পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। বলা বাহুল্য, সুপারিশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিঃসন্দেহে পার্বত্যবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। উল্লেখ আবশ্যক যে, আইন অনুযায়ী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা পাঁচ বছর পর পর। কিন্তু এই পরিষদ গঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মাত্র একবার নির্বাচন হয়েছে ১৯৮৯ সালে। নির্বাচন না হওয়ায় পরিষদ চলছে সরকারের মনোনীত দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে। কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, দীপংকর তালুকদার, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও বাসন্তী চাকমা।
দীর্ঘদিন পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ নির্বাচন না হওয়ার পেছনে যে কারণটি উল্লেখযোগ্য, সেটি হলো জেলা পরিষদ আইনের একটি অসাংবিধানিক ধারা। আইনে বিদ্যমান সেই ধারাটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাঙামাটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার গত ২২ এপ্রিল একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন না করে জেলা পরিষদ নির্বাচন জরুরি। এমনকি ৮ এপ্রিল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রস্তাবটি তিনিই উত্থাপন করেছিলেন বলে জানান। দীপংক তালুকদারের বক্তব্য হচ্ছে, যে করেই হোক পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন করাতে হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচন কী নিয়মে হবে তা জেলা পরিষদ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেভাবে হোক, সংবিধানের মৌলিক অধিকার যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিক লক্ষ রেখে নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, বিভিন্ন সরকারের আমলে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর জেলাপরিষদগুলোর অন্তবর্তীকালীন পরিষদ পরিবর্তন হলেও আঞ্চলিক পরিষদের কোনো পট পরিবর্তন বা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে একই নিয়মে আঞ্চলিক পরিষদের কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এবং আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান জটিলতার আসল জায়গাটির প্রতিই দৃষ্টি দিয়েছেন দীপংকর তালুকদার। তার এ সুস্পষ্ট ও সাহসী বক্তব্যের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
অনেকেরই জানা, হাইকোর্টের এক রায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির কিছু ধারা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে আপিল বিভাগের বিবেচনাধীন রয়েছে। তাই আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের আগে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক পরিষদকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। লক্ষ করার বিষয়, যখনই কোনো সরকার পরিবর্তন হয়, তখন কেবল জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। কোনো এক অদৃশ্য কারণে আঞ্চলিক পরিষদ থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণেই ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের পর ১৯৯৯ সালের ১২ মে সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যদা সম্পন্ন) হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে আজও স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত আছেন। এখানে কোনো প্রকার পরিবর্তন যেন সুদূরপরাহত। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদের মেয়াদ আসলে কত দিন? এ অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ কি অনন্তকালের জন্য গঠিত হয়েছে? দীপংকর তালুকদারের মন্তব্য এবং সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর মনে হচ্ছে আঞ্চলিক পরিষদের সীমাহীন মেয়াদের ব্যাপারে একটা সীমারেখা টানা হলেও হতে পারে। অন্যদিকে জেলা পরিষদগুলোতেও অনির্বাচিতদের স্থলে নির্বাচিতরা আসার সুযোগ পাবেন।
এতদিন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের কথা উঠলে আইনগত জটিলতার কথা বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারণা, যে আইনি জটিলতার কারণে একই আঞ্চলিক পরিষদ ২১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে সেই জটিলতার অবসান অবশ্যই কাম্য। তাই আঞ্চলিক পরিষদ গঠন সম্পর্কিত আইনসমূহের আলোচনা সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তুলে ধরা প্রয়োজন। পার্বত্য চুক্তির ‘গ’ খন্ডের ১নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করিবার লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১নং আইন)-এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন ও সংযোজন সাপেক্ষে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হইবে।’ ২নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবেন ...।’ ৫নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সদস্যগণ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হইবেন। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যানগণ পদাধিকার বলে পরিষদের সদস্য হইবেন এবং তাহাদের ভোটাধিকার থাকিবে ...।’ ৬নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বৎসর হইবে ...।’ পার্বত্য চুক্তির সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, (১) আঞ্চলিক পরিষদের ভিত্তি হচ্ছে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ। (২) জেলা পরিষদসমূহের নির্বাচিত সদস্যরাই পরোক্ষভাবে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নির্বাচিত করবেন। (৩) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ সরাসরি পদাধিকারবলে আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য। (৪) আঞ্চলিক পরিষদের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর।
যেহেতু আঞ্চলিক পরিষদের ভিত্তি জেলা পরিষদসমূহ, তাই জেলা পরিষদ গঠনের আইনগত দিকগুলো বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৪নং ধারার ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হইবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ভোটার তালিকা প্রয়োজন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যাতে জটিলতা সৃষ্টি করা যায়, সম্ভবত সেই উদ্দেশ্যই পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খন্ডের ৯নং ধারার ৪নং উপ-ধারায় কোনো ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে একটি বিতর্কিত এবং সংবিধান পরিপন্থি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন’ যা পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদ আইনসমূহ সংশোধন করে ১৭নং ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার অ-উপজাতীয়দের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়ে পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খন্ডের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা বলিতে- যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণত বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।’ (এটি আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।) অর্থাৎ পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ভোটার হতে হলে বৈধ জমির মালিক হতে হবে। কিন্তু বাঙালিরা যাতে বৈধ জায়গা সম্পত্তির মালিক হতে না পারে সে জন্যও সকল পদক্ষেপ নিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন- খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিক্রয় বা অন্যান্যভাবে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদকে অবহিত করে বা জেলা পরিষদের অনুমতি নেয়াকে শর্ত করে দেয়ার মাধ্যমে বাঙালিদের ভূমির মালিক হওয়ার পথ কণ্টকাকীর্ণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে গঠিত ল্যান্ড কমিশনকে অকার্যকর করে রাখার জন্য আঞ্চলিক পরিষদ নানা দাবিদাওয়ার কথা তুলছে। তাদের সকল দাবি মানতে গেলে পাহাড়ের এক শতাংশ জমির মালিকানাও বাঙালিদের থাকা তো দূরের কথা, বরং সরকারের মালিকানাও থাকে না।
এ পর্যায়ে এসে বলা যায়, পার্বত্য বাঙালিরা যাতে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ভোটার হতে না পারে সে জন্য সকল প্রকার কলাকৌশল অবলম্বন করা আছে। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক নাগরিক বাঙালিদের বাদ দিয়েও ভোটার তালিকা করা সম্ভব নয়। কারণ এতে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা থাকে। অতএব, স্থায়ী বাসিন্দা নিয়ে ভোটার তালিকা না থাকায় জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর জেলা পরিষদে নির্বাচন না হওয়ার মানে হচ্ছে আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচনও অসম্ভব। ঠিক এ জায়গাটিতেই আটকে আছে পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন। এর ফলাফল হচ্ছে, আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষমতাবানরা আজীবন ক্ষমতা ভোগ করবেন ও যা বাস্তবেও দৃশ্যমান। শান্তিবাহিনীর সাবেক কমান্ডার সন্তু লারমা প্রতিন্ত্রীর পদমর্যদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে ২১ বছর ধরে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত আছেন। অথচ, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদও ৫ (পাঁচ) বছরের বেশি নয়। ব্যাপারটি গণতান্ত্রিক তো নয়ই, বরং নৈতিকতা পরিপন্থী এবং দৃষ্টিকটুও বটে।
তাছাড়া দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকায় আঞ্চলিক পরিষদের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাবও তৈরি হয়েছে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণের বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে পার্বত্য বাঙালিরা আঞ্চলিক পরিষদে যায় না এবং সেখান থেকে রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধাও পায় না। সন্তু লারমা ওই পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রের অর্থ, সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছেন বলেও অনেক অভিযোগ আছে। তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধান বহির্ভূতভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন অনেকবার। সবকিছু মিলিয়ে পার্বত্যবাসীসহ সচেতন দেশবাসী প্রত্যাশা করে, আঞ্চলিক পরিষদ সম্পর্কে আপিল বিভাগের বিবেচনাধীন রিটের দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং রিট নিষ্পত্তি সম্পন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত আইন অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদকে পুনর্গঠন করে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে গতি আনতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এবার আসা যাক অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ সম্পর্কে। ভোটার তালিকার ব্যাপারে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ১৯৯৭ সাল থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচন স্থগিত করে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যানসহ ৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা পরিষদ গঠন করা হয় (২০১৫ সালে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে)। অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ গঠন সম্পর্কে জেলা পরিষদ আইনের ১৬ (ক) ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ১৬-এর অধীন নির্বাচিত নতুন পরিষদ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পরিষদের কার্য চালাইয়া যাইবে।’ ৪নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার প্রয়োজনবোধে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন করিতে পারিবে।’ অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠনকল্পে পার্বত্য চুক্তির ‘গ’ খন্ডের ১২নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করিয়া তাহার উপর পরিষদের প্রদেয় দায়িত্ব দিতে পারবেন।’ আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ৫৪নং ধারার ৫নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৫ অনুসারে পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী পরিষদ ধারা ২২-এ উল্লিখিত কার্যাবলী যতটুকু প্রযোজ্য হয় এবং এই আইনের অধীন অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদন ও ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন।’
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করার কথা জেলা পরিষদ আইনে উল্লেখ থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আঞ্চলিক পরিষদ আইনে উল্লেখ নেই। সম্ভবত এ কারণেই কোনো সরকার অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনে ভূমিকা নেয়নি। কিন্তু একই অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ অনির্দিষ্ট বা অনন্তকালের জন্যও হতে পারে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনে সহায়ক আইনগত দিকগুলো আলোচনার দাবি রাখে- (১) যেহেতু আঞ্চলিক পরিষদের মূল ভিত্তি জেলা পরিষদ, তাই অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ পুনর্গঠন আইনকে আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। (২) কেননা ওই আইনের মাধ্যমে পুনর্গঠিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ যেহেতু আঞ্চলিক পরিষদেরও সদস্য। তাই বলা যায়, জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ওই আইন আঞ্চলিক পরিষদকে ইতোমধ্যে আংশিকভাবে পুনর্গঠিত করছে। অতএব, অবশিষ্ট অংশও এই আইন দ্বারা পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত আইন দ্বারাই অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করে এ স্থবির অবস্থার অবসান করা যায়। আশা করা যায়, পুনর্গঠিত আঞ্চলিক পরিষদ তার কর্মকান্ড দ্বারা পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত জাতিসমূহের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা যেন কোনো নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন না করে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।