Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ধর্ষিতা শিশু আছিয়া

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ৬:৩৭ পিএম

জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ৮ বছরের ধর্ষিত শিশু আছিয়া। ধর্ষণের এক বছর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোররাতে শিশুটি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় সবাইকে কাঁদিয়ে এ পৃথিবী থেকে চলে যায়। এদিকে আছিয়ার লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন শতশত মানুষ।

আছিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মালতী গ্রামের দিনমজুর আশরাফ আলীর মেয়ে। গত বছরের ৯ জুন শিশুটিকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের তায়েজ উদ্দিনের বখাটে ছেলে মাহবুব (১৫)। এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আসামী বর্তমানে জামিনে রয়েছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৯ জুন ধর্ষক মাহবুব প্রলোভন দেখিয়ে আছিয়াকে ডেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে আছিয়া অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রথমে এলেঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার আরো অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

২০১৮ সালের ৯ জুন আছিয়ার বাবা আশরাফ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের তায়েজ আলীর ছেলেকে মাহবুবকে আসামী করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষিতার পরিবার। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩০ আগষ্ট মামলার চার্জসিট প্রদান করে।
শিশু আছিয়ার নানা হযরত আলী বলেন, ঢাকায় আত্মীয়ের একটি বাসাতে সোমবার ভোররাতে আছিয়া ব্যাথ্যায় ছটফট করতে থাকে। ওকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায়। সোমবার দুপুরের দিকে তাকে কালিহাতীর মালতীতে আনা হয়। ধর্ষনের যথাযথ বিচার চেয়েছেন এলাকাবাসী।

কালিহাতীর নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ বলেন লাশ বাড়িতে আনার পর আমি গিয়েছিলাম। শিশুটি ঢাকায় ওর আত্মীয়ের বাসায় মারা গেছে। শিশুটিকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসাপাতলে কর্মরত শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনস্টোপ ক্রাইসিস সেল এর অফিসার (পিও) বায়েজিদ বলেন, সে সময় ধর্ষণের ফলে শিশুটির ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। মলদার ও যৌনাঙ্গে ছিড়ে গিয়ে এক হয়ে যায়। এতে আটটি সেলাই করার পরও তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে টাঙ্গাইলের তৎকালীন এডিসি জেনারেল নেসার উদ্দিন জুয়েলের আর্থিক সহায়তায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এক বছর ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছিল শিশুটি। তিনি আরো বলেন এধরনের আক্রান্তরা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় সেই সময় ধর্ষক মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়েছে ও আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিযেছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। ধর্ষনের দ্রæত ও যথাযথ বিচার না হওয়ার কারনেই এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আসামী মাহবুবের উপযুক্ত শাস্তি হলেই আছিয়ার আত্মা শান্তি পাবে। তিনি আরো বলেন ধর্ষণ নামক এই ভয়াবহ ব্যাধি রোধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।

 



 

Show all comments
  • K.K ১৮ জুন, ২০১৯, ৯:৪২ এএম says : 0
    নিউজ করেছেন খুব ভালো এবার পারলে মৃত মেয়েটির হয়ে ওঁদের পরিবারের পাশে দাড়ান প্রকৃত সত্যটাকে সবার সামনে তুলে ধরুন ,, কেননা মিডিয়া ও নিউজ এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে গোঠা বিশ্ব আজ আলোকিত ,,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ