Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে কিনা, ভোটররা সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা এবং তাদের রায়ের যথাযথ প্রতিফলন ফলাফলে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক মহলের। এর কারণও কারো অজানা নেই। প্রথমত, দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সরকার ১০ বছর যাবৎ একটানা ক্ষমতায় আছে। সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে সরকার তার পছন্দ মত সাজিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোনো সম্ভাব বিরাজমান নেই। তাদের একে অপরের প্রতি কোনো আস্থা নেই। বরং প্রবলভাবে আছে সংশয়-সন্দেহ ও বিরোধ-দ্ব›দ্ব। এই পারস্পারিক অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা এবং শত্রæভাবাপন্নতার প্রেক্ষাপটে কেউই মনে করেনা, দলীয় সরকারের অধীনে, তার সাজানো প্রশাসনের আওতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে। তৃতীয়ত, অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত নির্বাচনের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। এ দায়িত্ব মূলত নির্বাচন কমিশনের। তবে এজন্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতাও অপরিহার্য। সরকার কতটা সহযোগিতা করবে এবং নির্বাচন কমিশনই বা কতটা তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সত্ত¡ার প্রকাশ ঘটাতে পারবে তার ওপরই নির্ভর করবে, নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এখন পর্যন্ত আলামত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের তরফে নানা ধরনের অভিযোগ জানানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকার সমআচরণ করছে না। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রæতি প্রতিপালিত হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এলেও নির্বাচন কমিশন মামলা ও গ্রেফতার বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন রোধেও নির্বাচন কমিশন নির্লিপ্ত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই এবং এই ফিল্ড প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার তালিকা দিয়ে তাদের বদলি করার দাবি জানিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। বরং নির্বাচন কমিশনের তরফে কোনোরূপ রদবদল করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম বলেছেন, সরকার ও প্রশাসন মেনে নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে এসেছে। এখন প্রশাসন রদবদলের দাবি অবাস্তব। তার এ বক্তব্যের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। আসলেও তো, বিএনপি সরকার, সংসদ ও নির্বাচন কমিশন বহাল রেখেই নির্বাচনে এসেছে। এখন যে দাবি ও অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার যৌক্তিক ও নৈতিক ভিত্তি কি এর ফলে দুর্বল হয়ে যায় না? এরকম অবস্থা যে সৃষ্টি হবে বা হতে পারে, তা কি তাদের আগেই জানা বা অনুমানে ছিল না? বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের একটি দাবিও সরকার মেনে নেয়নি। তারপরও তারা নির্বাচনে এসেছে। আদতে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনীতি করেনি। প্রেসব্রিফিং ও দাবি-দাওয়া পেশের মধ্যেই রাজনীতিকে সীমিত রেখেছে। রাজনীতিকভাবে সরকারের ওপর এমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি যাতে সরকার কিছু দাবি অন্তত মেনে নিতে বাধ্য হয়। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, এটা বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের নেতাদের একটা বড় ব্যর্থতা। তারা রাজনীতির খেলায় যথেষ্ট দক্ষতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেন নি। এখন যা কিছু ঘটছে তা অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রম নয়। যা ঘটার ছিল, কার্যত তাই ঘটছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি নির্বাচনে জনপ্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনা নেই? আছে; তবে সেজন্য সরকারের সদিচ্ছা ও নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তার সরকার সংবিধানের বাইরে যাবে না। তিনি এ আশাও ব্যক্ত করেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং তাতে সব দল অংশগ্রহণ করবে। এই সঙ্গে একাধিকবার তিনি বলেছেন, কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন তিনি দেখতে চান না। বাস্তবে তার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার অবস্থান অক্ষুন্ন আছে, অন্যদিকে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে। বাকী আছে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে না চাওয়ার আকাঙ্খাকার বাস্তবায়ন। প্রকৃতপক্ষে, আর একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সম্ভব্য পরিনতি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের ও দেশের নেই। সে জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই। এ ব্যাপারে সরকার, বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছা ও ভূমিকা অত্যাবশ্যক। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে যে কোনো মূল্যে গ্রহনীয় ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রদর্শন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তার কথা ও কাজের দ্বারা ব্যাপক বিতর্কের অবতারণা করেছে। তার পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ভূমিকা কারো অজানা নেই। এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে অনেকেই অভিমত দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনকে তার কথা ও কাজের দ্বারা সকল মহলের আস্থা অর্জন করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য নিশ্চয়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে সফল হলে নির্বাচন কমিশনই নন্দিত হবে না, সরকারও উচ্চ প্রশংসিত হবে এবং দেশ-জাতি একটি সমূহ বিপর্যয়ের আশংকা থেকে রেহাই পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন