Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুরসির অজানা তথ্য ফাঁস করলেন কাদির খান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৯, ৬:১১ পিএম

পাকিস্তানের পরমাণু পদার্থবিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খান ২০১৩ সালে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সরাতে সেনা অভ্যুত্থানের নেপথ্যের তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি বলেছেন, মোহাম্মদ মুরসিকে সরানোর ষড়যন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও মিশরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংস্থা।

কারাবন্দি অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ মুরসি গত ১৭ জুন মারা যান। গুপ্তচরবৃত্তির এক মামলার শুনানিকালে আদালতেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মুরসির মৃত্যু নিয়ে গোটা বিশ্বে তীব্র সমালোচনার মধ্যে শনিবার তার সম্পর্কে ড. আব্দুল কাদির খানের এমন মন্তব্য করলেন।

আব্দুল কাদির খানকে পাকিস্তানের ‘পরমাণু বোমার জনক’ বলা হয়ে থাকে। তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রথম পদার্থবিদ যিনি পরমাণু বোমা আবিষ্কার করেন। মুরসির মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করে ফেসবুকে ড. আব্দুল কাদির খান এক পোস্টে ২০১৩ সালের সেনা অভ্যুত্থান বিষয়ে বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসি রাশিয়া, ভারত ও পাকিস্তান সফর করেন। কিন্তু, অনেকেই জানেন না, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে মিশরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ পরমাণু চুল্লি চালুর বিষয়ে চুক্তি করেন। সে সময়ে একই উদ্দেশে তিনি তিন বছর পর আরেকটি পরমাণু চুল্লির বিষয়েও চুক্তি করেন।’ আব্দুল কাদির খান বলেন, ‘মিশরের পরিস্থিতি নিয়ে আমার কথা না বলাই ভাল। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট মুরসির ভাগ্যে কি ঘটেছিল, সেই সত্য জানার অধিকার মিশরের জনগণের রয়েছে।’ এরপরই তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘মিশরীয়রা কি জানে, মুরসির ওই সফরের ফলাফল পশ্চিমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ ছিল? চিরদিনের জন্য মিশরের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হতো। একই সঙ্গে বাড়তি বিদ্যুৎ দিয়ে তারা আফ্রিকান অঞ্চলকে আলোকিত করতে পারতো।’ মিশরীয়দের জানা উচিত, প্রেসিডেন্ট মুরসির শাসনামলেই দেশটি জার্মানি থেকে দুটি সাবমেরিন পায়। মিশরের এই সাবমেরিন পাওয়া আটকাতে জার্মানিকে চাপসহ সব পথেই চেষ্টা করে ইসরাইল। সাবমেরিনটি বিমানবাহী জাহাজকে আক্রমণ করতে সক্ষম ছিল। মিশরের এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার অধিকার অবশ্যই ছিল, যোগ করেন এই পাক পদার্থবিজ্ঞানী।

আব্দুল কাদির খানের এই বক্তব্যের সত্যতাও মিলেছে। চলতি বছরের মার্চে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি জার্মান ও মিশরের মধ্যে এ ধরনের একটি অস্ত্র কেনাবেচার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু, কেন তা হয়েছিল, ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ হিসেবে নেতানিয়াহু সেসব প্রকাশ করতে রাজি হননি।

আব্দুল কাদির খান ব্যাখ্যা করেন, বেশিরভাগ মিশরীয় দেশটির সামরিক উপগ্রহের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। অথচ এটি ইসরাইলের ওপর ব্যাপকভাবে নজরদারি করতে পারতো। মুরসি এই উপগ্রহ পাঠানোর বিষয়ে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে চুক্তিও করেন। ২০১৩ সালের অভ্যুত্থানে তাকে সরে যেতে না হলে আজ হয়তো মিশর এমন উপগ্রহেরই মালিক থাকতো। তিনি অভিযোগ করেন, বেশিরভাগেরই জানা নেই, প্রেসিডেন্ট মুরসি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন- যে কোনো মূল্যে মিশরের মিসাইল চায়। এরপর রাশিয়া অফিসিয়ালি এ বিষয়ে মিশরের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। আব্দুল কাদির খান আরও বলেন, এরপর প্রেসিডেন্ট মুরসি আল-তারাজ নামে এক মেজর জেনারেলকে মিসাইল পাওয়ার চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ায় পাঠান। কিন্তু, মিশরের সেনাবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআনের হাফেজ ড. মোহাম্মদ মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষনেতা। ‘আরব বসন্তের’ জেরে ২০১২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে পতন ঘটে প্রায় চার দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের। এরপর ২০১৩ সালে দেশটির ইতিহাসে প্রথম জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। কিছুদিন যেতেই তাকে সরিয়ে তখনকার সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতার দখল নেন। পরে নির্বাচন করে তিনি নিজেও প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতার দখল রেখেছেন।

মুরসিকে সরানোর পর সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার ব্রাদারহুড নেতাকর্মীর সঙ্গে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তাকে বিভিন্ন মামলায় যাবজ্জীবনসহ বহু বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। গ্রেফতারের পর থেকেই মুরসি কারাগারে ছিলেন।

১৭ জুন আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে মিশরের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাতে খবর দেয় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, আদালতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার মামলার শুনানি চলছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে সময় দেয়া হয়। এরপর ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন মুরসি। বক্তব্যের মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই মারা যান মোহাম্মদ মুরসি। সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিশর

২ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ