গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের ২৫জন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে মনির নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর আটক করে লুকিয়ে ফেলা হয়, পরে হল প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে রাত ২টায় অন্য আরেকটি হল থেকে আনা হয় তাকে।
গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
হল সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল। সেই প্রোগ্রামে প্রথম বর্ষের কিছু ছাত্র টিউশনি, ক্লাস ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেন নি। এ কারণে সেদিন রাতে প্রথম বর্ষের সব ছাত্রকে 'গেস্টরুমে' (ছাত্রলীগের টর্চার সেল) ডাকে দ্বিতীয় বর্ষের 'পলিটিক্যাল ভাইরা'। যারা যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল না, তাদেরকে রাতে রুমে ঘুমাতে নিষেধ করে দেয়া হয় এবং তাদের রুমমেটদেরও বলে দেয়া হয় তারা যাতে রুমে ঢুকতে না পারে । কিন্তু বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে সেসব ছাত্রদের রুমে ঘুমাতে দেয় তাদের রুমমেটরা।
নেতাদের নির্দেশ অমান্য করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে গেস্টরুমে প্রায় ২৫ জন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিঠিয়ে অাহত করে দ্বিতীয় বর্ষের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মাহমুদুল হাসান রনি, স্বাস্থ্য অর্থনীতির রুবেল, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান ও এরাবিকের মাহমুদ প্রমুখ। এরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের অনুসারী।
এসময় নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে মনিরুল ইসলাম নামের ১ম বর্ষের সমাজবিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থী বড় ভাইদের 'কুত্তার বাচ্চা' বলে ফেলে। এ অপরাধে তাকে অালাদা করে 'শিবির ব্লেইম' দিয়ে দ্বিতীয় দফা নির্যাতন করা হয়।
অন্যদিকে, ঠিক এ সময় সাংবাদিকরা খবর পেয়ে চলে অাসায় দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল ছাত্ররা রুম থেকে রড, স্ট্যাম্প সরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় এবং মনির ও জার্নালিজম বিভাগের সাবেরকে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে নিয়ে গিয়ে প্রায় অাড়াই ঘন্টা অাটকিয়ে রেখে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি এবং বুঝায় যাতে তারা সাংবাদিকদের সামনে কিছু স্বীকার না করে।
এরপর সাংবাদিকরা ও জিয়া হল প্রভোস্ট তাদের দুজনকে রাত ২:৩০টার খুঁজে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ভয়ে সবকিছু অস্বীকার করে।
এ ব্যাপারে জিয়া হলের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইরা অামাদের গেস্টরুমে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এর মধ্যে রনি, রুবেল, মাহমুদ ও সাফওয়ান নিয়মিত অামাদের গায়ে হাত তোলে। গতকাল গেস্টরুমে তারা অামাদের সবাইকে রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠিয়েছে। মনির বড় ভাইদের ভুলে 'কুত্তার বাচ্চা' বলে ফেলায় তাকে মেরে গুরুতরভাবে অাহত করেছে।
অারেকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনার পর বড় ভাইরা অামাদের রুমে এসে সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। অামরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের মেবাইল নাম্বার বন্ধ রাখায় তাদের মন্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এরা সবাই হল সংসদের এজিএস ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের পদপার্থী আবিরের অনুসারী। এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে তিনি নিজে এরসাথে জড়িতদের বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানান আবির।
হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. জিয়া রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমরা সবার সাথে কথা বলব। কেউ অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।