Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসির ভূমিকায় হতাশা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন, ২০ ডিসেম্বরের পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সিইসির মতো সাংবিধানিক পদাধিকারীর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অভিপ্রেত নয়। তার এ বক্তব্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি মুখে শঙ্কা প্রকাশ করলেও বাস্তবে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটছে, তার একটিরও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সুরাহা করা হয়নি এবং এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে এ ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন দিন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, বিরোধী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার সময় ক্ষমতাসীন দলের হামলার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। হামলা আতঙ্কে বিরোধী দলের অনেক প্রার্থী এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় নামতে পারেনি। নামলেও ক্ষমতাসীন দলের হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে এ ধরনের হামলা যে আরও বৃদ্ধি পাবে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। সিইসি যদি বুঝতেই পারেন আগামী দিনগুলোতে নির্বাচনী সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে, তাহলে ইসি কেন কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে না? কেবল মুখে মুখে আশঙ্কা প্রকাশ ও সতর্ক করলেই কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? বর্তমানে নির্বাচনের যে পরিবেশ তা কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের অনুকূল নয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু করার এখনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার বৃত্তেই রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বরাবরই বলে আসছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যে ধরনের ভূমিকা পালন করা আবশ্যক, নির্বাচন কমিশন তা করতে পারছে না। ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের প্রতি যেরূপে আচরণ করছে, নির্বাচন কমিশন যেন তা মেনে নিচ্ছে। নির্বাচনকালীন সময়ে কমিশন বিনা করণে কাউকে গ্রেফতার ও হয়রানি না করার নির্দেশ দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। এখনও নির্বিচারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাককে গ্রেফতার করে পরে ছেড়ে দিলেও গাজীপুর-৫ আসনের বিরোধী দলের প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা আগের মামলায় জামিনে থাকার পরও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এ বাহিনীর উপর নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ সিইসি বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে রয়েছে। যদি তাই হয়, তবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কেন হয়রানি ও গণগ্রেফতার করা হচ্ছে? নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য এই গ্রেফতার ও মামলার বিষয়টি কি নির্বাচনের পরে করা যেত না? বিরোধী দল যখন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করে বলেছে, আওয়ামী লীগ নয়, মনে হচ্ছে পুলিশই তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। পুলিশের যে আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে তাদের এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না। সাধারণ মানুষের কাছেও পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর কারণ, এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিরোধী দলের গাড়ি বহর ও প্রচার-প্রচারণায় হামলা হয়েছে, তাতে পুলিশের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। কারা হামলা চালিয়েছে, এ ব্যাপারেও কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। এভাবে হামলা-মামলা হলে কীভাবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে? পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। একজন মার্জিত ও ভদ্রলোক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তবে তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা বললেও, নির্বাচনের যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে পুলিশের ভূমিকা সমালোচিত হচ্ছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে যে হামলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। বরং সিইসি এ ঘটনায় বিব্রতবোধ করে বক্তব্য দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সিইসির এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার দায়িত্ব বিব্রতবোধ করা নয়, বরং দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। তিনি তা না করে বিব্রতবোধ করে দায় এড়িয়েছেন। সিইসির এ ধরনের মৌখিক ভূমিকার কারণে নির্বাচনী সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা না দেখিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তল্পিবাহকের ভূমিকাই পালন করছে।
আসন্ন নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য না হলে দেশ এক মহাসংকটে পড়বে বলে ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ওদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র খুবই হতাশাজনক। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল ও সাংঘর্ষিক হয়ে উঠলে পুরো বিনিয়োগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে দেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু না হয় এবং রাজনৈতিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে। নির্বাচন কমিশনকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য নির্বাচনকে যে কোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এখনই কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন