পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমাগত কমে গত এক দশকে অর্ধেকে নেমে আসলেও বাংলাদেশে সে তুলনায় জ্বালানির মূল্য কমানো হয়নি। বিশ্ব বাজারে যখন তেলের দাম বাড়ছিল, তখনো বাংলাদেশে মূল্য সমন্বয়ের কথা বলে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশেষত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ গৃহস্থালি থেকে শুরু করে তৈরী পোশাক খাতের মত প্রতিযোগিতামূলক রফতানি বাণিজ্যে উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ আগের চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখেই সাম্প্রতিক কয়েক বছরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগকে সাধারণ ভোক্তা, ভোক্তা অধিকার ফোরাম থেকে শুরু করে বিনিয়োগ ও রফতানি বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা প্রবল বিরোধিতা করে আসছেন। গত বছর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আদালতের নির্দেশে আটকে যাওয়ার পর এখন নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি(বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন)। তবে আইনানুসারে তাদেরকে গণশুনানী করতে হয়। অতীতে গণশুনানীতে অংশগ্রহণকারী স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ আছে। গত সোমবার থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে চলমান গণশুনানীতে মঙ্গলবার দেশের আবাসিক গ্রাহক খাতের বৃহত্তম গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানী তিতাস গ্যাস গ্যাসের মূল্য দ্বিগুনের বেশী(১০৩ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে অংশগ্রহণকারী শিল্পদ্যোক্তারা গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প কারখানার চাবি বিইআরসি’র কাছে রেখে যাওয়ার হুমকি দিয়ে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও পণ্যের মূল্যস্ফীতির চলমান বাস্তবতায় দেশের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। গ্যাস ও জ্বালানির সহজলভ্যতা বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাণিজ্য সক্ষমতার অন্যতম মানদন্ড হওয়ায় নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে নিশ্চিতভাবেই দূরুহ করে তুলবে। তিতাস গ্যাসের ২৭ লক্ষাধিক গ্রাহকের বেশীরভাগই সাধারণ দরিদ্র মানুষ। কোনো যৌক্তিক বা সঙ্গত কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আবাসিক খাতে গ্যাসের মূল্য একচুলার বার্নারের বিল ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং ডাবল বার্নারের বিল ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানী। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি তিতাস গ্যাস এখন কোনো লোকসানী প্রতিষ্ঠান নয়। বছরে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি, অপচয়ের পরও কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে তিতাস। অপচয়, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অবৈধ সংযোগবন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম আরো কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় দুইই বাড়বে, যা সার্বিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গত বছরের অক্টোবরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল বিইআরসি। আইনগত প্রক্রিয়ায় আটকে যাওয়ার কারণে সেই প্রস্তাবিত বর্ধিত মূল্য গ্রাহককে দিতে হয়নি। তবে সরকার এক বছরের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বর্ধিত মূল্য পরিশোধ করছে বলে জানা যায়। বিদ্যমান আইন অনুসারে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুযোগ না থাকায় এখনকার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে অবৈধ বলছেন নাগরিক প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে এই গণশুনানীকেই অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাস্তবতা এড়িয়ে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে বাণিজ্য সক্ষমতায় বাংলাদেশ এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। কোনো কোনো সূচকে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন ধাপে অবস্থান করছে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অবকাঠামো এবং বিদ্যুত-জ্বালানির সহজলভ্যতা এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত। এই দশক শেষে দেশকে মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় পৌঁছে দিতে যে ধরনের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং অবকাঠামোসহ সামগ্রিক নীতি-কৌশলের উন্নয়ন প্রয়োজন তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। একদিকে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ সক্রিয় থাকলেও অন্যদিকে গ্যাস সংযোগের অভাবে এবং গ্যাসের প্রয়োজনীয় সরবরাহ না থাকায় এখনো অনেক শিল্পকারখানা চালু করা বা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বছরে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি, অপচয় অব্যাহত রয়েছে। এসব বন্ধ করার মাধ্যমে এ খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনা সম্ভব। তা না করে বার বার গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে রফতানি বাণিজ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। গণশুনানীর অংশীজনদের যৌক্তিক দাবি আমলে নিতে হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।