পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘আগের আমল ভাল ছিল, এ আমল ভাল না। এমন একটি কথা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায়। তারা এ মন্তব্যের মূল কারণ হচ্ছে, আগে যেসব সরকার ছিল, তাদের আমলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কম ছিল। কম টাকায়া বেশি পণ্য কিনতে পারতেন। এখন বেশি টাকায় কম পণ্য পাওয়া যায়। তাদেরকে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। আয় না বাড়লেও লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যয় বাড়ে। ফলে তাদের কাছে যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। তারা ধরেই নেয়, ভবিষ্যতের দিনগুলো কেবল খারাপই বয়ে আনে। তবে আশাবাদী মানুষ সবসময়ই ভবিষ্যত ভাল হবেÑএমন আশা করেন। আজ খারাপ গেলে আগামীকাল ভাল যাবেÑএ আশায় বুক বাঁধেন। সমস্যা হচ্ছে, তাদের এ আশা পূরণ হয় না। রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি যারা চালায় তাদের হাতে সাধারণ মানুষের ভাল আশা করার বিষয়টি জিম্মি হয়ে আছে। মানুষকে আরামে ও স্বস্তিতে রাখার বিষয়টি নিয়ে তারা খুব একটা ভাবে বলে মনে হয় না। বরং কীভাবে মানুষকে জাতাকলে ফেলে নাভিশ্বাস তোলা যায়, তা নিয়েই পরিকল্পনা করতে থাকে। তা নাহলে আগের আমল ভাল ছিল সাধারণ মানুষ এ কথা বলত না। আবার যদি আগের আমল ভাল ছিলÑএ কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলা যায়, বর্তমান দিনই ভাল। কারণ এই দিনই কালক্রমে অতীত হবে। তবে কিছু মানুষ আছে, যাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবসময়ই ভাল। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও তাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এরা জন্মগতভাবে কিংবা জন্মের পর বিভিন্ন উপায়ে সক্ষমতা অর্জন করে। যেমন যে জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যে জন্মের পর যেভাবেই হোক কোটিপতি হন, তার আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। তাদের সামর্থ্যরে খুব একটা হেরফের হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক চামচ পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমন। তার ক্রয় ক্ষমতা অটুট থেকে যায়। আর যে মানুষটি দিন আনে দিন খায় বা ফিক্সড ইনকামের, তার দুঃখের সীমা থাকে না। সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, হঠাৎ করে যদি তাতে টান ধরে বা ধরানো হয়, তবে তার হুশ থাকার কথা নয়। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে তার বেদিশা হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। বর্তমান আমলে সাধারণ মানুষকে বহুবার বেদিশা বা বেহুশ হতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং এই চাপ নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। এই যেমন সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। এ নিয়ে মানুষের এখন দিশাহারা অবস্থা। সাধারণত বাজেট পাশ করার পরপরই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। তার সাথে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এই দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই সমস্যার প্রতিকার করার কেউ নেই। নীরবে তাদের মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। সরকার তার খেয়াল খুশি মতো তাদেরকে যেভাবে রাখতে চাচ্ছে, সেভাবেই থাকতে হচ্ছে।
দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে, যেখানে মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপকর্ম করে বেড়াত। অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের সে অবস্থা না হলেও, তার চেয়ে কম কিছু নয়। তারা বিপদের মধ্য দিয়েই দিনাতিপাত করছে। সরকার আছে, তবে সরকারের দ্বারাই তাদের একের পর এক বিপদে পড়তে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। অথচ সংসদের বিরোধী দল আছে, রাজপথের বড় বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। মিনমিন করে কিছু বক্তব্য দেয়া ছাড়া তাদের করার কিছু থাকছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কিছু ছোট ছোট দল হরতালের ডাক দিলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। সরকারও তোয়াক্কা করছে না। সরকার তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। একটি অন্যায্য সিদ্ধান্ত যে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো, তার কোনো প্রতিকার পাওয়া গেল না। উল্টো সরকারের লোকজন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। বলছেন, সরকার গ্যাস খাতে আর কত ভর্তুকি দেবে। তাই যৌক্তিকভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, এই দামের প্রভাব দুই কোটি মানুষের ওপর পড়বে। বাকিদের ওপর পড়বে না। দাম বাড়ানো নিয়ে কী অদ্ভুত ধরনের যুক্তি। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকার যদি লোহাকে সোনা বলতে হবে বলে জনগণকে নির্দেশ দেয় তবে তাকে তাই মানতে হবে। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। সে এ কথা বলতে বা মানতে কোনোভাবেই রাজী নয়, সরকারের কাজ হচ্ছে জনগণের সুবিধা-অবুবিধা দেখা, স্বস্তিতে ও দুশ্চিন্তমুক্ত রাখা। তা করতে গিয়ে যদি ভর্তুকি দিতে হয়, দেবে। সরকারতো জনগণের জন্যই। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করা তো তার কাজ নয়। জনগণ দেখছে, সরকার তা করছে না। সরকারের মধ্যে একটা ব্যবসায়িক মনোভাব বেশি কাজ করছে। সরকার তার আয় বাড়ানোর জন্য জনগণের পকেট কাটার যতরকমের ব্যবস্থা আছে তার সবই করছে। এ কথা ভাবছে না, যে জনগণ কষ্টে এবং টানাপড়েনের মধ্যে আছে তারা বাড়তি অর্থ কোথা থেকে দেবে। সরকার কেবল বলছে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এ কথা বলছে না, আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে সেই আয়কে খেয়ে ফেলছে। ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন খুব একটা হয় না এবং টানাপড়েনও কমে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা এক বাক্যে বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গোটা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগে ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে চিড়েচ্যাপ্টা করে ফেলবে। বিশ্লেষকদের এসব কথা কোনো কালেই সরকার আমলে নেয়নি। সরকারের মনোভাব এমন তারা এমন কথা বলবেই। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। সবচেয়ে বড় কথা গ্যাসের দাম বাড়ালেও সরকার দাম অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। রাজধানীর বহু এলাকায় গ্যাস সংকট সারা বছরই লেগে থাকে। অথচ তাদেরকে ঠিকই গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে। এক হিসেবে দেখা যায়, গ্যাসের নির্ধারিত মূল্যবাবদ গ্রাহকদের পাওয়ার কথা ৯২ ইউনিট, অথচ তারা গড়ে পায় ৪২ ইউনিট। অর্থাৎ ৫০ ইউনিট গ্যাস কম দিয়ে বিল নিয়ে নেয়া হচ্ছে। এটা গ্রাহকের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কী হতে পারে! এমন হতো পর্যাপ্ত গ্যাস দেয়া হচ্ছে এবং তদানুযায়ী বিল নেয়া হচ্ছে, তাহলে একটা কথা থাকতো। তা না করে জনগণের পকেট কেটে সরকার তার স্বস্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করছে। এটা একটি দেশের জনগণের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী হতে পারে! জনগণের আরও দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিগত প্রায় দশ বছরে নতুন কোনো গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি। পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমারসহ ভিয়েতনামে প্রতি বছর চার থেকে পাঁচটি করে কূপ খনন করা হয়। আমাদের দেশে যদি বিগত দশ বছরে একটি করেও কূপ খনন করা হতো, তাহলে দশটি কূপ হতো। তা করা হয়নি। সরকার গ্যাস উৎপাদনের এ উদ্যোগ না নিয়ে কম গ্যাস দিয়ে জনগণের কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করে নিচ্ছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। সরকারের এ আচরণকে মগের রাজত্ব ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে!
তিন.
জনগণের প্রতি সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখ-সাচ্ছন্দে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। কীভাবে জনগণকে কষ্টে ফেলা যায়Ñএমন ব্যবস্থা করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকার উন্নতির কথা অহরহ বলছে। উন্নয়নের বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণকে কষ্টে রেখে এ উন্নয়ন কতটা টেকসই হবে। কষ্টে থাকতে থাকতে জনগণ যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে এ উন্নয়ন দিয়ে কী হবে! হ্যাঁ কিছু মানুষের যে উন্নতি হচ্ছে না, তা নয়। তবে তারা তাদের টাকা-পয়সা দেশে রাখে না। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রাখে। সেখানে বসতভিটা গড়ে তুলছে। সমস্যা হচ্ছে, এদেশের আপামর সাধারণ মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সরকারে যারা থাকে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মধ্যে এবং যতটুকু সুবিধা দেয়া হয়, তার মধ্যেই থাকতে হবে। এ কারণেই সরকার যে কোনো জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। বাড়িয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, টাকা কোথা থেকে দেবে তা তোমরা ভাল জান, আমরা জানি না। আর যেভাবে রাখব, সেভাবেই থাকতে হবে। অর্থাৎ সরকার সাধারণ মানুষকে জোর করে কুইনাইন খাইয়ে রাখছে। না খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ফলে সাধারণ মানুষকে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে কোনো রকমে হাঁপিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এ থেকে পরিত্রাণেরও কোনো উপায় তারা দেখছে না। তাদের এ পরিস্থিতি যে তুলে ধরবে তারও কোনো উপায় নেই। তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, জনগণের এই দুর্ভোগের সময় তাদের কণ্ঠ খুব একটা উচ্চকিত হচ্ছে না। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আমরা যদি সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির কথা ধরি, তাহলে দেখব দলটি জনগণের এই দুর্ভোগের সময় কার্যকরভাবে কোনো কিছু করতে পারছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবেÑএমন কিছু কথা বলছে বটে তবে তাতে সরকারের কোনো টনক নড়ছে না। বাম দলগুলো আধাবেলা হরতাল ডেকেছে, তাতে সমর্থন দেয়া ছাড়া নিজেরা মাঠে নামেনি। বিষয়টি অনেকটা অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে বাঘ শিকারের মতো। সরকারও তা আমলে নেয়নি। বরং বলেছে, বামদলগুলোর ডাকে জনগণ সাড়া দেবে না। আর বিএনপি তাতে সমর্থন দিলেও কারো কিছু যায় আসে না। গত এক দশকে বিএনপি দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। যা দিয়েছে তা সবই সরকার দিয়েছে। সরকারি দলের এমন বক্তব্য অসার হয়নি। আবার সরকার এ কথা বলতে পারছে এ কারণে তারা বিরোধী রাজনীতিকে বাক্সবন্দি করতে পেরেছে বলে। ফলে জনগণের দুঃখ দুর্দশা গোচার আর কোনো পথ খোলা নেই। একই কথা বলতে হচ্ছে, সরকার যেভাবে রাখবে সাধারণ মানুষকেও সেভাবেই থাকতে হবে। অথচ জনগণের এই দুঃসময়ে দলটি মাঠে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারত। দেশ ব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারত। এতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন দলটি পেত। সুস্থ্য রাজনীতি করার একটি মোক্ষম ইস্যু তারা ধরতে পারত। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ দলটি কাজে লাগাতে পারেনি। জনদরদী এ কাজটি করতে গিয়ে যদি তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখেও পড়ত, তাহলেও জনগণ দেখত দলটি তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এতে দলটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও সহানুভূতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেত। তাছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এ ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দিতেও দ্বিধা করত। কারণ এটি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। বাধা দিলে তা সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আরও রুষ্ট হয়ে উঠবে। দুঃখের বিষয়, বিএনপি জনগণের এ নার্ভটি ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জন্য যদি জনগণ সরকারের পাশাপাশি দলটিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, তবে তা যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হবে।
চার.
কোনো সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালে থাকুক, সচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, সরকার সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে তাদের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। যদি এমন হতো, মানুষের ইনকাম বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক বস্তা টাকা নিয়ে গেলেও এক বস্তা জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। মানুষ যে বলে আগের আমল ভাল ছিল, তা বলে এ কারণেÑআগে যে টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা কিনতে পারত, এখন তা কিনতে পারছে না। অর্থাৎ তাদের আয় আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তাদের আগের এক টাকা এ সময়ের পাঁচ টাকা হলেও, এ পাঁচ টাকা দিয়ে আর আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। কাজেই মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ল কীভাবে? এখন টাকা বেশি দেখা যায়, তবে এ টাকায় মানুষ কোনো বরকত পাচ্ছে না। অথচ সরকার টাকাটাই বড় করে দেখছে, এ টাকায় যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটছে না, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা না করলেও নিজ স্বার্থ এবং নিজ দলের লোকজনের স্বার্থটাকে বড় করে দেখছে। গ্যাসের দাম যে বৃদ্ধি করা হলো, কেন করা হলোÑতা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, একটি মহলকে এলপিজি গ্যাস ব্যবসার সুবিধা এবং তার থেকে সরকারের একটি মহল সুবিধা লাভের জন্যই গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে ঐ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং নিজের ব্যবসা করার মনোবৃত্তিই বড় হয়ে উঠেছে। জনগণ সরকারের কাছে কিছু না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা পাচ্ছে না। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং এর সূত্র ধরে জিনিসপত্র ও পরিবহণ ভাড়া আকাশচুম্বি হলেও, সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল জনগণের। তারা যেন ভারবাহী দাস। যত ভার তাদের উপরই দিতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও এই জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব যেন তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে জনগণ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? জনগণের এই দুঃসময়ে কেউ কেউ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিকারের জন্য আদালতে কেন মানুষকে যেতে হবে এবং তাঁর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হবে? সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে না? যদি নাই বোঝে, তবে তারা কার জন্য সরকার পরিচালনা ও রাজনীতি করছে?
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।