেল-আসমারে আবুর মন্দির হতে উক্ত পুজারীদের কতগুলি মুর্তি। মুর্তিগুলির সবকটি উপাসনার ভঙ্গিতে দন্ডায়মান। এগুলি ঘাঘরা সদৃশ পোষাক পরিহিত। পুরুষ মুর্তির লম্বা ও কুঞ্চিত চুল ও দাড়ি সম্পূর্ণ কামানো। (চলবে)

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাহিত্য


আরও
আরও পড়ুন