নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল সাড়ে ৪টা। হঠাৎই কুয়াশার চাদরে ঢাকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আকাশ। যেন ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিং দুর্দশার প্রতিচ্ছ¡বি হয়েই রইলো মুহূর্তটি। বোলারদের হাত ধরে (বিশেষ করে নাঈম হাসানের) দিনের শুরুটা যেখানে হয়েছিল ঝলমলে, ১৭ উইকেট পতনের দিনশেষে বিপদে বাংলাদেশই!
প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের বড় লিডই পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের গল্পটা হতে পারতো শুধুই বাংলাদেশের। তার উপর অভিষেকেই সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করলেন নাঈম। কিন্তু শেষ বিকেলে ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে উল্টো চাপে বাংলাদেশই। ৫৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো বিপদেই রয়েছে স্বাগতিকরা। যদিও দ্বিতীয় দিন শেষে ১৩৩ রানে এগিয়ে আছে টাইগাররা। তবুও ১৭ উইকেট পতনের দিনে অস্বস্তির কাঁটা স্বাগতিকদের গলায়।
উইকেট পতনের মিছিল চলতে থাকা শেষ সেশন সব হিসেব নিকেশ জট পাকিয়ে দিয়েছে। গতকালও আগের দিনই মতই বারবার রঙ বদলেছে ম্যাচের চেহারা। দ্বিতীয় দিনেই ম্যাচে প্রাধান্য নেওয়ার বদলে বাংলাদেশকে তাড়া করছে হারের শঙ্কাও। উইকেট স্পিনারদের জন্য এতই আগল খোলে রেখেছিল যে সারাদিনে দুদলের পেসাররা বল করেছেন মাত্র তিন ওভার। বাকি প্রায় ৮৬ ওভারই চলেছে ঘূর্ণি বল। দুদলের তিন ইনিংসের উইকেট পড়েছে ১৭টি। রান হয়েছে ৩১০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৭৮ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন নাঈম হাসান। তাকে নিয়েই উৎসব হতে পারত। কিন্তু ব্যাট করতে গিয়েই সেই উৎসবের রেশ আর থাকেনি। দিনশেষে ৫৫ রান তুলতেই যে ৫ উইকেট খুইয়ে বসেছে বাংলাদেশ ।
শেষ ঘণ্টায় আবার ব্যাট করতে নামাই যেন কাল হয়েছে বাংলাদেশের। তালগোল পাকিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে টপ অর্ডার। প্রথম ইনিংসে ধুঁকতে ধুঁকতে রান পাওয়া ইমরুল কায়েস এবার জোমেল ওয়ারিকানের বলে থতমত খেয়ে হয়েছেন বোল্ড। কেমার রোচকে মেরে শুরু করা সৌম্য সরকার রোস্টন চেজকে ক্যাচ দেন স্লিপে। খানিকপর মুমিনুল হককেও ফিরিয়েছেন চেজ।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ফিরেছেন দিনের সবচেয়ে বাজে শটে। ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডার দেখেও ফ্লগ করে ওখানেই দিয়েছেন ক্যাচ। দেবেন্দ্র বিশুর সোজা বলে স্টাম্প খুইয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। দিনশেষে সব আলো থাকার কথা নাঈমের দিকে। কিন্তু বেচারা নাঈম, তাকে ছাপিয়ে গেছে ম্যাচের পরিস্থিতি। ওই পরিস্থিতির জন্য দায়ি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই। উইকেটে মাইনফিল্ড পোঁতা তা প্রমাণেই ব্যস্ত হয়ে যান তারা। মারবেন কি ধরবেন, এগিয়ে ডিফেন্স করবেন নাকি পেছনে গিয়ে খেলবেন কোন কিছুরই একাগ্র মতি ছিলো না কারো। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসে এই ম্যাচ এখন চতুর্থ দিনেই যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এখনো হাতে শেষ ৫ উইকেট নিয়ে ১৩৩ রানের লিড সাকিব আল হাসানের দলের। চতুর্থ ইনিংসে এই উইকেটে দুশো রান তাড়াও ভীষণ কঠিন হবে। সেদিক থেকে আপাতত কাউকেই এগিয়ে রাখার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে তো আগে লিডটা দু’শো পার করতে হবে। সে ভার এখন পুরোটাই ক্রিজে থাকা মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ আর ব্যাট করতে বাকি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপর।
আগের দিনে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান নিয়ে নেমে আর ৯ রান যোগ করেই থেমে যায় বাংলাদেশ। জবাবে নেমে প্রথম ঘন্টাখানেক নিবেদন দেখিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান দুই ওপেনার। এরপর খানিকের মধ্যে তাসের ঘর তাদের ইনিংস। তাইজুল ইসলাম কিরন পাওয়েলকে এলবডব্লিও করে আনেন প্রথম উইকেট। খানিক পরেই চোট কাটিয়ে ফেরা সাকিব আল হাসান নিজের প্রথম বলেই আউট করেন শাই হোপকে। ওই ওভারের শেষ বলে তুলে নেন ক্রেইগ ব্র্যাফেটকেও। মুশফিকুর রহিম ক্যাচ না ছাড়লে তিনি উইকেট নিতে পারতেন আরেকটি। তার বলে ক্যাচ ফেলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
তখন ঘূর্ণি বলে জবাবহীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ মনে হচ্ছিল অল্প রানেই গুটিয়ে যেতে যাচ্ছে। সে ভাবনায় বাধ সেধে ষষ্ঠ উইকেটে গিয়ে প্রতিরোধ গড়েন শেমরন হেটমায়ার ও শন ডাওরিচ। খেলার তাল মুহূর্তেই ঘুরিয়ে দেন হেটমায়ারই। আক্রমণকেই প্রতিরক্ষার মূল অস্ত্র বানিয়ে চালান আগ্রাসী ব্যাটিং। তরতরিয়ে বাড়তে থাকে রান। ৯২ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সারাদিন গড়পড়তা বল করা মিরাজ সম্ভবত দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটই নিয়েছেন। ৪৭ বলে ৬৩ রান করে মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হেটমায়ার। ৫ চার আর ৪টি ছক্কা মেরেছেন। যেভাবে রান বাড়াচ্ছিলেন আরও কয়েকওভার থাকলে ব্যবধান কমিয়ে ফেলতেন দ্রুত।
তাকে ফেরানো গেলেও তার সঙ্গী ডরিচ টিকে যান শেষ পর্যন্ত। তিনিও ৬৩ রান করেছেন, কিন্তু খেলেছেন ১০১ বল। হেটমায়ারের সঙ্গে তার ব্যাটিং আসলে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছে ক্যারিবিয়ানদের আশা। না হলে প্রথম ইনিংসে দু’শো রান পেরুনো সম্ভব হতো না সফরকারীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।