২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ওজন বেড়ে গেছে, বন্ধু বান্ধুবীরা যখন তখন খোঁচা মারে। আপনার বিরক্তির শেষ নেই। ওজন কিভাবে কমাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একদল আছেন ব্যায়াম করেন ঠিকই, তবে খাবার নিয়ন্ত্রনের ধারে কাছেও যান না। এক বসায় এক কেজি গরুর মাংশ খেয়ে ফেলেন। আরেক দল আছেন কম খান। তবে ব্যায়াম করতে তাদের প্রচণ্ড অনীহা। শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজই করতে চান না। দু’দলই সঠিক পথে নেই। তাহলে কিভাবে ওজন কমাবেন? জেনে নিন সে রকম কিছু উপায়। প্রথমে জানতে হবে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত। বেশি না কম ওজন আছে। ওজন বেশি হলে কমাতে হবে। দৈনিক আপনার ক্যালারী গ্রহনের পরিমান কত হতে হবে তা জানতে হবে। ধরা যাক আপনি দৈনিক ১৭০০ ক্যালরী গ্রহন করতে পারবেন। আপনাকে কমপক্ষে এর চেয়ে ৫০০ ক্যালরী কম গ্রহন করতে হবে। তবেই না অতিরিক্ত ফ্যাট কমবে। পাশাপাশি কোন খাবারে কত ক্যালরী সেটাও জানতে হবে।
সকালের নাস্তায় দুটো রুটি,একটি ডিম ভাজা, একটুখানি ভাজি, একটি ফল থাকতে পারে। প্রবাদ আছে, সকালের নাস্তা খান রাজার হালে। দুপুরের খাবারটা একটু ভাল হলে দোষ নেই। তবে রাতের খাবার মোটেও ভারী হতে পারবে না। এক বাটি সবজি, ২টা রুটি, যে কোন একটি ফল, এক মগ দুধ হতে পারে রাতের আদর্শ খাবার। সকালে নাস্তা না খেলে ওজন কমবে। এই ধারনা একদমই সঠিক নয়। ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার খান। সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া উত্তম।
এবার আসা যাক। ক্যালরী লস করবে কিভাবে। এজন্য সহজ কথা হলো প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটুন। দশ হাজার স্টেপ হাটতে পারলে ভালো। অ্যালকোহল জাতীয় সকল পানীয় পরিহার করুন। ওটস, ডিম, আপেল, কাঁচামরিচ, রসূন, মধু, গ্রিরন টি, টমেটো খাদ্য তালিকায় রাখুন। রসূনে আছে অ্যালসিন, যা শরীলের চর্বি কমায়, কোলেস্টোরল
প্রতিরোধ করে। মধু যদি খাটি হয়, তাহলে তা ওজন কমাতে সহায়ক। আপেলে আছে প্রচুর এন্টিঅ।ডেন্ট। চর্বিযুক্ত মাংশ খাওয়া কমিয়ে দিন। মাংশ থেকে চর্বিকে পৃথক করে খেতে পারেন। সপ্তাহে মাত্র একবার। রান্নার আগেই চর্বি পৃথক করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ মগ পানি খান। শীতকালেও কম পানি খাবেন না। কুসুম গরম পানি হলেও খান। ফলমূল খেতে কোনই বাধা নেই। মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন।
অতিরিক্ত ওজন অসুখ বিসুখ বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, জরায়ু, প্রষ্টেট ক্যান্সার হবার ঝূঁকি ৫ ভাগ বেশি। আমিষ যুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। যা শরীরের চর্বি কমাবে। ওজন কমাতে গিয়ে অনেকে একদমই ভাত খান না। এটা মোটেও ঠিক নয়। কার্বোহাইড্ররেড যুক্ত খাবার ( যেমন ভাত) কম খেতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবার বেছে নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে দুর হবে। কচু শাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, ডাটা শাক, লাঊ শাক, কলার মোচা, ঢেড়শ, বাধাকপি, ফুলকপি, সজনে, গাজর, সিম, কচু, বরবটি আঁশ জাতীয় খাদ্য। যুক্তরাষ্টের একদল গবেষক বলেছেন, আঁশ জাতীয় খাবার মানুষের বিভিন্ন অসুখ বিসুখের ঝুঁকি, অকালমৃত্যুর আশংকা কমায়। চোখের ক্ষুধা নয়। যখনই প্রকৃত ক্ষুধা লাগবে। ঠিক তখনই খেতে হবে। চিনি, ক্যাফেইন, আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে দিন। যতদিন না স্বাভাবিক ওজনে আসেন।
টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া পরিহার করতে হবে। যারা টিভি দেখতে দেখতে খায় তারা অন্যদের চেয়ে ২৮৮ ক্যালরী বেশি খায়। সপ্তাহে অন্তত ২ বার সামুদ্ররিক মাছ খান। সামুদ্ররিক মাছে ওমেগা ৩ আছে। বাংলাদেশে টুনা ফিস সহ অনান্য সামুদ্ররিক মাছ সহজলভ্য। দাম খুব কম। ওমেগা ৩ হৃদপিন্ড এবং ত্বকের জন্য খুব উপকারী। রুটি খেতে হলে লাল আটার রুটি খান। চালের বেলায় বাদামি চালকে প্রধান্য দেন। এই খাবারগুলো ধীরে ধীরে হজম হয়। পেট ভর্তি থাকে অনেক সময়। ব্যায়াম, পরিমিত খাবার গ্রহন, লোভ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা থাকলে বাড়তি ওজন কমানো শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মুহাষ ম্মদ শফিকুর রহমান
কলাম লেখক
মুনালয়, দক্ষিন নাজিরপুর
ডাক ও থানা-বানারীপাড়া, বরিশাল-৮৫৩০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।