Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাকবি কায়কোবাদ তাঁর সাহিত্য সাধনা

হাসান মজুমদার বাবলু | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী
কি মধুর আযানের ধ্বনি! আযান কবিতার মাধ্যমে যিনি আমাদের কাছে কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত, তিনি আর কেউ নন।তিনি হলেন আধুনিক বাংলা মহাকাব্য ধারার শেষ কবি কায়কোবাদ। তিনি ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে বাংলাদেশের) ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশীর পুত্র। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। কায়কোবাদ ঢাকার পগোজ স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ঢাকা মাদরাসায় এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পোস্ট মাস্টারের চাকরি নিয়ে নিজ গ্রাম আগলায় চলে যান।
তাঁর সাহিত্যকর্ম : অতি অল্প বয়স থেকে কায়কোবাদের সাহিত্য-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম কাব্য বিরহ বিলাপ (১৮৭০) প্রকাশিত হয়। তার লেখা অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৫), মহাকাব্য মহাশ্মশান (১৯০৪), শিব-মন্দির (১৯২১), অমিয়ধারা (১৯২৩), শ্মশান-ভস্ম (১৯২৪) ও মহরম শরীফ (১৯৩৩)। কবির মৃত্যুর বহু দিন পরে প্রেমের রাণী (১৯৭০), প্রেম-পারিজাত (১৯৭০), মন্দাকিনী-ধারা (১৯৭১) এবং গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ (১৯৭৯) প্রকাশিত হয়। অনেক বিলম্বে বাংলা একাডেমী কায়কোবাদ রচনাবলী (চার খণ্ড, ১৯৯৪-৯৭) প্রকাশ করেছে।
সাহিত্যধারা : মহাকবি কায়কোবাদ বাংলার অপর দুই মহাকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের ধারায় মহাকাব্য রচনা করেছেন। নবীনচন্দ্রই ছিলেন তার প্রধান আদর্শ। কায়কোবাদের মহাশ্মশান হচ্ছে মহাকাব্য। ১৭৬১ সালের তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত এ কাব্যে জয়-পরাজয় অপেক্ষা ধ্বংসের ভয়াবহতা প্রকট হওয়ায় এর নাম মহাশ্মশান। এটি তার শ্রেষ্ঠ রচনা এবং এর দ্বারাই তিনি ‘মহাকবি’ রূপে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার গীতিকবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ও আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
সাহিত্যসাধনার উদ্দেশ্য : আল্লামা ইকবালের ন্যায় কায়কোবাদের কাব্যসাধনার মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চাৎপদ বাঙালি মুসলমানদেরকে তার অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি ছিলেন ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী, যার প্রকাশ ঘটেছে তার বিভিন্ন রচনায়। তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। ১৯৩২ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঘুমন্ত মুসলমাপনদের জাগাতে চেয়েছিলেন। আযান কবিতার যে ঝঙ্কার, তাতেই বুঝতে পারা যায় যে, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম মণীষা।বাংলা কাব্য সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য নিখিল ভারত সাহিত্যসঙ্ঘ তাকে কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন (১৯২৫) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ৯৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয় এবং আজিমপুর কবরস্থানে তিনি চিরশয্যায় শায়িত হন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাকবি কায়কোবাদ তাঁর সাহিত্য সাধনা
আরও পড়ুন