পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং শেয়ার বাজারে ধস নামার কারণে এক সময় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় কমিয়ে দেয়। এ কারণের পাশাপাশি আমানতের ওপর ব্যাংকগুলো যে সুদ দিত তা বিকল্প হিসেবে কমিয়ে দেয়ায় তারা ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়ে। বিকল্প হিসেবে তারা জাতীয় সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেখানে ব্যাংকের প্রচলিত আমানতের ওপর যে সুদের হার, তার প্রায় দ্বিগুণ দেয়া হয়। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী এবং অবসরপ্রাপ্তরা তাদের সঞ্চিত অর্থ অধিকহারে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা শুরু করে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, ব্যাংকগুলো থেকে আশঙ্কাজনক হারে আমানতকারীর সংখ্যা কমে যায়। কোনো কোনো ব্যাংক আমানত সংকটেও পড়ে। সরকারের জন্যও তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর চিন্তাভাবনা শুরু করে এবং তা সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তারা একটু লাভের আশায় সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ করেছে, তা যদি ব্যাংকের মতোই হয়, তবে তা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অনেকের সংসারে টানাপড়েন শুরু হবে। বিষয়টি উপলব্ধি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দয়া করে সঞ্চয়পত্রের দিকে হাত দেবেন না। এ সঞ্চয়পত্র দেশের লাখ লাখ মধ্যবিত্ত পরিবারের শেষ সম্বল। তারা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে উপকৃত হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের যে অপসংস্কৃতি চলছে, তা নিরসনে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন। ব্যাংক খাতকে সুশৃঙ্খল করার জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা অনেকটাই কমে যায়। বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যাংকগুলো তাদের ব্যবস্থাপনা খরচ পর্যন্ত কমাতে বাধ্য হয়। ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমতে থাকে। কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকগুলো লোকসানের মুখোমুখি হয়। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে আমানতের সুদের ওপর। এই হার নামমাত্র হারে নামিয়ে আনে। তার উপর ব্যাংকের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ কাটার ফলে আমানতকারীরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলে তারা ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে থাকে। এ খাতে বিনিয়োগ করে স্বল্পপুঁজির মানুষ এবং অবসরপ্রাপ্তরা সুবিধা পাচ্ছিল। এখন এ খাতের সুদের হার কমানো হলে স্বল্পপুঁজির বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীরা কোথায় যাবে? একটা সময় শেয়ারবাজার ছিল স্বল্পপুঁজির মানুষের বিনিয়েগের বড় একটি ক্ষেত্র। এ খাতও লুটপাটের কারণে প্রায় তলিয়ে গেছে। এটি এখন নিস্তেজ একটি ক্ষেত্র। অনেকে মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছে। এ ধরনের অনেক ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান মানুষের অর্থ মেরে দিয়ে কেটে পড়েছে। অনলাইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অনেকে প্রতারিত হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের ক্ষেত্র এক-দুটিতে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। ব্যাংক থেকে যে আমানতকারীরা আশানুরূপ সুবিধা পাচ্ছে না, তা ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। একমাত্র সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে তারা লাভবান হচ্ছে। এ খাত থেকেও যদি তাদের বঞ্চিত করা হয়, তবে তাদের ভরসা করার আর কোনো জায়গা থাকবে না। বলা বাহুল্য, যাদের বড় ধরনের বিনিয়োগ বা ছোট পরিসরের বিনিয়োগ করার মতো অর্থ থাকে না, তারাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। এ অর্থের লাভ থেকে তাদের আর্থিক চাহিদার অনেকটাই পূরন হয়। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের এই অবলম্বনের জায়গাটি নিরাপদ রাখা উচিত এবং এ খাতে হাত না দেয়াই ভাল।
সরকার সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের অর্থেই পরিচালিত হয়। তার ব্যয় নির্বাহ করে অবশিষ্টটা মানুষের কল্যাণেই কাজে লাগানো হয়। যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তাদের কাছ থেকেও কম-বেশি ট্যাক্স সরকার পায়। কাজেই কিছু লোক যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়, তাতে সরকারের খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে তারাও তো বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগ করে যদি লাভ করতে না পারে, তবে তা করবে কেন? সঞ্চয়পত্রে যারা বিনিয়োগ করে তারা সীমিত আয়ের মানুষ। তারা যদি বিনিয়োগ করে কিছুটা লাভবান হয়, তাতে সরকারের ক্ষতি কি? সরকারকে এ বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হতাশায় নিমজ্জিত করা সরকারের কাজ হতে পারে না। বরং ব্যাংকসহ আর্থিক খাতকে চাঙা করতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত। বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে এর গতি বৃদ্ধি করা হলে ব্যাংকিং খাত যেমন উজ্জীবিত হবে তেমনি সাধারণ মানুষও সুবিধামত ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।