Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেসে উঠছে ক্ষত

নিহত ১৬ : হাজার হাজার ঘর বিধ্বস্ত : প্লাবিত কয়েকটি ইউনিয়ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাব কেটে গেছে। কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটেনি সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন জেলা- উপজেলায় ভেসে উঠছে ক্ষতের চিহ্ন। ফণির প্রভাবে উপক‚লের সহস্রাধিক এলাকার বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। এলাকার মানুষ জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার ঘর বাড়ি তীব্র ঝড় ও বাতাসে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়ায় অনেক উপজেলা বিদ্যুতহীন হয়ে আছে। ফণির আঘাতে গত দুই দিতে ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গবাদিপশুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকরা। আমাদের ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এ প্রতিবেদন :
মিজানুর রহমান তোতা, যশোর থেকে জানান, শুক্রবার রাতে ঘূর্ণিঝড় ফণি আঘাত হানবে বাংলাদেশে-এমন খবরে নির্ঘুম রাত কেটেছে দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষের। ঝড়ো হাওয়া ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও রাতের বেলায় মাঠে নেমে কৃষকরা যতটুকু সম্ভব ফসল ঘর তোলেন। গ্রামে গ্রামে বাড়িঘরের নড়বড়ে খুঁটি শক্ত করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিভাবে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে তার চিন্তাভাবনাও বাদ ছিল না। সকল ধরণের প্রস্ততি ও সতর্কতা ছিল ব্যাপক। সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে ফণি বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঠিকই কিন্তু ফণির শক্তি ছিল খুবই দুর্বল। এ অঞ্চলের মানুষ রাতভর ঘরে ঘরে দোয়া দরুদ পড়ে ফণির ফণা নিস্তেজ করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, ফণি আতঙ্কে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু কৃষক আধা পাকা ধান তড়িঘড়ি কেটে ঘরে তোলেন। দেশের সিংহভাগ সবজির যোগানদাতা যশোর অঞ্চলের চাষিরা মাঠে মাঠে রাতভর সবজি রক্ষার জন্য ছাউনি দেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। সূত্র জানায়, খুলনার উপকুলীয় এলাকার একটি বাঁধ ভাঙ্গাও সাতক্ষীরার কয়েকটি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ফসল ও মৌসুমী ফলের টুকিটাকি ক্ষতি ছাড়া বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার, নোয়াখালী থেকে জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফনি নোয়াখালী অঞ্চলে আঘাত হানে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০/৬০ কিলোমিটার। এর আগে রাত ১২টায় মেঘনায় জোয়ার হলেও রাত তিনটায় মেঘনা ছিল কানায় কানায় ভর্তি। আর এসময় অর্থাৎ ভরা জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় ফনি এতদ্বঞ্চলে আঘাত হানে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফনির ঘন ঘন দিক পরিবর্তনের ফলে ভয়াবহ জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষা পেয়েছে উপক‚লীয় ও দ্বীপাঞ্চলের দশ লক্ষাধিক অধিবাসী।
গতকাল শনিবার নোয়াখালীর উপক‚লীয় ও হাতিয়া উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসীর সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে। তারা জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমরা সমূদ্রে জোয়ার ভাটার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখি। ঘুর্ণিঝড় যদি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে থেকে শুরু হয় এবং তখন যদি সমূদ্রে জোয়ার থাকে তাহলে নিমিষেই বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দিতে পারে।
জানা গেছে, শুক্রবার গভীর রাতে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফনি দূর্বল হয়ে যাওয়া ও ঘন ঘন দিক পরিবর্তনের ফলে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে কয়েক লাখ উপক‚লবাসী। নচেৎ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতের পূণরাবৃত্তির আশংকা ছিল।
এদিকে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নে আম কুড়াতে গিয়ে ঝুমুর (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিশু মারা গেছে। সকাল ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। ঝুমুর ওই এলাকার আবদুল হামিদের মেয়ে।
এদিকে, সুবর্ণচরে চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জন। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল (২) একই ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, রাত পৌনে ৯টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৯ মিলিমিটার বজ্র বৃষ্টি হয়েছে। এসময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২৫ নটিক্যাল মাইলে উঠলেও ১৫মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গত শুক্রবার সকাল থেকে রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশালে ৪দফায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ২৫মিলিমিটার। সাড়ে ৯টার পরে বৃষ্টি বন্ধ হলেও থেমে থেমে মেঘের গর্জন অব্যাহত রয়েছে। রাত সাড়ে ১০টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাগর পাড়ের কুয়াকাটা, শরনখোলা, বরগুনাসহ দক্ষিণ উপক‚লে আবহাওয়া পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টির সাথে ৫-১০কিলোমিটার বেগের বাতাস বইছিল।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তরে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময়ে অন্তত ১৫জন আহত হয়। আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার রাত পৌনে ৩টায় এ ঘটনা ঘটে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কন্টোল রুম সূত্র জানায়, চাঁদপুর সদর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ৫৭টি. মতলব উত্তরে ৫০টি এবং হাইমচর উপজেলায় ১৬টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। রাজরাজেশ্বর ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, আনুমানিক ৫০টি ঘর পুরোপুরি আর ৬টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয় ৫জন। হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী বেগম জানান, গভীর রাতের ঘূর্ণিঝড়ে হাইমচর ইউনিয়নে ১৬টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মতলব উত্তর উপজেলার এখলাসপুর ইউনিয়নের বোরচর গ্রামের ৪টি অংশে ও মোহনপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে ফণির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মূলসহ গাছপালা ওপরে পড়ে। এ সময় আহত হয়েছেন ১০/১২ জন।
পটুয়াখালী জেলা ও কলাপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী কুয়াকাটাসহ উপক‚লবর্তী নদী গুলিতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতার ঢেউ অব্যাহত রয়েছে।এ ছাড়াও গতমধ্যরাত থেকে বয়ে যাওয়া ঝড়ো দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে, ,ভোররাতের পরে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি ,আকাশে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় বিরাজ করছে। এছাড়া পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় তীব্র বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে গত শুক্রবার আহত মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমান বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের মনসাতলী এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে পড়লে তিনি আহত হন।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পাবনায় ঈশ্বরদী, বেড়া আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় কয়েক স্থানে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। বেড়ায় গাছের ডাল ভেঙে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহত ইউনুস আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে,পাবনায় বিদ্যুত পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও ঝড় হাওয়ার কারণে গত শুক্রবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষীপুরের রামগতির চর নেয়ামতপুর এলাকায় গতকাল সকালে ১ জন নিহত ও ১৫জন আহত হয়েছেন। চরআলগী, চরআবদুল্লাহ, চররমিজ, বড়খেরীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়া ১টি স্কুল ভেঙে পড়েছে।
অপরদিকে বিকেলে কমলনগরে মাতাব্বরনগর এলাকায় নদীর তীররক্ষা বেড়ি বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের কিছু অংশ মেঘনায় ধসে পড়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে এ ধস দেখা দেয়। ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো বাঁধ। অপরদিকে মেঘনায় অস্বাভাকিব জোয়ার ও প্রবল ঢেউয়ে নিমাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে করে আতঙ্কে নদী পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ফণির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে কয়েক শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় ঘর চাপায় রানু বেগম (৫০) নামের এক নারী নিহত হয়েছে। গতকাল ভোরের দিকে সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রানী বেগম ওই এলাকার সামসল হকের স্ত্রী ও দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাঁধের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানায়, ভোরে ভারী বর্ষণের সাথে প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। এতে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া ও কোড়ালিয়া গ্রামের দুই শতাধিক ঘড়বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অপরদিকে দৌলতখান উপজেলায় কিছু কাঁচা ঘর বাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি জানান এ পর্যন্ত ৪০-৫০ টির মত ঘরের ক্ষতি হয়েছে, কিছু গবাদী পশুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে। চরফ্যাশন ঊপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আমিন জানান চর পাতিলা, ঢালচর, কুকরি মুকরিসহ বিভিন্ন চরে কিছু এলাকায় প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০০-২৫০টি কাঁচা ঘর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে, কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে নীলফামারীতে দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও হালকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এতে জনজীবনে ভোগান্তি নেমে আসে।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বিলের নিম্নঞ্চলে পানি জমে ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ৪০ ভাগ ধান কাটা শেষ হলেও মাঠে পড়ে রয়েছে ৬০ ভাগ ধান। বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কায় ৮০ শতাংশ ধান পাকা হলেই তা কেটে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে সাতক্ষীরার উপক‚লীয় অঞ্চলের প্রায় ৬’শ কাঁচা ঘর-বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, শ্যামগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ি আশ্রয় কেন্দ্রে মতি বিবি (৯২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কওছার আলীর স্ত্রী। রাতে তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান।
অপরদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর কুড়িকাউনিয়া ও প্রতাপনগর এবং দেবহাটা উপজেলার খানজিয়া নামক স্থানে ইছামতী নদীর বেঁড়িবাধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে বেঁড়িবাধ ভাঙনের আতংকে রয়েছেন উপকুলীয় এলাকাবাসী।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে পানির চাপে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও রাজাপুরে বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসবগ্রামে পানি ঢুকে কাঁচা বাড়িঘর, বীজতলা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। এর সাথে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
কমলনগর (লক্ষীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, : লক্ষীপুরের কমলনগরে ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে মসজিদ, মাদরাসাসহ প্রায় শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তীব্র গতিতে ঝড়ের আঘাতে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের দারুল হাসনাত রফিকিয়া ইসলামীয় কাওমী মাদরাসা ও মসজিদ এবং বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়।
কয়রা(খুলনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, খুলনার কয়রা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে গত তিন দিনে ৪ শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। গতকাল শনিবার দুপুরের জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে ছাপিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূণিঝড় ফণির কারণে গত তিন দিনে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৪৩৩ টি কাঁচা ঘর সম্পূর্নরূপে বিধ্বস্থ হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪০০ কাঁচা ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে কিছু স্থানে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২ টা নাগাদ ফনির প্রভাবে দমকা হাওয়া ও ঘুর্ণিঝড়ে বিভিন্ন এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানীয় বড় বড় গাছ পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের বাড়ীর টিনের চাল চলে গেছে। প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক হত দরিদ্র মানুষের ঘর বিধ্বস্থ হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা পড়ে বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
গফরগাঁও উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গফরগাঁও উপজেলায় গত শ্রকবার ও শনিবার দিনভর বৃষ্টি এবং কালবৈশাখী ঝড়ে ফণির ছোবলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো পাকা ধানের। নিচু এলাকায় তলিয়ে গেছে ও বাতাসের ফলে ধানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে । শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পিডিবির ও আরইবির বিদ্যুৎ নেই গোটা গফরগাঁও উপজেলায় ।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঘুর্ণিঝড় ফণির তাণ্ডবে ৮টি দোকান ঘর ও একটি বিদ্যুৎতের খুঁটি ভেঙে যাওয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে ঘুর্ণিঝড় ফণী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাণ্ডব চালায় ।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের রণজিৎপুরে দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তার নাম শাহারুন বেগন (৫০)। গত শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে ধানের কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে কাঠের ঘর ভেঙে পড়ে দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানি গ্রামের বাঁধঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নুরজাহান (৬০) ও তার নাতি জাহিদুর (৯)। জাহিদুর বাঁধঘাট এলাকার ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে।
উল্লেখ্য বজ্রপাতে গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, ইটনা ও পাকুন্দিয়ায় বজ্রাঘাতে শিশুসহ ছয়জন, নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে আবদুল বারেক (৩৫) নামে এক কৃষক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বজ্রাঘাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ