পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভোক্তা পর্যায়ে সবশ্রেণীর গ্রাহকদের গ্যাসের দাম আবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়। গতকাল থেকে বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী আবাসিকে এক চুলার জন্য এখন থেকে দিতে হবে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির হার গড়ে ৩২.৮ শতাংশ। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদ করেছে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে সবশ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে নিত্যপণ্যের দাম, বিদ্যুৎ, পরিবহন, বাসা ভাড়া, কৃষিপণ্য এবং সেবার খরচ বাড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় মিটাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠবে। গ্যাসের এই দাম গত বছরের জুনে বাড়ানোর কথা ছিল। এ নিয়ে গণশুনানি করা হয়। তবে সে সময় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ানো হয়নি। এতে জনসাধারণের মধ্যে সরকারের প্রতি বিরূপ ধারণা এবং নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা চিন্তা করে মূল্যবৃদ্ধি থেকে পিছিয়ে আসা হয়। ১৬ অক্টোবর সরকার বিইআরসি-কে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দামবৃদ্ধি স্থগিত করে। নির্বাচনের পর সরকার পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করল। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদরা অসন্তুষ্ট এবং বাদ-প্রতিবাদ করলেও সরকারের কিছু যায় আসে না।
সরকারের কাজ যদি হয় জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখা, স্বস্তি ও আরামে রাখা, তবে আমাদের সরকার এ কাজটি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা দেখে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, জনগণকে কীভাবে আরও কষ্টে ফেলা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তার নিজের সুবিধার জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ করের বোঝা চাপিয়ে জনজীবনকে টানাপড়েনের সব বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এটা ভাবছে না, জনগণ বাড়তি এ অর্থ কোথা থেকে দেবে। এটাও ভাবে না, এক গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার প্রভাব সর্বত্র পড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে যাতায়াত খরচ হু হু করে বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বছরের পর বছর ধরে একই কথা বলতে দেখা যায়। বলা হয়, সরকারের ভর্তুকি কমানোর জন্য দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। এটা বলা হয় না, বাড়তি দাম দিতে গিয়ে জনগণের পকেটে যে টান ধরে তার ভর্তুকি কে দেবে। জনগণের প্রতি সরকারের আচরণ অনেকটা এরকমÑ দাম বাড়িয়ে দিলাম, এখন তোমরা কোথা থেকে এ দাম দেবে তা তোমরাই ভাল জান। এটা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এ ধরনের আচরণ সামন্ত্য যুগের জমিদারদের মতো। বহুকাল আগে সেই যুগের অবসান হলেও তা আমাদের সরকার সযতেœ লালন করে চলেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এলএনজি গ্যাস আমদানি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বলেছে। এতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার যদি জনগণের হয় এবং তাদের সেবার কথা চিন্তা করে, তবে এ ভর্তুকি সে ছাড়া কে দেবে? সরকার তো কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় যে দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করবে। সরকারের কাজই তো হচ্ছে নিজেকে উজার করে দিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘব করা এবং তাদের সুখে রাখা। দুঃখের বিষয়, আমাদের সরকার নিজের আরামের স্বার্থে জনগণের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করছে না। অন্যদিকে সরকারকে কেন ভর্তুকির কথা চিন্তা করতে হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে এখনো যথেষ্ট প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। এ গ্যাস ভূখÐসহ সাগরে মজুদ রয়েছে। সরকার যদি এ গ্যাসের অনুসন্ধান এবং তা উত্তোলন করে তবে গ্যাস সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। সরকার এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারছে না। এটা তার ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের ওপর। বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্যাস সংকটের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে চুরি। গ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই চুরির সঙ্গে গ্যাস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারি জড়িত। বছরের পর বছর ধরে এ চৌর্য্যবৃত্তি চলে আসছে। সরকার তা ঠেকাতে না পেরে গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকেছে এবং দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ভর্তুকি কমানোর সমাধান খুঁজছে। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি শ্রেণীর দুর্নীতির খেসারত জনগণকে কেন দিতে হবে? এই চুরি ঠেকানো এবং দেশের অভ্যন্তরের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেয়া হলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন পড়ত না। সরকার এ কাজটি না করে গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। গ্যাস খাতটিকে আমদানি নির্ভর করে ফেলেছে। এর কুফল এখন জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় যে কোনো ভোগ্যপণ্যের দামবৃদ্ধি কোনো সরকারের জন্যই ক্রেডিটের নয়। এটা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাসের এই দামবৃদ্ধিও সরকারের ব্যর্থতা নির্দেশ করছে। সরকার সাধারণ মানুষকে ভাল রাখতে পারছে না, এ বিষয়টিই ফুটে উঠছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্যভাবেই অর্থনীতিতে পড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্তসহ নতুন শিল্পায়ণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এমনিতেই মানুষ ভ্যাট ও করের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে, এর সাথে গ্যাসের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তাদের উন্নতির বদলে অবনতি হতে থাকবে। তাহলে সরকার উন্নতির কী নিদর্শন দেখাবে? উন্নতি মানে তো পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি নয়। বরং পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার মধ্যেই প্রকৃত উন্নয়নের চিত্র ফুটে ওঠে। তা না করে যতভাবে সাধারণ মানুষকে নিষ্পেষণ করা যায়, সরকার তাই করছে। সরকারের এ আচরণ গণবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা মনে করি, সরকারকে এ আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। গ্যাস সংকট দূর করতে কীভাবে ভূখÐ ও সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা যায়, তার ওপর জোর দিতে হবে। এতে স্বল্পমূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে এবং গ্যাসের আমদানি নির্ভরতাও কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।