পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ দুর্বল আঘাত শুরু করে গতকাল মধ্যরাতে। ঘূর্ণিঝড়টির বড়সড় অবয়ব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কোণাকোণি গতিপথ অতিক্রম করে যেতে সারারাত এবং আজ শনিবার সকাল গড়িয়ে দুপুরও অতিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা। এ সময় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ফণির গতিবেগ ওঠে স্থানভেদে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় ফণি আঘাত হানবে। তখন ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে একশ’ কি.মি.। ফণি গতকাল সন্ধ্যায় মংলা থেকে ৪শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এদিকে ফণি-ঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে খুলনা-সাতক্ষীরা উপক‚লভাগ দুপুর থেকেই ফুলে-ফুঁসে ওঠে সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে। অনেক এলাকায় চরাঞ্চল, দ্বীপ ও নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে অমাবস্যার দ্বিমুখী প্রভাবে উপক‚লের চর, দ্বীপ ও নি¤œাঞ্চল প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। অনেক গ্রাম-পাড়া জোয়ারে ভাসছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে অগণিত মানুষ।
সারাদেশে টানা অসহনীয় ভ্যাপসা গরম ও উপক‚লব্যাপী গুমোট আবহাওয়া কেটে গিয়ে ফণির পিছু পিছু ঘনঘোর মেঘ-বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এবং পার্শবর্তী উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আকস্মিক বা অকাল বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পাউবো’র প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের পাশে সার্বক্ষণিক থাকতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণির গোড়াতে যে গতিপথে ছিল সে অনুসারে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু-অন্ধ্র উপকূলের দিকে যায়নি। তবে ওডিশা-ভুবনেশ্বর-পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে হানতে বাংলাদেশের খুলনায় প্রবেশ করে। সকালের দিকে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে ফণির প্রচÐ আঘাতে ভারতের অন্যতম তীর্থ নগরী পুরীসহ ওডিশার বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে। লাখ লাখ মানুষ রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। রাজ্যটিতে জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ ভারতে আছড়ে পড়া অবধি সুদীর্ঘ গতিপথে চলায় বাংলাদেশের উপকূলে আসার আগেই (গতকাল দুপুর) ঘূর্ণিঝড় ফণি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঝড়ের পিছে পিছে ভারী বর্ষণেও ভারত থেকেই ক্রমশ দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে ফণি।
এক্ষেত্রে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু চ্যানেল-নেটওয়ার্কগুলোর দেওয়া পূর্বাভাস বাস্তবে ফলেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে ‘ফণি’র ১৮০ থেকে ২শ’ কিলোমিটার গতিবেগের আশঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক গতি বজায় থাকে শেষ পর্যন্ত। যদিও সাত নম্বর ও ছয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ দুর্বল আঘাতের পূর্বেও দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়েছিল। বাস্তবে মোরার প্রভাব ও শক্তি তেমনটি ছিলই না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র অগ্রভাগের প্রভাবে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের পানি উপকূলভাগের অনেক জায়গায় ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে আকাশ মেঘলাসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় কড়া রোদের দহনের মধ্যে অসহ্য ভ্যাপসা গা-জ্বলা গরম অব্যাহত থাকে সারাদিন। তবে সন্ধ্যা নাগাদ আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামে। স্বস্তি আসে জনজীবনে।
‘ফণি’র কারণে গতকালও মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত বহাল রাখা হয়। এতে করে আমদানি-রফতানি কন্টেইনারসহ পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং, মজুদ, পরিবহন, ডেলিভারী কার্যক্রমে অচলাবস্থা অব্যাহত থাকে দ্বিতীয় দিনের মতো। তাছাড়া সারাদেশে লঞ্চ, ট্রলার, নৌযান, ফেরি চলাচলও বন্ধ থাকে। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ফণির আঘাতের আশঙ্কায় জনমনে দিনভর বিরাজ করে ভীতি-শঙ্কা। বাদ জুমা দেশের সকল মসজিদে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহপাকের রহমত কামনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুর রহমান খান জানান, ভারতের ওডিশাা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থারত ঘূর্ণিঝড় ফণি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও কিছুটা দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গত মধ্যরাত থেকে আজ শনিবার সকালের মধ্যে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশ এবং এর উপকূলীয় এলাকায় গতকাল কাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কাছে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল´ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণি এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল´ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এক সপ্তাহ পূর্বে ঘূর্ণিঝড় ফণি সৃষ্টির পর ধাপে ধাপে আবহাওয়া বিভাগের এক, দুই থেকে এরপর ৪ নম্বর সঙ্কেত ছিল। তবে ধাপে ধাপে ৭-এ বাড়ানো হয়নি। এক লাফে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণায় সর্বত্র সাধারণ সচেতন মানুষের মাঝে সংশয় দেখা দেয়। অনেকেই বলেন ফণির অবস্থা ‘মোরা’র মতো হবে নাতো? বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রচÐ শক্তি এবং বাংলাদেশে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে আবহাওয়া দপ্তর ২০১৭ সালের ২৯ মে রাতে হঠাৎ করে দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করেছিল। শেষ পর্যন্ত ৩০ মে’১৭ইং সকালে ‘মোরা’র আঘাতটি দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের সাথে মোটেই খাপ খায়নি। আবহাওয়া সতর্কতা ও বিপদ সঙ্কেত জনগণের কাছে আরও বোধগম্য, সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞমহল দীর্ঘদিন ধরেই তাগিদ দিয়ে আসছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।