Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুড়ে গেলে কী করবেন

মো: জহিরুল আলম শাহীন | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের কাজ-কর্ম করতে গিয়ে অসাবধনতার কারণে ছোট-বড় নানান দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে আগুনে পোড়া অন্যতম। আমরা যদি দুর্ঘটনা সর্ম্পকে সচেতন হই, সর্তক হই, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো কিছু জানি তাহলে নানান দুর্ঘটনার পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারব। অনেক সময় মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। 

কারণসমূহ: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংসারে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ শরীররে নানা স্থান পুড়ে যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো: রান্না করা গরম তেল, গরম পানি, গ্রামে বাড়িতে চুলার গরম ছাই, গরম ধাতব্য লোহার ছ্যাকা লাগা, কয়েলের আগুন বিছিনা থেকে শরীরে লাগা। তাছাড়া দাহ্য পদার্থ দ্বারা আগুন যেমন: কেরোসিন, পেট্রল, এসিড, গ্যাস, ইত্যাদি দিয়ে শরীর পুড়ে যেতে পারে। যেকোন পোড়াই হোক না কেন প্রথমে ভাল করে খেয়াল করতে হবে। পোড়া কোন ধরনের এবং পরিমাণ কত ও শরীরের কোন স্থান। চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিকভাবে পোড়া তিন প্রকার।
প্রাথমিক মাত্রার পোড়া: আমাদের শরীরের চামড়ায় দুইটি স্তর থাকে। প্রথমটি স্তরটি এপিডার্মিস অপরটি হল ডার্মিস। শুধু চামড়ার উপরি ভাগ পুড়ে গেলে থাকে প্রাথমিক মাত্রা পোড়া বলে। এতে চামড়া লাল হয়ে আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে এবং যন্ত্রনা করে। এ পোড়া প্রাথমিক চিকিৎসায় কমে যায় কিন্তু সাবধান থাকবেন, এই সামান্ন মাত্রার পোড়া যদি মুখে যৌনাঙ্গে, নিতম্বে এবং অস্থি সন্ধি স্থলে হয় তাহলে দ্রæত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দ্বিতীয় মাত্রার পোড়া: শরীরের চামড়ার দুইটি স্তরই পুড়ে যায়। তাহলে এ অবস্থাকে বলা হয় দ্বিতীয় মাত্রা পোড়া । এ অবস্থায় চামড়ার লাল হয়ে ফোসকা পড়ে এবং ফুলে ওঠে। অতিরিক্ত জ্বালা-যন্ত্রনা করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এ পোড়া মাত্রা যদি তিন ইঞ্চির বেশি বিস্তৃত না হয় তাহলে সামান্য পোড়া বলে ধরা হয়। পোড়া যদি অধিক ছড়ানো হয় আর স্থানটি যদি মুখে, যৌনাঙ্গ, হাত, পায়ে, গিরায়, শ্বাস নালীতে, নিতম্বে হয় তাহল অতি তাড়াতাড়ি রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
তৃতীয় মাত্রার পোড়া: এ মাত্রার পোড়া অত্যন্ত বিপদ জনক ও গুরুতর। এ ক্ষেত্রে শরীরের চামড়ার উভয় স্তর, চর্বি, মাংস পুড়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেহের হাড়ও পুড়ে যায়। এ অবস্থায় পোড়া অংশ কালো হয়ে যায়। আবার সাদাবর্ণ হয়ে শুস্ক হয়ে যায়। এ ধরনের পোড়ায় ব্যথা থাকে না। কারণ দেহের ¯œায়ুগুলো পুড়ে যায়। তাই ব্যথা করে না, এটি ভালো লক্ষণ নয়। রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কার্বন মনোঅক্সাইড নামক বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ ফুসফুসে ঢুকে যায়। এ ধরনের পোড়াতে অতি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে এবং বার্নইউনিটে ভর্তি করতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয়: প্রথম ও দ্বিতীয় মাত্রার পোড়া হলে আক্রান্ত স্থানটি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানির ধারার নিচে ধরে রাখুন। যেমন: টেপের পানিতে ১০-১৫ ধরে রাখতে হবে। শরীর পুড়ে গেলে গোসলের ঝরনার পানির নিচে বা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। * এ ব্যবস্থা যদি করা না যায়, তাহলে আক্রান্ত স্থানটি বালতির পািিনতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। * শরীরের কাপড়ে আগুন লাগলে মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। দৌঁড়াদোড়ি করা যাবে না। এতে আগুন আরো বেড়ে যেতে পারে। পোড়া শরীরে কাপড় থাকলে বা কোনো প্রকার অলংকার থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ বা গরম তেল দিয়ে পুড়লে প্রথমে দেখতে হবে তার শরীরে যেন তা লেগে না থাকে। অগ্নি দগ্ধ হলে শরীর থেকে পোষাক খুলে প্রথমে দশ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে আধা ঘন্টা অনবরত ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে। এতে যন্ত্রনা কমে যাবে। * ত্বকের চামড়া ফোসকা পড়া ভালো লক্ষণ। আসলে ফোসকা পড়লে মনে করবেন দেহের কোষগুলো জীবিত আছে। তবে এ ফোসকাগুলো সাথে সাথে গলানো যাবে না। * পোড়া গভীর হলে সাধারণত ফোসকা পড়ে না। এতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। * শরীরে আগুন লাগলে কাঁথা বা কম্বল দিয়ে গা জড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করবেন না।
যা করা যাবে না: * চামড়া পোড়া জায়গায় বরফের পানি, ফ্রিজের পানি বা ফ্রিজের বরফ, কিংবা বরফ দেওয়া যাবে না। আবার গরম পানি ঢালা যাবে না। * আক্রান্ত স্থানে ডিম, টুথপেষ্ট, মাখন, মলম লাগানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার মলম ব্যবহার করা যাবে না। * তুলা দিয়ে ড্রেসিং করা বা পোড়া অংশে ঢেকে রাখা যাবে না। শুকনো গজ বা ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হবে। * পোড়া স্থানে ভেসেলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন না। * পোড়া স্থানে কোনো ভাবে ডলাডলি করা যাবে না এবং ফুসকা ফাটানো বা তুলে ফেলা যাবে না।
এসিড দগ্ধ হলে: এসিড নিক্ষেপ একটি দন্ডনীয় অপরাধ। এর ফল মৃত্যুদন্ড। তারপরেও দেশে এসিড সন্ত্রাস থেমে নেই। এসিড পানির মতো তরল পদার্থ কিন্তু শরীরে স্পর্শ করা মাত্রই চামড়া পুড়ে যায় জ্বলতে থাকে। এসিড এত দাহ্য যে মাংশ পুড়ে গিয়ে হাড়েরও মারাত্মক ক্ষতি করতে পাড়ে তাই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে আক্রান্ত স্থানে প্রচুর পরিমান পানি ঢালুন। এতে যত বেশি পানি ঢালা যাবে এসিডের শক্তি তত কমে যাবে। শরীরে ক্ষতির পরিমান তত কম হবে। তবে সাথে সাথে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
রক্ষা করার উপায়: * যে কোনো চুলা সর্বক্ষণ জ্বালিয়ে না রেখে প্রয়োজন শেষে নিভিয়ে রাখুন। * আগুনের উপর ভেজা কাপড় বা ভেজা কম্বল দিয়ে চাপা দিন। * বাড়িতে আগুন লাগার উপকরণ গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার, ম্যাচ বক্স, ইলেকট্রিক সুইচ সাবধানে ব্যবহার করুন। * চারদিকে আগুন থাকলে মাথা নিচু করে নাক চেপে ধরে দ্রæত স্থান ত্যাগ করুন। * রান্নার চুলা মেঝেতে না বসিয়ে কোনো উচুঁ স্থানে বসান এবং দাঁড়িয়ে রান্না করুন। * শিশুরাও অসাবধান বশত গরম পানি, ডাল, চা বা চুলায় হাত ঢুকিয়ে দিয়ে এতে তারা পুড়ে যায়।

শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুড়ে


আরও
আরও পড়ুন