Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধ্রুপদী মাহমুদউল্লাহ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এক সেঞ্চুরি পাওয়ার পর আর সাদা পোশাকে তিন অঙ্কে যেতে পারছিলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এবার তিন টেস্টের মধ্যেই পেয়ে গেলেন দুটি। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পর আরেকটি পেতে অপেক্ষা ছিল ৮ বছরের। তৃতীয়টি মিলল মাত্র ১৬ দিন পরই।
এই দুই সেঞ্চুরির মধ্যে ধরণেও অবশ্য বেশ তফাৎ। জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দেওয়ার তাড়ায় খেলা সেঞ্চুরিটি ছিল দ্রুতলয়ে। অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে খেলে ১২২ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবার তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন সবচেয়ে ধীরলয়ে। সময়ের হিসেবে সেঞ্চুরিটি মন্থর হলেও ধ্রুপদী এই শতকটিই তার টেস্ট ক্যারিয়ারকে করল গতিময়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে মাহমুদউল্লাহ করেছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। গতকাল ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন ১৩৬ রানে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৭৭ ইনিংসে করেছিলেন একটি সেঞ্চুরি। এবার পরপর দুই সিরিজে চার ইনিংসেই করলেন দুটি। এই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই কিছুদিন আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ইনিংসে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি যদি হয় স্বস্তির, এবারেরটি নিশ্চিত ভাবেই ভরসার। ওই সেঞ্চুরিতে শুধু আট বছরের টেস্ট সেঞ্চুরি খরাই ঘোঁচাননি, দলে জায়গাও বাঁচিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেঞ্চুরির আগে টানা ১১ ইনিংসে ছিল না কোনো ফিফটিও। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল আগেও। আবারও সেই শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল। গত ১৪ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি তাই এসেছিল রক্ষাকবচ হয়ে।
তবে যথেষ্ট ছিল না শুধু সেটুকুই। ওই সেঞ্চুরিতে টেস্ট ক্যারিয়ার নতুন দম পেয়েছিল বটে। কিন্তু জীর্ণ টেস্ট ক্যারিয়ারকে পুরোদমে ছোটাতে প্রয়োজন ছিল আরও দারুণ কিছু। ৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিটের এই ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ ছুটলেন সেই গতিময়তায়। হাফ সেঞ্চুরি করতে সময় নিয়েছেন আড়াই ঘণ্টার মত (১৫৬ মিনিট)। বল খেলেছেন ৮৮ টি। যার মধ্যে স্কোরিং শট ছিল ৩৪ টি (২৫টি সিঙ্গেলস, ৫টি ডাবলস আর ৪টি চার)। সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে লাগিয়েছেন ২০৩ বল। সময়ের হিসাবে সেটা ৩২৭ মিনিট। এরচেয়ে বেশি সময় নিয়ে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে আর তিনজন বাংলাদেশির।
ইনিংসটির ভিত গড়া হয়েছিল আগের দিন বিকেলেই। ৩১ রানে অপরাজিত থেকে শেষ করেছিলেন দিন। দ্বিতীয় দিন সকালে অবশ্য ব্যাটিংয়ে ছিল খানিকটা অস্থিরতা। প্রথম ঘণ্টায় ছিলেন বেশ নড়বড়ে। আরেকপাশ সাকিব আল হাসানকে একের পর এক শট খেলতে দেখেই কিনা, মাহমুদউল্লাহও ছিলেন ছটফটে। দ্বিতীয় দিন নেমে শুরুতে কেমার রোচের পেস আর স্যুয়িং বেশ ভুগছিলেন। আউট হতে হতেও বেঁচেছেন বার দুয়েক। একবার স্লিপে ক্যাচ হননি অল্পের জন্য। কয়েকবারই ব্যাটের কানা নিয়েছে বল।
তবে সাকিব আউট হওয়ার পরপরই নিজেকে গুছিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। আরেকপাশে লিটন দাসের দারুণ সব শট খেলাও তার ওপর কমিয়ে দেয় চাপ। আঁটসাঁট ডিফেন্স আর সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান। জোর করে শট খেলার প্রবণতা, কিংবা তাড়া দেখা যায়নি আর একবারও। এমনকি দল ৮ উইকেট হারালেও করেননি তাড়াহুড়ো। নব্বই ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরি করতে বল খেলেন ৩০টি!
সেঞ্চুরির পর পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে তুলেছেন দ্রুত রান। দলকে পাঁচশ পার করানোর পর আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ২৪২ বল খেলে ১০ চারে ১৩৬। সময়ের দাবি মিটিয়ে করা মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি বাংলাদেশকেও পাইয়ে দিয়েছে বিশাল সংগ্রহ। বাংলাদেশ থেমেছে ৫০৮ রানে।
এই ইনিংসের পর হয়তো টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের ওপর বিশ্বাস পোক্ত হবে মাহমুদউল্লাহর। দলও এখন তার অভিজ্ঞতায় ভরসা পাবে পুরোপুরি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাহমুদউল্লাহ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ