Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অতিনিয়ন্ত্রণ ও অনিয়ন্ত্রণ কখনোই কল্যাণকর হতে পারে না

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অতিনিয়ন্ত্রণ এবং অনিয়ন্ত্রণ কোনোটাই ভালো নয়। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত এবং স্বাভাবিক ও সুষম হওয়া বাঞ্চনীয়। যা অতিনিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে তা হয় বিগড়ে যায়, না হয় নিশ্চল হয়ে পড়ে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সকল ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশে সুষম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। ক্ষমতার জোরে এক ধরনের ‘অতিনিয়ন্ত্রণ’ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষমতাবানের দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষের যে কোনো কিছু, তা ভাল হলেও ধর ধর মার মার কাট কাট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার যা নিজের পক্ষের তা নিয়ন্ত্রণ না করে প্রশ্রয় দিয়ে একেবারে গাছে উঠিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি খুব দৃষ্টিকটু হয়ে দেখা দেয়। এই যে দেশে প্রতিদিন এত হামলা, আক্রমণ, খুনখারাবি হচ্ছে, তার পেছনের অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণ না করা বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শৈথিল্য। অন্যদিকে বাক স্বাধীনতা, স্বাভাবিক রাজনীতি করার অধিকার ইত্যাদির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চরমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। এর বিপরীতে যারা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে, তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো যা করার তা করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তাদের যেমন খুশি তেমন স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যারা মূল প্রতিদ্বন্ধী, তাদেরকে অতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে তারা এ স্বাধীনতা ভোগ করছে। এটা করা হয় প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। রহিম যদি মনে করে করিম তার অর্জিত জনপ্রিয়তা দিয়ে রহিমের ক্ষমতা খর্ব বা ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে, তবে সে তা সুবিবেচনা দিয়ে বিচার না করে সৈন্য-সামন্তের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগে করিমকে প্রতিহত করতে উঠেপড়ে লাগে। করিমের জনপ্রিয়তাকে অজনপ্রিয় করে তোলার জন্য যত ধরনের অপবাদ রয়েছে তা দিয়ে বা কুৎসা রটিয়ে অপরাধী সাব্যস্ত করে। আরোপিত এই অপরাধে করিমকে দায়ী করে নিপীড়ন-নির্যাতন করতে দ্বিধা করে না। রহিমের অতিনিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে করিম যে টুঁ শব্দ করবে বা বুকভরে শ্বাস নেবে তারও সুযোগ দেয়া হয় না। এ প্রবণতা কোনোভাবেই সুস্থ্য মানসিকতার পরিচায়ক নয়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এমন অতিনিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রিত হতে বাধ্য করার একটি প্রবণতা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে।
দুই.
আমার জন্য যা ভালো, অন্যের ক্ষতি করে হলেও তা নিয়ন্ত্রণে নিতে দ্বিধা না করার মানসিকতা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে। নিজের লোকজন অপরাধ, অন্যায় বা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকলেও সেখানে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন বোধ করছে না। প্রতিপক্ষ বা সচেতন শ্রেণী এ নিয়ে কথা বললেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চেপে ধরা হচ্ছে। আমাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের মধ্যে এ প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। এখানে রাজনীতির সুস্থ্য প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত। একে অপরকে শত্উজ্ঞান করে। কতটা শত্রু বা কতটা শত্রু নয়, তা বিচার করা হয় না। আবার যে সবার কাছেই খারাপ লোক হিসেবে কমন, সে-ও অতি আদরণীয় হয়ে উঠে। বিষয়টি এমন, তুমি যত খারাপই হও, আমার সাথে থাকলে তোমার মতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে আর হয় না। তোমার সাত খুন মাপ। এমন একটা অপসংস্কৃতি আমাদের দেশের রাজনীতিতে জোরালো হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় সরকারি দল ও বিরোধী দল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকার ভুল করলে বা ভুল সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধী দল তা যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে প্রতিবাদ করবে। বিরোধী দল ভুল করলে সরকারও তা যথাযথ কারণ ও যুক্তি দিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে। এটাই রাজনীতির অতি সাধারণ ও শুদ্ধ আচরণ। ভুল বা বিরোধিতা করলেই কাউকে শত্রু ভাবতে হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। আমাদের দেশে রাজনীতির ধারাটিকেই এমন করে ফেলা হয়েছে যে, সরকারি দল ও বিরোধী দল একে অপরকে চিরশত্রু ভাবে। কেউ কাউকে দুই চোখে দেখতে পারে না। একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। প্রতিদ্বন্ধীকে শুধু প্রতিহিংসার বশে অপবাদ দিয়ে শত্রু ভাবা কুরাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। এই কুরাজনীতিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন দৃশ্যমান। প্রতিপক্ষকে নিধনের যত ধরনের পন্থা আছে, তার সবই অবলম্বন করা হচ্ছে। পুরোপুরি নিধন করতে না পারলেও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে অতিনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে। এই নিধন কর্ম ও কোনঠাসা করাকে বৈধ করতে জনগণের সামনে প্রতিপক্ষকে এই বেটা চোর, খুনিসহ এমন আরও যত ধরনের অপবাদ দেয়া যায়, দেয়া হচ্ছে। স্বৈরশাসনের কথা বাদ দিলে, বাংলাদেশের মতো এমন অস্বাভাবিক রাজনীতি আর কোনো দেশে আছে কিনা, সন্দেহ। অথচ আমাদের রাজনীতির ধারাটা এমন ছিল না। আমরা যদি স্বাধীনতার পূর্বের রাজনীতির ধারা দেখি, সেখানে দেখা যাবে মত-পথের ভিন্নতা থাকলেও সব রাজনৈতিক দলের কমন লক্ষ্য ছিল, শাসন-শোষণ এবং অত্যাচার-নির্যাতন ও বঞ্চনা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করা। অতঃপর স্বাধীনতা অর্জন করা। এই এক লক্ষ্য সামনে রেখে সকলেই রাজনীতি করেছেন। এর ফলে দেশ স্বাধীন হয়েছে, জনগণ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। স্বাধীনতার পর রাজনীতির এই ধারাটা ধরে রাখা যায়নি। দেশ গড়ার যে অনিবার্য লক্ষ্য ছিল, তা থেকে অনেকেই লক্ষ্যচ্যুত হয়ে স্ব স্ব স্বার্থের রাজনীতি শুরু করে। শুধুই ক্ষমতাকেন্দ্রিক এবং ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ক্ষমতায় যেতে হবে, তবে তা যদি দেশের উন্নয়নের চেয়ে গোষ্ঠী স্বার্থের উন্নয়ন প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠে, তবে তা অবশ্যই দোষণীয়। দুঃখের কথা, এই দোষণীয় রাজনীতিই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে কাকে ল্যাং মেরে ক্ষমতায় যাবে এবং ক্ষমতায় থাকবে-এটাই মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল বরাবরই অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। কারণ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা তার হাতে এসে পড়ে। যার হাতে রাষ্ট্রযন্ত্র থাকে, পৃথিবীতে তার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ হয় না। তবে এক্ষেত্রে শক্তির অপপ্রয়োগে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। আমার হাতে সর্বময় ক্ষমতা আছে বলে যা খুশি তা করে ফেলব, প্রতিপক্ষ বা বিরোধী দলকে নস্যি করে তুলব-এমন মনোভাবে কাম্য হতে পারে না। তার কথা এবং বাদ-প্রতিবাদকে তুচ্ছজ্ঞান করা উচিত নয়। আমাদের চলমান রাজনীতিতে এমন সুশীল আচরণ এখন কেউ কল্পনা করতে পারে না। বলা বাহুল্য, বিরোধী রাজনীতি এখন সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে। মাঠে-ময়দানে সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের সামনে যে সরকারের ত্রটি-বিচ্যুতি ও সমালোচনা করবে, তার সুযোগ নেই বললেই চলে। গণতন্ত্রের রীতি-নীতি এবং পরিধির মধ্যে যতটুকু আচরণবিধি রয়েছে, তার সুযোগও সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ বিরোধী রাজনীতি নির্মূলের একটা প্রক্রিয়া লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। কেবল সরকারের রাজনীতিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। সরকারের রাজনীতিতে এ মনোভাবে এটাই প্রতীয়মান হয়, বিরোধী দল বলে কিছু থাকার দরকার নেই। সরকারের মনোভাব এমন হলে, বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভয়ংকর আর কিছু হতে পারে না। গণতন্ত্রের কথা বলে এমন এক একপেশে রাজনীতি এখন প্রতীয়মাণ হচ্ছে।
তিন.
মানুষ কথা বলা ছাড়া থাকতে পারে না। একে অপরের সাথে ভাব প্রকাশ এবং মনের কথা খুলে বলতে চায়। এই ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে যুক্তি-তর্ক এবং বাদানুবাদ হওয়া স্বাভাবিক। সব মানুষের অবস্থান এবং জ্ঞান-বুদ্ধি যেহেতু সমান নয়, তাই যেসব মানুষ নিজেদের অতি উঁচুদরের মনে করে, তারা আবার একটু কমজোর ও কম জ্ঞান-বুদ্ধির মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে। তারা মনে করে, কথা বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার একমাত্র অধিকার তাদেরই। তাদের নিচের সারির মানুষের এ অধিকার নেই। যে স্বৈরাচার বা স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থার কথা এখন বলা হয়, তা মানুষের সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই ছিল। নিচের সারির মানুষকে তারা দাস-দাসী হিসেবে বিবেচনা করতো। সুদীর্ঘকালের এই ধারাবাহিকতায় একটা সময় উঁচুতলার মানুষদের মধ্যে যারা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন তাদের কারো কারো উপলব্দি হয়, সাধারণ মানুষের মতামত নেয়া এবং প্রকাশের সুযোগ দেয়া ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই উপলদ্ধি থেকেই আড়াই হাজার বছর আগে এথেন্সের দার্শনিক ক্লিসথেনিস এমন একটি ধারণার উদ্ভব ঘটান, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামত নেয়া এবং তদনুযায়ী শাসন কাজ চালানোর তত্ত¡ তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসনকাজ পরিচালিত হবে। তার এই ধারণা থেকেই ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের সূচনা হয়। তার এ ধারণাটি বেশ গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। শাসকদের ভাল-মন্দ নিয়ে আমজনতা কথা বলতে শুরু করে। শাসকরাও তা সানন্দে গ্রহণ করে। সেই থেকে গণতন্ত্রের যে সূচনা তা আজও মানুষের কাছে সবচেয়ে আদরনীয় হয়ে আছে। শাসকরাও মানুষের এই পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে শাসন কাজ পরিচালনা করতে চেষ্টা করে চলেছে। অবশ্য কেউ কেউ এর ধারে কাছে না গিয়ে নিজেদের মতো করেই শাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গণতন্ত্রের যে যাত্রা, তার গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেক মনিষী ও দার্শনিকরা এ তন্ত্রকে আরও উন্নত মানসম্পন্ন করার জন্য নিজেদের তত্ত¡ ও জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একে আরও বিস্তৃত এবং গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে যে কথা বলেছেন, তা গণতন্ত্রের অসংখ্য সংজ্ঞার মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, মত প্রকাশ নিয়ে ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার তো নিজের জীবন দিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, তোমার মতের সাথে আমি একমত হতে না পারি, তবে তোমার মত প্রতিষ্ঠায় আমি জীবন দিতে পারি। লেখক-সাহিত্যিক জন মিল্টন আঁকুতি প্রকাশ করে বলেছেন, আমাকে জানার স্বাধীনতা দাও, বলার স্বাধীনতা দাও, তর্ক করার স্বাধীনতা দাও। এ কথাও বলেছেন, মানুষের এসব স্বাধীনতা ছাড়া বিজ্ঞান, রাজনীতিসহ কোনো কিছুই অগ্রসর হয় না। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত করা মানুষের মুখ ফুটে কথা বলার তত্ত¡ ‘গণতন্ত্র’কে তারা অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিলেন। তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্র এখন সগৌরবে বিরাজ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের মতো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন একটি কাজ। এসব দেশের শাসকরা এখনও সামন্তবাদী মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। এটা অনেকটা গরিব দেশে বড় লোকদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্যি দেখানোর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গণতন্ত্র এখন অনেকটাই উন্নত বিশ্বের শাসন ব্যবস্থার তত্তে¡ পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো দেশ সেসব দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করে বা ধারণা নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চেষ্টা করে। তবে তা পুরোপুরি প্রতিপালন করে না বা করতে দ্বিধাবোধ করে। গণতন্ত্রের আংশিক ধারণাকেই গণতন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে। এটা করে তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করতে। কারণ পুরোপুরি গণতন্ত্রায়ণ করলে তাদের ক্ষমতা দেখানো ও প্রয়োগের শক্তি খর্ব হয়ে যাবে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা অনেকটা তেমন। গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলেন, গণতন্ত্রের ‘গণ’ উঠে গেছে, এর জায়গায় ‘কর্তৃত্ব’ যুক্ত হয়েছে। কেউ বলেন, গণতন্ত্রকে ‘অতিনিয়ন্ত্রণ’ বা ‘সংকুচিত’ করে ফেলা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তো একবাক্যে বলছে, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, স্বৈরতন্ত্র চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিরোধী দলের এসব অভিযোগ যে একেবারে অসত্য, তা অস্বীকারের উপায় নেই।
চার.
অতিরিক্ত কোনো কিছুই প্রকৃতি গ্রহণ করে না। অনেকেই বলেন, অতিরিক্ত ‘ভালো’ও ভালো নয়। তেমনি ‘অতিনিয়ন্ত্রণ’, ‘অতিসাবধানতা’ও ভালো নয়। এতে হিতে বিপরীত হয়। যারা নৈতিকভাবে দুর্বল বা নার্ভাস, কেবল তারাই এমন অতিপন্থা অবলম্বন করে। তা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে আরও বিপদে পড়ে। এতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বলে কিছু থাকে না। এক পক্ষের জোরজবরদস্তি ফুটে ওঠে। রাজনীতির ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা এবং ভারসাম্যের বিকল্প নেই। এর ব্যত্যয় ঘটলেই গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব মূলত যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের। এর ব্যতিক্রম হলেই বুঝতে হবে সরকার গণতন্ত্র ও জনগণের মধ্যে নেই। সে রাষ্ট্রশক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ ধরনের সরকার নৈতিকভাবে খুবই দুর্বল থাকে। তার ভেতর সবসময় ক্ষমতা হারানোর ভয় কাজ করে। বিরোধী দল যাতে তার এই ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে না পারে, এজন্য অতিসতর্ক, অতিনিয়ন্ত্রণ এবং অতি নিপীড়ন-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের মনোভাব কখনোই গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। এতে স্বৈরতন্ত্রের যেমন উদ্ভব হয়, তেমনি জনগণও নিরাপদবোধ করে না। তাদের মধ্যে সবসময় ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। এই ভয় ও শঙ্কা নিয়ে কোনো জাতি সামনে অগ্রসর হতে পারে না।
[email protected]

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণতন্ত্র

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন