Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মায় তীব্র ভাঙন বালু উত্তোলন বন্ধে দেখার কেউ নেই

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী : | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বরখাপুর গ্রামের বাসিন্দা খালেক হোসেন। পদ্মায় ভাঙনের কবলে ৫০ বিঘা আবাদি জমি হারিয়ে আজ নিঃস্ব। তাই অশ্রæসিক্ত হয়ে নদীর পাড়ে বসে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, ওই যে ঢেউ দেখা যায় ওই খানেই আমার ৫০ বিঘা জমি ছিল। রাক্ষুসী পদ্মায় আমার সব স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে, বলতেই আবারো চোখের পানি মুছলেন খালেক। একই অভিযোগ করে বুলচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন বলেন, বাবারে আমরা বড়ই অসহায়। সবাই আশ্বাসই দেয়, কাজের কাজ কেউ করে না। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।

অবৈধ বালু উত্তোলন ফলে ক্রমেই আগ্রাসীরূপ ধারন করছে পদ্মা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সুজানগর উপজেলা এবং রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদী হতে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলনের মহাৎসব। আর এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মা নদী ভাঙ্গনে বসত-ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের হাজারো পরিবার এবং বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলী জমি। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সরকারিভাবে এসব বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও একশ্রেণির অসাধু বালু ব্যবসায়ী সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা এবং রাজবাড়ী জেলার ধাওয়াপাড়া ও কালুখালীসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে এ বালু উত্তোলন করছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বুলচন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। হুমকিতে পড়েছে নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নদী পাড়ের মানুষেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, ভায়না ইউনিয়নের ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী এবং জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে বালু তোলা হচ্ছে। তবে, উপজেলার কোথাও বালু উত্তেলানের জন্য সরকারিভাবে কোন লীজ-ইজারা নেই । অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা আইনের কোন তোয়াক্কা করছেন না, অবৈধভাবে বালু করে রাস্তার পাশে ট্যাগ দিয়ে বিক্রি করে চলেছেন।

পাবনার সুজানগর নাজিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ফকিরপুর, নরসিংহপুর, মানিকহাট ইউনিয়নের বিলমাদিয়া, তিলমাদিয়া, মামুদিয়া, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চর বরখাপুর, বিজলীচর, রাণীনগর, বালিয়াডাঙ্গি ও সাদারচর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য মায়া কান্না না করে প্রশাসন যদি নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিত, তবে অনেক মানুষের ভিটেমাটি বাঁচত। অবিলম্বে এসব অবৈধ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ