শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
দুপুরের কড়া রোদ।পিচঢালা রাস্তা।মিসির আলী হঠাৎ দেখেন হিমু হেঁটে যাচ্ছে!এ সময় হিমুর হেঁটে যাবার কথা নয়।মিসির আলী পেছন থেকে হাক দেন, এই যে হিমু সাহেব।হিমু দাঁড়ায়।পেছন ফেরে।মিসির আলী কাছাকাছি গিয়ে প্রশ্ন করেন, ভর দুপুরে কোথায় যাচ্ছেন?
হিমু কিছুটা চমকে দিয়ে বলে, আপনাকে খুঁজছিলাম।
-ভর দুপুরে কড়া রোদে আমাকে খুঁজবেন কেন?আর আমি তো এ জগতের মানুষ না।
হিমু মুখে হাসি টেনে বলে,সেজন্যই খুজছি।আমিও এ জগতের মানুষ না।এক সময় ছিলাম।
আকাশে জমাট বাধা মেঘ।কালো কালো।মিসির আলী বলেন, চলেন চা খাই।মিসির আলী ও হিমু দু’জন একসাথে চায়ের দোকানে ঢুকতেই লোকজন বড় বড় চোখে তাকায়।হিমুর হলুদ পঞ্জাবিতে সিগারেটের আগুনে পোড়া ছোট ছোট ছিদ্র।একটা যুবক পকেট থেকে মোবাইল বের করে।একটু আড়ালে গিয়েই ফোনটা কানে লাগায়।ফিসফিস করে বলে, রুপা আপু।
-হু।
-হিমুকে পাওয়া গেছে।
রূপা উদ্বিঘ্ন কন্ঠে বলে, কোথায়?
-গাবতলী মোড়ে।চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে।
-আমি আসছি। এখনি আসছি।
য্বুকটা কথা শেষ করেই দেখে হিমু নেই।মিসির আলীও নেই।কী অবাক ব্যাপার!মুর্হুতেই হারিয়ে গেল!রুপা আসছে, তাকে কি জাবাব দেবে?কিভাবে বোঝাবে এখানে ছিল, এখন নেই।ভাবনার আগেই রুপা এসে হাজির।‘ কই হিমু কই?কতোদিন ধরে খুঁজছি।’
যুবক আহত গলায় মিনতির সুরে বলে, হিমুকে পাওয়া যায়নি।
২. আমাদের হুমায়ুন আহমেদ
হিমু, মিসির আলী, শুভ্র নামের জনপ্রিয় চরিত্র গুলো নিপুন হাতে গড়েছেন হুমায়ুন আহমেদ।১৯৪৮ সালের ১৩ ই নভেম্বর জন্ম নেয়া হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা সকল ক্ষেত্রে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানে শুধু সফল হননি পৌছেছেন সফলতার চুড়ান্ত পর্যায়ে।১৯৭২ সালে প্রকাশিত নন্দিত নরকে উপন্যাস দিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালের ১৯ শে জুলাই মৃত্যূর আগ পর্যন্ত তিন শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন।বাংলা কথা সাহিত্যে সহজ সরল ভাষা প্রয়োগ, হাস্যরস ও সংলাপ প্রধান নতুন ধারার জনক হুমায়ুন আহমেদ সত্তরের দশক থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের যুবক শ্রেনীর মন কাড়েন।হিমু ও মিসির আলী দিয়ে তিনি যেন মানুষ কে পড়তে শেখান, অনেকটা বাধ্য করেন।এছাড়াও- মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার, মাতাল হাওয়া উপন্যাস গুলো বাংলা সাহিত্যের অমুল্য সম্পদ।বাংলা চলচ্চিত্রির যখন বেহাল দশা।সুস্থ বিনোদনের জন্য সবাই বলাবলি করছে, পরিবারের সবাই মিলে বসে দেখার মতো চলচ্চিত্র নেই ঠিক সে সময়ে এগিয়ে এলেন।১৯৯৪ সালে তিনি নির্মান করলেন আগুনের পরশমনি।বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিয্দ্ধু ভিত্তিক চলচ্চিত্রটি শুধু দর্শকের মন কাড়ার পাশাপাশি হাতেখড়িতেই চরম সফল।আগুনের পরশমনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ মোট আটটি পুরস্কার পায়।এখান থেকে তিনি সুস্থ ধারার, ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মান করেও যে দর্শকের মন জয় করা যায় প্রমান করে দেন।হুমায়ুন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, ঘেটু পুত্র কমলা।২০১২ সালে নির্মিত ঘেটু পুত্র কমলা ছিল হুমায়ুন আহমেদের জীবনের সর্বশেষ নির্মিত চলচ্চিত্র।দেড়শো বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার জলমুখো গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন এক সঙ্গীত ধারা সৃষ্টি হয়।জলবন্ধী তিন মাস নিয়মিত বসতো এ গানের আসর।ধীরে ধীরে সেখানে সমাজের মুখোশধারী বিত্তবান কুরুচীর মানুষ তাদের মনোবাসনা পূর্ন করার জন্য নারী বেশী কিশোরদের সাথে অসামাজিক কাজে নিমজ্জিত করে।জলবন্দী সময় তারা অল্প বয়সের কিশোর কে কিশোরী রুপে সাঁজিয়ে মেতে উঠতো কুকর্মে।কিশোরকে ঘেটুপুত্র বলা হলেও তাদের ব্যাবহার করা হতো সতীনের মতো।কমলাও ছিল এক ঘেটুপুত্র।তার আসল নাম জহির।জহিরের বাবা দু’মুঠো ভাতের জন্য নিঃস্পাপ ছেলেকে আপন সন্তানকে ঘেটু পুত্র বানিয়ে চৌধুরী সাহেবের কাছে সপে দেন।চৌধুরী সাহেবের স্ত্রী আপত্তি করলে তাকে তালাক দিয়ে বাড়ি পাঠানোর হুমকি দিলে সে চুপচাপ মেনে নেয় ঘেটুপুত্র জহির কে।প্রতি রাতে চৌধুরী সাহেবের বাড়ি তিল তিল করে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় কিশোর কমলা রুপি জহিরকে।তার অসহায় চিৎকার চাপা পড়ে বাদ্য বাজনা আর পালা গানের আড়ালে।এভাবেই চলতে জনবন্ধী সময়।ঘেটুপুত্র কমলার মা একবার দেখতে আসলে তাকে তাড়িয়ে দেন কমলার বাবা।ছেলেকে একবার দেখতে চাওয়ার আর্জিও পুরন হয়না।ওদিকে চৌধুরী সাহেবের স্ত্রী ঘেটুপুত্র কে সহ্য করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আটে।কাজের মহিলা ময়না কে স্বর্নের বালা ও পাঁচটি র্স্বন মুদ্রা দিয়ে ঘেটুপুত্র কমলা (জহির) কে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার প্রস্তাবে রাজি করায়।ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কয়েকবার বাধ সাধে তারই সম বয়সী কিশোরী চৌধুরী সাহেবের মেয়ে।শেষমেষ ময়না আচারের লোভ দিয়ে কমলা কে ঠিকই ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে।চৌধুরী সাহেবের বাড়িতে ছবি আকা শিল্পী ঘটনাটি নিচ থেকে দেখলেও ভয়ে কিছু বলতে পারে না।বলেনা।লেবাস ধারী চৌধুরী সাহেব ও খুনের ঘটনাটি বুঝতে পারেন।তার বউকে বলেন, জানোই তো আমি অনেক বুদ্ধিমান।তোমাকে দেয়া সেই বালাটি কই।নিরুত্তর স্ত্রী।চৌধুরী সাহেব বউকে কাছে বসিয়ে বলেন, পানি নেমে গেছে।এখন আর ঘেটুপুত্রের দরকার নেই।আবার পানি আসলে তখন দেখা যাবে। এখন আবার আগের মতো জীবন শুরু। পানি নেমে যায়।পালা গানের দল বিদায় নেয়। শুধু নেই ঘেটুপুত্র কমলা।নিঃস্পাপ কমলা যে চলে গেছে আর না ফেরার দেশে।এভাবেই শেষ হয় বিত্তশালী মুখোশ ধারী মানুষের কাম চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে মরে যাওয়া এক কিশোরের গল্প।ঘেটু পুত্র কমলা ছবিটিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত।জীবনে অসংখ্য পুরস্কারের ভীড়ে তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি বোধহয় এটাই আজও মানুষ হিমুকে খোঁজে।হিমু ভক্ত মানুষ হলুদ পঞ্জাবি পরে হেঁটে বেড়ায়।
প্রকৃতি প্রেমী হুমায়ুন আহমেদ নুহাশ পলী সাজিয়েছেন মনের মতো করে।তার সাজানো নুহাশ পল্লীতেই চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন বিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।