মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আবার যুদ্ধের দামামা বাজছে। ইরানের কাছ থেকে অনির্দিষ্ট হুমকি আসার পর আমেরিকার একটি বিমানবাহী জাহাজের স্ট্রাইক গ্রুপ পারস্য উপসাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বি-৫২ বোমারু বিমান বহর। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, আমেরিকা বা তার মিত্রদের উপর যে কোনো অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা হবে।
এদিকে তেহরানে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ইরান আমেরিকা ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তসমূহ আর মেনে চলবে না যাতে সে অর্থনৈতিক সাহায্যের বিনিময়ে তার পারমাণবিক কর্মসূচি কঠোর ভাবে সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। ইরান এখন ধীর কিন্তু অব্যাহত গতিতে পারমাণবিক বোমা নির্মাণের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে যা বোল্টনের মত আমেরিকান যুদ্ধবাজদের অসন্তোষ আরো বাড়িয়েছে।
মাত্র চার বছর আগে আমেনিকা ও ইরান ভিন্ন পথে ছিল। ইরানি নেতার হাতের মুঠি খুললে বারাক ওবামা একটি হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়ার পর দুই পক্ষ একসাথে বসে যা পারমাণবিক চুক্তির দিকে এগোয়। এ চুক্তি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এক দশকেরও বেশি সময়ের জন্য সমস্যার সম্মুখীন করবে। আর যা কিনা একটি পুরস্কার এবং এতে ৪০ বছর আগে ইরান বিপ্লবের পর থেকে যে হুমকি ও পাল্টা হুমকির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের যে চরম অবনতি ঘটেছিল তা অবসানের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বর্তমানে উভয়দিকেই কট্টরপন্থীরা ক্ষমতায়। চলছে মারমুখী বাক্য বিনিময়। বোল্টন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানি শাসকে গোষ্ঠিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অর্থনৈতিক চাপ ব্যবহার এবং পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে বোমাবর্ষণে বিশ্বাসী। তেহরানে মোল্লারা ও তাদের বিপ্লবী গার্ডরা আমেরিকাকে বিশ্বাস করেন না। তারা দেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছেন এবং বিদেশেও হাত বাড়াচ্ছেন। উভয় দেশেই অনড় ব্যক্তিদের দ্বারা দেশের নীতি পরিচালিত হচ্ছে যাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।
যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত পারমাণবিক চুক্তিটি রক্ষায় সম্ভবত অনেক দেরী হয়ে গেছে। ইরান তা মেনে চলছে, কিন্তু আমেরিকার সমালোচকরা অভিযোগ করছেন যে এর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শেষ পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বৈধ করবে এবং এ চুক্তি ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি বা বিদেশে খুন বা অশুভ কিছু করা থেকে থামাতে পারবে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরান চুক্তিকে বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করে গত বছর এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন। ইরানের বিরুদ্ধে পুনঃ পুনঃ নিষেধাজ্ঞা এবং তার সাথে কেউ বাণিজ্য করলে শাস্তির হুমকি এ চুক্তির অবশিষ্টটুকুও ধ্বংস করেছে। গত সপ্তাহে আমেরিকা মওকুফ সুবিধাও বাতিল করেছে যার আওতায় কয়েকটি দেশ ইরান থেকে তেল কিনছিল।
আমেরিকা এখন ইরানের ধাতু রফতানির উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে যাচ্ছে। সহযোগিতার সুবিধা ভোগের পরিবর্তে ইরান এখন বিশ^ অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইরানি রিয়ালের দাম ভীষণ পড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং মজুরি কমছে। ইরানি অর্থনীতি সংকটে।
আমেরিকার যুদ্ধংদেহি ভাব ইরানি নেতাদের হাঁটু মুড়ে বসানোর বদলে তাদের মেরুদন্ডকে আরো শক্ত করার কারণ হয়েছে। যে রুহানি পারমাণবিক চুক্তির অগ্রণী নেতা ছিলেন তিনিও এখন যুদ্ধবাজের মত কথা বলছেন। অন্তত ইউরোপ এ চুক্তির অঙ্গীকার রক্ষা করবে বলে দীর্ঘ আশা করার পর তিনি ক্ষুব্ধ।
গত ৮ মে এ চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে তিনি বলেন যে ইরান নিম্নমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও ভারি পানির মজুদ গড়ে তুলবে যেগুলোর পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ চুক্তি ভঙ্গ করবে। তিনি বলেন, ৬০ দিনের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হলে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে কোনো সীমার কথা বিবেচনা করবে না। সব কিছু মিলে মনে হয় ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করবে।
রুহানির সামনে এখন তিনটি বিষয়। প্রথম হচ্ছে তার নিজ দেশের কট্টরপন্থীরা, যারা পরমাণু চুক্তির বিরোধী ও তাকে ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছে। মনে হয়, এখনকার মত তিনি তাদের শান্ত করতে পেরেছেন। গত ৭ মে উগ্ররক্ষণশীল সংবাদপত্র প্রথম পৃষ্ঠায় ঘোষণা করে- ইরান জেসিপিওএ’তে আগুন ধরাতে ম্যাচের কাঠি জ্বালাচ্ছে। তিনি চেষ্টা করছেন যাতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ভাঙ্গে। তিনি সফল হবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন পথ বের করার চেষ্টা করছে যাতে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা উৎরে যেতে পারে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমেরিকার বাজারই বেশি মূল্যবান।
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্রোতা হচ্ছে আমেরিকা যার সাথে সে পুরনো খেলা খেলছে মনে হচ্ছে। ইরানি নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পাশ্চাত্যের সাথে দরকষাকষির বস্তু হিসেবে দেখছেন। যদিও তারা একে শান্তিপূর্ণ বলছেন, জাতিসংঘ পরিদর্শকদের কাছে তাকে অন্য কিছু বলার যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। প্রযুক্তি একই যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শক্তি বা অস্ত্র লাভ।
ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করতে যে সময় লাগবে তার চেয়ে কম সময়ে তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে। ইরানের কট্টরপন্থীদের পক্ষে যায় এ যুক্তি। তবে তারা একটি দুধারি তলোয়ার ধরে আছেন। একটি পারমাণবিক অস্ত্র লাভের হুমকি অর্থহীন যদি তা বিশ্বাসযোগ্য না হয়। আর যদি তা বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে আমেরিকা বা ইসরাইলের হামলার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
ভুল হিসাবের সম্ভাবনা বিরাট ও তা বাড়ছে। আমেরিকার সৈন্যরা ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত বাহিনীর কয়েক মাইলের মধ্যে রয়েছে। তার যুদ্ধ জাহাজগুলো উপসাগরে ইরানি টহল জাহাজগুলোর সাথে নাকে নাক লাগানোর মত অবস্থায় রয়েছে।
আমেরিকা সম্প্রতি ইরানি বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে অভিহিত করেছে, ইরান পাল্টা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীকে একই আখ্যা দিয়েছে। দুই পক্ষের কর্মকর্তারাই বলছেন তাদের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তাদের কে বিশ্বাস করবে? ইরান মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনী বা তার মিত্রদের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে বলে আমেরিকার অভিযোগ সন্দেহজনক ভাবে অনির্দিষ্ট।
ইরানের প্রক্সিদের সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা চালানোর মত অজুহাত হতে পারে। পম্পেও একবার বলেছিলেন যে ইরানের সাথে পারমাণবিক আলোচনায় বসার জন্য তিনি মার্কিন বিমান হামলার পক্ষপাতী। বোল্টন ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তার এক নিবন্ধের শিরোনাম করেছিলেন- ইরানের বোমা থামাতে ইরানে বোমাবর্ষণ কর। এখন রুহানিও স্বীকার করছেন যে সামনের পথটা উস্কানি ও উত্তেজনা বৃদ্ধির।
একটি পারমাণবিক ইরান মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক বিস্তার ঘটাবে। বোমাবর্ষণ ইরানে পারমাণবিক প্রযুক্তি ধ্বংস করতে পারবে না। তবে কর্মসূচিটিকে আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাবে। তখন তা মনিটর করা অসম্ভব হবে এবং তা অধিক বিপজ্জনক হবে। একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে পুনঃ পুনঃ আলোচনা। আমেরিকার বৈদেশিক যুদ্ধের কঠোর সমালোচক ট্রাম্পের বোল্টনের পছন্দ-অপছন্দের রাশ টানা দরকার। নইলে তিনি দেশের কট্টরপন্থী রাজনীতিক ও শুধু ইসরাইল নয়, এ অঞ্চলের বিরোধীদের চাপের সম্মুখীন হবেন।
চুক্তি করা ট্রাম্পের একটা ট্রেডমার্ক। প্রেসিডেন্ট যখন তখন তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, যেমন উত্তর কোরিয়া। একটি নতুন যুদ্ধ তার আগ্রহ নয়, এমনকি ইরানের সাথেও। ইরানকে চুক্তির মধ্যে থাকার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ও যদি সে চুক্তি পরিত্যাগ করে তাহলে তার নিন্দা করে ইউরোপীয়রা তাকে সাহায্য করতে পারে।
রুহানি অতীতে ট্রাম্পকে উপেক্ষা করেছেন, এখন বলছেন যে তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষরদাতা অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী যদি বর্তমান চুক্তি তার ভিত্তি হয়। এটা এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য আগ্রহজনক নয়। এটা হওয়া উচিত নয়। যুদ্ধের হুমকি যদি বৃদ্ধি পায়, সব পক্ষেরই আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।