গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের ২০দিন অতিবাহিত হলেও এর রেশ যায়নি। ছাত্রলীগের বিপরীতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদে জিএস প্রার্থী হওয়া এক শিক্ষার্থীকে এবার হল ছাড়া করতে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে হলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরে আহত শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। আহত হয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। মারধরে রক্তাক্ত শিক্ষার্থীর মাথায় ৩২টি সিলাই দেয়া হয়েছে। একই পদে হল সংসদে ছাত্রলীগ থেকে বিজয়ী হওয়া জুলিয়াস সিজার ও হল শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে তার উপর হামলা হয় বলে জানা যায়।
আহত শিক্ষার্থী ফরিদের অভিযোগ, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার হলে নিজের কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন তিনি। এসময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা তার কক্ষে গিয়ে টানাহেঁচড়া করে তাকে হলের ডাইনিং কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে জুলিয়াস সিজার, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান পিকুলসহ কয়েকজন তাকে হলে থাকার সহস কে দিয়েছে জিঙ্গেস করে মারধর করা শুরু করে। তার অভিযোগ, হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হলে ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্নভাবে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বলে। কিন্তু এর পরেও প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে তারা আমার কক্ষে ইয়াবা ঢুকিয়ে আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। পরে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। তিনি বলেন, সোমবার রাতে ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করে। তারা আমাকে জিঙ্গেস করে আমি কেন প্রার্থী হই, হলে থাকি কেন?
মারধরের অভিযোগে অভিযুক্ত হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার বলেন, ফরিদ মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত। সোমবার রাতে হল সংসদের সভায় মাদক ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গৃহীত হয়েছে। তাই ফরিদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতির প্রথম প্রয়োগ হয়েছে। তবে তাকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি, ভদ্রভাবে হল ছাড়তে বলা হয়েছে। উত্তেজিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে থাকলে সেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষয়। এসএম হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার এ বিষয়ে বলেন, ফরিদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করতে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনার বিচার চেয়ে আহত শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানের পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর নিটক দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচন করা প্রার্থী অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন তার পক্ষে এ অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় তিনি জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি করে ৫জন হামলাকারীর নাম সংযুক্ত করেন। তারা হলেন- ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ফার্সি বিভাগের মুজাহিদ, সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল্লাহ সায়েম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাব্বির। এরা সবাই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অরণি সেমন্তি খান বলেন, আমরা অভিযোগপত্র দিয়েছি। প্রক্টর বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর এ কে এম গোলাম রব্বানী এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। হল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এরআগেও ফরিদকে ছাত্রলীগ নেতারা জোর করে হল সংসদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বলে এবং তার কক্ষে ইয়াবা দিয়ে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। তাকে অমানবিকভাবে মারা হয়েছে। হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থেকে তাকে মারধর করেছে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, হলে অছাত্র যারা থাকে তারাই নিয়মিত ছাত্রদের নির্যাতন করে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য আমাদের যা করা লাগে তাই করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।