পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গত শনিবার বিকালে সোনাইমুড়িতে তিনি যখন নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন তখন সরকারদলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের অতর্কিত হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে তিনিসহ আরো কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ব্যারিস্টার মাহবুব অভিযোগ করেছেন, সোনাইমুড়ি থানার ওসি নিজেই তাকে গুলি করেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে তিনি বলেছেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা হামলা করে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীদের বিএনপির কর্মীরা ধাওয়া করলে ওসি আবদুল মজিদ নিজেই আমার মুখের নীচে, পিঠে ৫টি, হাতে ২টি ও থুতনিতে ১টি গুলি করে। এছাড়া আমার পিএস ইকবাল হোসেন রুবেলের পায়ে গুলিসহ ২০জন নেতাকর্মীকে গুলি করে ওসি মজিদ।’ ওসি আবদুল মজিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়লে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তার পিএসসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ ব্যারিস্টার মাহবুব শুধুমাত্র একজন প্রার্থী নন, তিনি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের বার বার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং স্বনামখ্যাত ব্যারিস্টার। তার ওপর ওইভাবে ওসির গুলি চালানো (ব্যারিস্টার মাহবুরের অভিযোগ অনুযায়ী) কতটা সমীচীন হয়েছে, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। এটা তার চরম বাড়াবাড়ি বললেও কম বলা হয়। ব্যারিস্টার মাহবুব আহত হয়েছেন। এর বেশি কিছুও হতে পারতো। আইনের দৃষ্টিতে এটা ‘হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি’ কিনা, তা বিবেচনার দাবি রাখে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনার সময় প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেয়াসহ আইনশৃংখলা সুরক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। দেখা যাচ্ছে, ব্যারিস্টার মাহবুর ও তার সঙ্গীরা প্রতিপক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন অথচ পুলিশ আক্রমনকারীদের রুখতে বা প্রতিহত করতে পারেনি। তাদের এমনকি গ্রেফতারও করা হয়নি। উল্টো আক্রান্তদের ওপরই পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আক্রমনকারী ও পুলিশের ভূমিকা একই বরাবর হয়ে গেছে। এটা নি:সন্দেহ দু:খজনক এবং উদ্বেগজনকও বটে।
আমরা লক্ষ্য করছি, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থীদের প্রচারণায় সরকারদলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের বাধাদান, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সমানেই চলছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এই সন্ত্রাস-সহিংসতা থেকে প্রার্থীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশ সরকারদলীয় পেশীবাজ নেতাকর্মী-সমর্থকদের সমর্থন ও ছত্রছায়া দিচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের মতো একই ভূমিকায় অবর্তীণ হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১২ জন প্রার্থীর ওপর সরকারদলীয়দের হামলার ঘটনা ঘটেছে। যারা হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ছাড়াও রয়েছেন, মানিকগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এসএম আবদুল মান্নান, মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী এস এ জিন্নাহ কবির, ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, যশোর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম, চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জালাল উদ্দিন, ঢাকা-৬ আসনে ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিনা খান, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদ, কক্সবাজার-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মুসলিম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ। গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের ১৯টি জেলায় প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫৪ জন আহত হয়েছে। এই সঙ্গে পুলিশের ধরপাকড়ও অব্যাহত আছে। ২৪ ঘণ্টার সারাদেশে অন্তত আড়াইশ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এরা সবাই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর সরকারদলীয়দের হামলা একদিকে, অন্যদিকে পুলিশের লাগাতার গ্রেফতার অভিযানে নির্বাচনের পরিবেশ যে নষ্ট হচ্ছে, ভীতি-আতংক দেশময় ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আগামী দিনগুলোতে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন। এখনই লাগাম টানা হলে পরিস্থিতি যে ভয়ংকর হয়ে উঠবে, আলামতাদী থেকে তা স্পষ্টই প্রতীয়মান হচ্ছে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এখন পর্যন্ত, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে ওঠেনি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ সিইসি ক’দিন আগে দাবি করেছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারছেন, প্রচারণার বাধা নেই। সিইসির কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়ে, কোথায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তিনি দেখছেন? কোথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলা থেকে শুরু করে এপর্যন্ত যত হামলার ঘটনা ঘটেছে তা কি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের প্রমাণ দেয়? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিচয় বহন করে? বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পুলিশী অভিযানে শত শত গ্রেফতার কি তার দাবি সমর্থন করে? বস্তুত, সিইসি সরকারী দল ও মহলের ভাষায় কথা বলেছেন, তার মনে রাখা উচিৎ, দেশের মানুষ অন্ধ ও বধির নয়। তারা যা ঘটছে, তার সব কিছুই দেখছে, সব কিছুই শুনছে। সরকারী দল-মহলের ভাষায় কথা বলে তাদের আশ্বস্থ করা যাবে না। বরং তিনি যে সরকারী দল-মহলের দেখানো পথেই হাঁটছেন সেটা দিন যত যাচ্ছে, ততই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে একই তালে হাঁটছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। সচিব দাবি করেছেন, বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার কাছে প্রশ্ন: কি ঘটলে, তার মতে, বড় ঘটনা হবে? সংঘাত, সংঘর্ষ, হামলা, গুলি ইত্যাদি কি বড় ঘটনা নয়? এসব যদি বড় ঘটনা না হয়, তাহলে কাকে তিনি বড় ঘটনা বলবেন? কারো তল্পী বহন করা ইসির কাজ নয়। ইসির কাজ অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেয়া। সেটা করতে হলে হামলা, মামলা, গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের অভয় পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। ইসি যথোচিত চেষ্টা চালালে, নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে এবং সরকার কাক্সিক্ষত সহযোগিতা দিলে অবশ্যই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠাসহ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।