পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘কে এম নূরুল হুদা নির্বাচন কমিশন এখনো সরকারের আদেশ-নির্দেশ পালন করছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।’ গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এনডিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরও সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবে কাজ করছে। সরকারও নির্বাচন কমিশনকে নানা আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কার্যত সেগুলোই বাস্তবায়ন করছে। অথচ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার এমনটা করার কথা নয়।
ড. কামাল হোসেন যে অভিযোগ করেছেন, সে অভিযোগ কেবল তার নয়, অনেকেরই। কে এম নূরুল হুদা কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। কমিশনের গঠন পর্যায়েই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এটি সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়েই গঠিত। কমিশনের দুয়েকজন সদস্য ব্যতিক্রম থাকতে পারেন। পরবর্তীতে কমিশনের কার্যক্রম থেকেও এটা দেখা গেছে, সরকারের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার সক্ষমতা এই কমিশন প্রদর্শন করতে পারেনি। কমিশনের অধীনে ইতোপূর্বে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ব্যতিক্রম বাদে তার সবই বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। নির্বাচনের মাঠ সমান করার প্রশ্নে একদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনের মাঠ সমান করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের করার কিছু নেই। তফসিল ঘোষণার পর সেটা করা হবে। অথচ তফসিল ঘোষণার এতদিন পরও নির্বাচনের মাঠ সমান করার কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। উল্টো সরকারের ইচ্ছা কার্যকর করার একটা প্রবণতা প্রবলভাবে তার মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার কথা ও কাজের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের মাঠ সমান না হয়ে বরং আরো অসমান হওয়ার আলামতই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনের উপযোগী নূন্যতম পরিবেশ এখনো দৃশ্যমান হয়ে উঠেনি। সমান মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন তো আরো পরের কথা। দেশী-বিদেশী মহলের একান্ত প্রত্যাশা, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেটা কিভাবে সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। গত বুধবার ঢাকায় একটি হোটেলে কানাডা, আইআইডি ও এনআইডির উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও কয়েকটা সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের পরিবেশ ছিল আলোচনার মূখ্য বিষয়। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের সব কিছু আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না হলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সরকারের প্রতি নানামুখী অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। জবাবে সরকারি দলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ অস্বীকার করে দায় চাপিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের ওপর। বলেছেন, এখন সব বিষয় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব কিছু করছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে কিছু সমস্যা আছে, তা সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখানে মূলত নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা, সেটা আমরা বলছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া সত্তে¡ও আমরা নির্বাচনে এসেছি। এখন নির্বাচনে আসার পর দেখছি, আমাদের জার্নি হচ্ছে লং হিল জার্নি, আমরা আরো নিচের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়, একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ দেখতে চায়। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে, পুরো নিয়ন্ত্রণটা সরকারের হাতে, নির্বাচন কমিশনের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে? সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমরা তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকার অভাব লক্ষ্য করছি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রশাসনের ভূমিকা মোটেই ইতিবাচক নয়। এখনো বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সামান্য অভিযোগে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হচ্ছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এখানে যে জিনিসটি উঠে এসেছে, আগামী নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, দেশে-বিদেশে যদি দৃশ্যমান ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন না দেখা যায়, সেটা এখন কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায়। এগুলো দে আর অবজারর্ভিং। এটা হয়তো বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যেসব অর্জন আছে, খুব ভালো অর্জন আছে, সেই অর্জনগুলোকে ম্লান করতে পারে। সেটা আলোচনায় উঠে এসেছে। এই টুকুই আমি বুঝতে পেরেছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হোক, এটাই জাতীয় ও জনআকাঙ্খা। এ ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট সরকারের কাছে কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছিল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটনেতাদের সঙ্গে বিএনপি ও ঐক্যফ্রণ্টর নেতাদের সংলাপ হয়। সংলাপে কার্যত ব্যর্থ হয়। দাবি-দাওয়া একটিও সরকার মেনে নেয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নির্বাচনে আসার জন্য আহবান জানিয়ে আশ্বাস্থ করেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ, ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই আশ্বাসকে অবলম্বন করেই হয়তো শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও ঐক্যফ্রণ্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এটা অনেকটাই নিশ্চিত, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই হতে যাচ্ছে। তবে সে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এটা ঠিক, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে সরকারের কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে এবং সংসদ বহাল রেখে। এছাড়া সরকার সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে তার মতো করে সাজিয়েছে।নিম্ন আদালতের ওপরও সরকারের শক্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এমতাবস্থায়, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কিংবা নির্বাচনের মাঠ সকলের জন্য সমান করার প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। নির্বাচন কমিশন শক্ত ও দৃঢ় হলে হয়তো কিছুটা সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় সে সম্ভাবনা সুদৃরপরাহত বলেই মনে হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের আসলে কারো বা কোনো কিছুর ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই। না সিভিল প্রশাসনের ওপর আর না পুলিশ প্রশাসনের ওপর। নিম্ন আদালতের বিচারকদের, যাদের নির্বাচনের কার্যক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে, ওপরত্ত তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমরা দেখেছি, পূর্ববর্তী সরকারের সাজানো সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। এখন সে সুযোগ নেই যেহেতু সরকার বহাল আছে এবং সরকার অনুরূপ রদ বদল কামনা করেনা। তবে নির্বাচনের সময় সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন যেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এই রদবদলের কাজটি করতে পারে। সে ক্ষমতা আর আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন তার এই ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। বিরোধী দলের ব্যাপক অভিযোগ সত্তে¡ও নির্বাচন কমিশন ওই ধরনের রদবদল না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিরোধী দলের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, ঢালাও অভিযোগে রদবদল করা যাবে না। এ জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হবে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রণ্টের তরফে এরপর সুনির্দিষ্টভাবে ৯২জন কর্মকর্তার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়, যার মধ্যে জনপ্রশাসনের ২২ জন কর্মকর্তা যাদের ১৭ জন জেলা প্রশাসক) এবং ৭০ জন পুলিশ প্রশাসনের (যাদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সুপার)। এই তালিকার মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত একজন বাদে কাউকেই বদলি করা হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশন থেকে এই মর্মে আশ্বস্থ করা হয়েছে, কাউকেই বদলি করা হবে না। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছাকেই মান্য করা হয়েছে।
এর ফলাফল হাতেনাতেই পাওয়া গেছে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। দেখা গেছে, বিরোধী দলের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ উইনেবল প্রার্থীর অনেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএনপির ১৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মাত্র তিনজনের। মনোনয়নপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। অতি সাধারণ ত্রæটির জন্যও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সিইসি আগেই ছোট-খাটো ত্রæটি উপেক্ষা করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনা প্রতিপালিত হয়নি। রিটার্নিং অফিসারদের অনেকেই ইচ্ছামত মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত বৈপরীত্যের অনেক খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগ ‘ঠুনকো অভিযোগ’ ‘গণহারে’ তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিলের একটি সুস্পষ্ট প্যাটার্নও পর্যবেক্ষকদের নজর এড়িয়ে যায়নি। সেটা প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের পরিসংখ্যান থেকে যেমন বুঝা গেছে তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের অধিকাংশের মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘটনা থেকেও বুঝা গেছে। বলা যায়, মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাঠ যতটা সম্ভব ফাঁকা করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়াদের বেশির ভাগই নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন। আপিলে অনেকেরই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষিত হবে বলে তারা আশা করছেন। এই ঘটনার মধ্যদিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের অনেকেই তাদের ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। এতে নির্বাচন কমিশন কতটা বিব্রত হয়েছে, আমাদের জানা নেই। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এরকম পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে নির্বাচন নূন্যতম অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।
পুলিশ প্রশাসনের কথা তো বলাই বাহুল্য। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। সিইসি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ছাড়া কোনো গ্রেফতার হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে তাদেরই শুধু পুলিশ গ্রেফতার করছে। কিন্তু তার পরও পুরোনো মামলায় যুক্ত করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমন কি প্রার্থীকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অসংখ্য মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা এমনিতেই দৌঁড়ের মধ্যে আছে। নতুন করে আবার তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। জামিন বাতিল হচ্ছে কারো কারো। তারা গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি একজন প্রার্থী। সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা রয়েছে। তিনি সব মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার উদ্যোগ নেয়ার পর তার বিরুদ্ধে একটি নতুন মামলা সচল করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারী দায়ের করা এই মামলায় তিনি এজাহার ভুক্ত আসামী ছিলেন না। ২৫ নভেম্বর পুলিশের অভিযোগপত্রে তার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয় ৮৭ নম্বর আসামী হিসাবে। ২৯ নভেম্বর ওই মামলায় তিনি ও স্থানীয় দু’জন বিএনপি নেতা বিচারিক আদালতে জামিন নিতে গেলে সেই দু’জন নেতার জামিন হলেও খায়রুল কবির খোকনকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পুলিশের এ ধরনের আচরণ অব্যাহত থাকলে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা কতজন নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারবে কিংবা কতজন নেতাকর্মী বাইরে থাকতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন। ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীন, না নির্বাচন কমিশন পুলিশের অধীন? পুলিশের ওপর নির্বাচন কমিশনের যে কিছু মাত্র নিয়ন্ত্রণ নেই, ঘটনাপ্রবাহে সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম তদন্তে সারা দেশে আসনভিত্তিক ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যুগ্ম জেলা জজ, দায়রা জজ এবং সহকারী জজ এসব কমিটির সদস্য। কিন্তু এই নির্বাচনী তদন্ত কমিটিগুলো এখনো কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি। এনিয়ে গত বুধবার সিইসি অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্দেশে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, তারা আশা করেছিলেন, ২৫ নভেম্বর কমিটি গঠন করার পর অন্তত ১২২টি অভিযোগ তদন্ত হবে। ১০০টা না হোক ২২টি তদন্ত করার প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু সেটা হয়নি। কারণ কমিটিগুলো এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। কবে নাগাদ গুছিয়ে উঠবে এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্রতী হতে পারবে, সে বিষয়ে সিইসি কিছু বলেননি। এই নির্বাচনী তদন্ত কমিটিকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের বহু ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী তদন্ত কমিটিগুলো তার একটির বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে কমিটিগুলোর কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। এই প্রেক্ষিতে সিইসি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনাদের দৃশ্যমান হতে হবে। তার মানে আপনারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হননি। আপনাদের কাজের মাধ্যমে যখন আস্থা অর্জিত হবে, আপনাদের যখন চিনবে তখন থেকে আপনাদের ওপর দায়িত্ব আসবে। আপনাদের কাছেই অভিযোগ আসবে। তখন আর শত শত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে আসবে না। তিনি কমিটিকে প্রো অ্যাকটিভ ও ভাইব্রেন্ট হওয়ার যে আহবান জানিয়েছেন, বাস্তবে তা কতটা হবে, সেটা কম বড় প্রশ্ন নয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এই কমিটির ওপর নির্বাচনের পরিবেশ এবং অভিযুক্তদের প্রতিকার অনেকাংশেই নির্ভর করে।
এখন পর্যন্ত এটাই দৃশ্যগ্রাহ্য, নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ সব ক্ষেত্রেই শিথিল। নির্বাচন কমিশনের কথা ও কাজ কোনো সমন্বয় নেই। সব কিছু এখনো অগোছালো। এরকম একটি নির্বাচন কমিশনের, যে কিনা ইতোমধ্যেই সরকারের আজ্ঞাবহ হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়া কতটা সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।