Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফরিদগঞ্জে ইমামকে মারধর ঃ পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে চাপা ক্ষোভ

চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ৫:২৬ পিএম

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে ইমামের ওপর বোরকা পরিহিত ৩ নারীর হামলার ঘটনায় সাধারণ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পাল্টা-পাল্টি বক্তব্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনায় হতবাক হচ্ছেন মুসল্লিরা। হামলাকারী নারীদের পিতা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব। পুলিশকে না জানিয়ে ফোন করায় উস্মা প্রকাশ করেছেন অসি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

নারীদের পিতা নুরুল আমিন ইনকিলাব বলেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর সৌদি আরবের জেদ্দা প্রবাসী। দু’ বছর পর পর তিনি রমজান ও ঈদ সামনে রেখে দেশে আসেন। ছুটি শেষে ফিরে যান। তিনি বলেন, মসজিদের ইমাম মো. সৈয়দ আহাম্মেদ আরো ২/৩জন যুবকের সহায়তায় ইন্টারমিডিয়েটে পড়ুয়া আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতো। মসজিদ কমিটির সভাপতির কাছে নালিশ দিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। এ কারণে মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইমামকে ধরতে মসজিদের সামনে যায়। কিন্তু ইমামের সহযোগীরা মেয়েদের টেনে-হেচঁড়ে মসজিদে ঢুকিয়ে মারধর করে অলংকার ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে আমি গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করি।
ইমামের ওপর হামলার কথায় তাৎক্ষনিক মুসল্লিদের চাপে আমি বলেছি, আল্লাহর ঘর কোন কারণে অসম্মানী হলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিব। কিন্তু তারা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। নুরুল আমিন আরো বলেন, তার বড় মেয়ে রিক্তা সুলতানা মসজিদের সামনে অতর্কিত হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। মেয়ের শাশুড়ি জনপ্রতিনিধি। তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

মসজিদের ইমামের সঙ্গে কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল আমিনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে-এমন অভিযোগ তোলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। বিষয়টি তিনি মসজিদ কমিটির অন্য কোন সদস্যকে না জানিয়ে নিজেই ইমামকে চলে যেতে বলেছেন বলে দাবি করেন। অপরদিকে মসজিদের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন মুসল্লি ইমামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন।

মুসল্লি ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবু জাফর, আবদুর রহিম, মো. বিপ্লব পাটওয়ারী, সুলতান আহম্মেদ ও সাইফুল ইসলাম বলেন, ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিচার করার সুযোগ ছিলো। আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া যেতো। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীরা ঢুকে হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

এদিকে মুসল্লি ও সাধারণ মানুষ আল্লাহর ঘর মসজিদে এ ধরনের হামলার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইস্কান্দর সঠিক বিচার করার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইমাম মো. সৈয়দ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে আগ থেকেই অনৈতিকতার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য নিজ থেকেই ইমামকে চলে যেতে বলেছি। আমার কথা না শোনার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মসজিদে গিয়ে হামলা করার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ইমাম সাহেব এ বছর ফাজিল পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার পরে আর দায়িত্ব পালন করবে না, অন্য ইমাম নিয়োগ দিতে হবে এ কথাটি শুধু সভাপতি আমাকে জানিয়েছেন।
ইমামের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ আছে- এমন কথা আমাদেরকে সভাপতি বলেননি। মসজিদে হামলার ঘটনার পর এসব কথা জানতে পেরেছি। ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা নিয়মানুসারে বিচারের ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু মসজিদ মুসল্লিদের ওপর হামলার বিচার হওয়া দরকার।

৩ নারীর হামলায় আহত ইমাম মো. সৈয়দ আহাম্মেদকে ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব ইনকিলাব বলেন, এখনো অভিযোগ পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফরিদগঞ্জ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ