Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে মুসলমান নির্যাতন এবং আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের মতো এত আরাম-আয়েশে পৃথিবীর আর কোনো দেশের সংখ্যালঘুরা বসবাস করে- এমন নজির নেই বললেই চলে। সমান সুযোগ-সুবিধা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধাই তারা ভোগ করছে। এখানে কোনো কোটা প্রথা নেই, বৈষম্য নেই। যদি থাকত তাহলে প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি সকল স্তরের চাকরিতে ৩০ ভাগ হিন্দু সুযোগ পেত না। এই যে ৩০ ভাগ হিন্দু সরকারি চাকরি করছে তাদেরকে কোনো জাত-পাত বা ধর্মের ভিত্তিতে চাকরি পেতে হয়নি। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান প্রার্থীদের সাথে সমান সুযোগ পেয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে। যদি কোটা থাকত, তাহলে তারা অবাধে এ সুযোগ পেত না। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শুধু সরকারি চাকরি নয়, বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একইভাবে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা সমান সুযোগ পাচ্ছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানরা যদি ভারতের উগ্র হিন্দুদের মতো হতো, তাহলে এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ত। সরকারিভাবেও প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা পেত না। কাজেই এমন উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বিশ্বে কি আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে? যে ভারত নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ভাবে, সেখানে কি সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা বাংলাদেশের হিন্দুদের মতো এত সুযোগ-সুবিধা পায়? কিংবা প্রথম শ্রেণীর নাগরিকত্বের মর্যাদা পায়? বাস্তবতা তো এই, ভারতে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণী বা তার নিচে বিবেচনা করা হয়। তাদের নাটক-সিনেমাগুলোয় মুসলমান চরিত্রগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, সেখানে মুসলমানদের কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। হয় নিচু স্তরের কর্মচারি, না হয় সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর রাজনৈতিক বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে কদাচ হামলা হলে তাদের পাশে যেভাবে সুশীল ও সচেতন শ্রেণী দাঁড়ায়, তা কি ভারতে দেখা যায়? সেখানে যে এখন ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের ওপর হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, জোর করে হিন্দু বানানোর অপচেষ্টা চলছে, তার বিরুদ্ধে কি সেখানের সুশীল ও সচেতন নাগরিকরা দাঁড়াচ্ছে বা প্রতিবাদ করছে? মুসলমানদের গরু জবাই এবং গোশত রাখা নিষিদ্ধের মতো বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর কি এমন বিধিনিষেধ আছে? কোথাও কি হিন্দুদের জোর করে মুসলমান করা বা গরুর গোশত খাওয়ানোর ঘটনা ঘটেছে বা ঘটছে?

দুই.

বাংলাদেশ তো এমন দেশ যেখানে হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছে। পারস্পরিক দুঃখ-কষ্টে এবং আনন্দ- বেদনায় শামিল হয়ে আসছে। যেখানে কে কোন ধর্মের তা বিবেচনা করেনি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে ঘটেনি বা ঘটছে না, তা নয়। মানুষের বৈশিষ্ট্যই তো এই তারা একসাথে চলতে চলতে অনেক সময় ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত হয়। তার মানে এই নয়, তারা চির বৈরী হয়ে যায়। ঝগড়া শেষে আবার একত্রে বসবাস শুরু করে। সব ধর্মের মানুষ নিয়ে বাংলাদেশের চিরায়ত সামাজিক বৈশিষ্ট্য এটাই। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, গ্রামে আমাদের পাশের বাড়িটি হিন্দুদের। তারা নিচু বর্ণের। গ্রামের বাজারে ঝাড়–দারের কাজ করে। দুই বাড়ির মাঝে একটি পুকুর। পুকুরে এই হিন্দুদেরও অংশ আছে। পুকুরের পানি উভয় বাড়ির মানুষই শতবর্ষ ধরে ব্যবহার করে আসছে এবং আমাদের বাড়ির মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক ও সখ্য রয়েছে। হিন্দুরা সাহায্য-সহযোগিতার জন্য এলে তাদেরকে সহযোগিতা করা হতো। আমাদের বাড়ির মানুষ গ্রামে বেশ প্রতাপশালী। বংশ পরম্পরায় গ্রামে চেয়ারম্যান হয়েছে, বিচার-আচার করেছে। এখনও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। কখনো দেখিনি, শুনিনি এই হিন্দুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে। বরং এই হিন্দু বাড়ির লোকজন ব্যবসা-বাণিজ্য করে এখন বিত্তবান হয়ে উঠেছে। গ্রামে শুধু এই হিন্দু বাড়িই নয়, উচ্চ বর্ণের হিন্দুদেরও বসবাস রয়েছে। যদিও কালক্রমে তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় ভারত পাড়ি দিয়েছে। তবে তাদের বাড়ি উত্তরাধিকার সূত্রে বহাল-তবিয়তে রয়ে গেছে। কেউ দখল করতে যায়নি। এখনও গ্রামের হিন্দুরা অত্যন্ত নির্বিঘেœ বসবাস করছে। এই উদাহরণটি দিলাম এ কারণে যে, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার জন্য। মাঝে মাঝে দেশের কোনো কোনো এলাকায় হিন্দুদের ওপর হামলার যে অভিযোগ ওঠে, তা একান্তই স্থানীয় কিছু দুষ্টু চক্রের কাজ। তবে তা সামাজিক এবং প্রশাসনিক সহায়তায় সাথে সাথেই দমন করা হয়। এমন হয় না যে, বছরের পর বছর ধরে তা চলে। সরকারের তরফ থেকেও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান রয়েছে। ভারতে কি এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন চরিত্র রয়েছে? এই যে প্রতিদিন মুসলমানদের ওপর হত্যা, হামলা, নীপিড়ন, নির্যাতন চলছেÑএক্ষেত্রে ভারত সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে? নিচ্ছে না। বরং প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশ থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন করার লক্ষ্য নিয়ে হিন্দুস্তান বানানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। অথচ ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার কংগ্রেস সরকারের আমলে মুসলমানদের উপর নির্যাতন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। দেশটির মুসলমানরা এতটাই অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছিল যে, তারা মনে করেছিল কংগ্রেস সরকার বিদায় না হলে তাদের উপর নীপিড়ন ও নির্যাতন কোনোভাবেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে না। ফলে নির্বাচনের সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদীর মিষ্টি মিষ্টি কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, মোদী ক্ষমতায় এলে তার চরিত্রে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দুত্ববাদের যে অপবাদ লেগে আছে, তা দূর করতে চেষ্টা করবে। তার বদনাম ঘুচাতে হলেও উগ্রবাদ পরিহার করবে। তাদের এই ধারণা থেকেই মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপি বিপুল বিজয় অর্জন করে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল সেখানের মুসলমানদের ধারণা একেবারেই ভুল ছিল। মোদী তার স্বরূপে ফিরে আসেন। প্রকাশ পেতে শুরু করে তার উগ্রতা এবং মুসলমান বিদ্বেষ। একটি পরিসংখ্যান দিলেই বিষয়টির যথার্থতা প্রমাণিত হবে। ইন্ডিয়াস্পেড নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সে সময় একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ২০১০ সাল থেকে বিগত ৮ বছরে মুসলমানরা কী হারে উগ্র হিন্দুদের হামলা ও হত্যার শিকার হয়, তার তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের পর গরু সংক্রান্ত সহিংসতায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের ৮৬ শতাংশই মুসলমান। আর গরু নিয়ে মুসলমানদের উপর যত হামলা হয় তার ৯৭ শতাংশই নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে। এসব হামলার ৫২ শতাংশই হয় গুজব ছড়িয়ে। এটা প্রমাণিত বিষয় যে, বিজেপি ও তার সমর্থক উগ্রবাদী আরএসএস সংগঠনের টার্গেটই হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে এবং ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের উপর হামলা ও হত্যা করা। ২০০২ সালে মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল তা ঘটানো হয়েছিল পুরোপুরি গুজব রটিয়ে। ঐ বছরের ২৭ ফেব্রæয়ারি অযোধ্যা থেকে ট্রেনে করে একদল হিন্দু সন্যাসি গোধরায় আসছিল। সেখানে ট্রেনটিতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিলে ৫৮ জন সন্যাসির মৃত্যু হয়। রটিয়ে দেয়া হয় ট্রেনে আগুন দিয়েছে মুসলমানরা। মুহূর্তে গুজরাট জুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যায়। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের হত্যার লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়ে। যেখানেই মুসলমান পেয়েছে কুপিয়ে, পুড়িয়ে, ইট দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করে। এমনকি গর্ভবতী মহিলার পেট কেটে বাচ্চা বের করে হত্যা করে। মুসলমানদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। প্রায় দুই হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠে, ট্রেনে আগুন দেয়া এবং ঘটনার নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেন নরেন্দ্র মোদী। তদন্তে বিষয়টি ফাঁস হয়। বলা হয়, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল শুধু মুসলমানদের আক্রমণ করার জন্য। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিজেপি ও তার উগ্রবাদী সংগঠন কতটা মুসলমান বিদ্বেষী। যে কোনো উসিলায় তারা মুসলমান হত্যা করার উদগ্র বাসনা পোষণ করে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী গুজরাট দাঙ্গার অভিযোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন। তবে তার এই শাসনামলে যে মুসলমানরা নিরাপদ নয় তা এখন দেখা যাচ্ছে। মুসলমানদের উপর ক্রামগত নিপীড়ন-নির্যাতন এবং হিন্দু বানানোর চেষ্টা চলছে।

তিন.

মুসলমানদের সাথে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের আচরণে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তারা মানুষের চেয়ে পশুকে বেশি মর্যাদা দিচ্ছে। মানুষের জীবনের চেয়ে গরু বা পশুর জীবন অনেক মূল্যবান। তাই পশুর জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মানুষ হত্যা করাই যেন তারা শ্রেয় মনে করছে। এই আচরণ কি মানবিক? হিন্দু ধর্ম কি বলেছে, গরু বাঁচাতে গিয়ে অন্য ধর্মের মানুষ হত্যা করতে হবে? ভারতের নীতি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা হয়ে থাকে, তাহলে এক ধর্মের মানুষ যা বিশ্বাস করে, তাতে বাধা দেয়া হচ্ছে কেন? এটা কি তার নীতির খেলাপ নয়? হিন্দুরা যদি গরুকে মায়ের সমান মনে করে থাকে তাহলে তো তাদের গরুর চামড়ার তৈরি কোনো জিনিসই ব্যবহার করা উচিত নয়। এমনকি গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি জুতাও পরা ঠিক নয়। এতে কি গরুকে অসম্মান করা হচ্ছে না? বরং গরু মারা গেলে তার চামড়া না ছিলে মাটি চাপা দিয়ে দেয়াই উচিত। তা না করে গরুর চামড়া ছিলে রপ্তানি করছে কেন? আর সীমান্তপথে সারাবছর এবং কোরবানির সময় চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশেই বা কেন গরু পাচার করছে? ভারতে মুসলমানরা গরু কোরবানি দিলেই দোষ, আর বিশ্বের অন্যদেশে গরু জবাই করলে কোনো দোষ হয় নাÑএমন উদ্ভট চিন্তা নিয়ে ভারতের একশ্রেণীর উগ্রবাদী হিন্দুরা অন্ধের মতো ছুটে চলেছে। তাদের উদ্দেশ্য যে, গরু জবাইয়ের উসিলা দিয়ে মুসলমান নির্মূল করা, তা তাদের জয় শ্রীরাম, জয় হনুমান শ্লোগান থেকেই বোঝা যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে, ভারত কেবল হিন্দুদেরই রাষ্ট্র হবে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এই বাসনাকেই প্রকারন্তরে মোদী সরকার প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। মুখে ‘এটা উচিত হচ্ছে না’, ‘অহিংসার পথে চলতে হবে’Ñএসব কথার কথা বলে দায় সারতে চাচ্ছে। যারা মুসলমানদের ধর্মীয় আচার-আচরণে বাধা দিচ্ছে এবং মৌলিক অধিকার হরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভারত সরকার কেবল বলছে, কারো কোনো ভুল হয়ে থাকলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারোই আইন তুলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ যেসব উগ্রবাদীরা মুসলমানদের নীপিড়ন-নির্যাতন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো কথা বলছে না। এতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে আরও প্রশ্রয় পাচ্ছে, তা ভারত সরকার বুঝেও না বোঝার ভান করছে। মূল সমস্যা সৃষ্টিকারীদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার-আচরণের অধিকার রক্ষায় কোনো ভূমিকা পালন করছেন না। বরং পশুরু ওপর নিষ্ঠুরতা ঠেকানোর নাম করে পুরোপুরি ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়াকে উস্কে দিচ্ছে। অথচ বিজেপির ক্ষমতায় আরোহনের ক্ষেত্রে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বিপুল সমর্থন রয়েছে। তবে ভারতের বেশিরভাগ সাধারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বী উগ্রতা পছন্দ না করলেও তারা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিতের পক্ষে থাকবে বলে আশা করা যায়। সমস্যা হচ্ছে, যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের নিপীড়ন-নির্যাতন করছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তারা প্রশ্রয় পাচ্ছে। এর অর্থ এই, সরকার চাচ্ছে ভারতকে এই উগ্রবাদীরা হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করুক। অবশ্য এটা তো এখন স্পষ্ট ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, ভারত থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হবে। এ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মাণ হয়, ভারতের মুসলমানদের অনেকটা স্টেটলেস করার প্রক্রিয়ায় বিজেপি সরকারের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা তো বটেই সরকারের পক্ষ থেকেও কখনোই হিন্দুদের এদেশ থেকে বিতাড়ন করে দেয়া কিংবা ভারত থেকে যেসব মুসলমান বাংলাদেশে এসেছে তাদের বের করে দেয়ার চিন্তাও করে না। বরং বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে অনেক হিন্দু স্বেচ্ছায় ভারত গিয়েছে এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বিশ্বে বিরল। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ হয়েও অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে শান্তিতে বসবাস করে এই উপমহাদেশ তো বটেই অন্য কোনো দেশে তা দেখা যায় না। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে একটি শ্রেণী যে অসাম্প্রদায়িকতার জিকির তুলেছে, তারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্যই ধরতে পারেনি। তাদের এই জিকির তোলার শত শত বছর আগে থেকেই যে এদেশের মুসলমানরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সহবস্থান নিয়ে বসবাস করছে তা তারা বুঝতে পারছে না। যদি তা না হতো তাহলে বাংলাদেশে ভারতের মতো সংখ্যালঘুদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ত। অসাম্প্রদায়িকতার শ্লোগান দেয়া এসব অজ্ঞ কিংবা ধান্ধাবাজরা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সেন্টিমেন্টের বাইরে গিয়ে কথা বলছে।

চার.

ভারতের পরিস্থিতি এখন এমন যে মোদীর শাইনিং ইন্ডিয়ায় যেন এক অন্ধকার যুগের বর্বরতা চলছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ধর্ম নিয়ে দেশটিতে উগ্রবাদী ও বৈষম্যমূলক যে রাজনীতি চলছে তা আধুনিক বিশ্বে বিরল। দেশটি মাঝে মাঝে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় এমনকি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করার মতো বক্তব্য দেয়। এই কয়েক বছর আগে গরু জবাই নিয়ে ভারতের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। তারা নিজ দেশে যেমন গরু জবাই বন্ধ করেছে, তেমনি বাংলাদেশেও গরু জবাই বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ২০১৫ সালে মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশের সীমান্তে এসে বিএসএফকে বাংলাদেশে গরু খাওয়া বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছিলেন। এটা যে একটি স্বাধীন দেশের প্রতি চরম দৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ তা দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপলব্ধি করেনি। এ নিয়ে আমাদের সরকার তো বটেই দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা তখন কোনো প্রতিবাদ করেনি। বিরোধী দল এমনকি ইসলামপন্থী দলগুলোও ভারতের মুসলিম নিধনের ব্যাপারে চুপ ছিল। এখন ভারতে যে মুসলমান নির্যাতন এবং জোর করে ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টা চলছে, এ নিয়ে তথাকথিত সুশীলরা কোনো কথা বলছে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও কোনো প্রতিবাদ নেই। মুসলমানদের যেভাবে আক্রমণ ও হত্যা করা হচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ রয়েছে। দুয়েকটি ইসলামিক দল ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কিংবা বক্তব্য বিবৃতি দিলেও তা যথেষ্ট নয়। আজ বাংলাদেশে যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো কি করত, তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই, তবে তাদের নিশ্চুপ থাকা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। শুধু মুসলমান হিসেবে নয়, মানবতার খাতিরেও তাদের প্রতিবাদ করা উচিত।

[email protected]

 



 

Show all comments
  • মাজহারুল হক ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    একদম সত্য কথা বলেছেন, ওদেরক্ বেশি পশ্রয় দেয়া হয়ে গেছে,, তাদের আরও দরকার, এখন তারা চায় মুসলিমরা তাদের কথা মত চলতে ।আসলে তাদের সাথে এখন কঠোর হওয়া উচিত,,কারণ বানরকে পশ্রয় দিলে ঘাড়ে চড়ে বসে ।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল হক ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    একদম সত্য কথা বলেছেন, ওদেরক্ বেশি পশ্রয় দেয়া হয়ে গেছে,, তাদের আরও দরকার, এখন তারা চায় মুসলিমরা তাদের কথা মত চলতে ।আসলে তাদের সাথে এখন কঠোর হওয়া উচিত,,কারণ বানরকে পশ্রয় দিলে ঘাড়ে চড়ে বসে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন