পুনরায় যমুনা ব্যাংকের এমডি হলেন মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ
যমুনা ব্যাংক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে আরও ৫ বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে পুনঃনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : দেশে গরু ও গরুর গোশতের সংকট দূরীকরনে উন্নত প্রজাতির গরু উৎপাদনের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার আমেরিকা থেকে ‘ব্রাহমা’ নামে এক গোশতবহুল প্রজাতির গরুর বীজ আমদানী করেছে। সঠিক পরিচর্যা পেলে মাত্র ২ বছরেই এই গরুর ওজন হবে একটন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামুলক ভাবে নরসিংদীসহ দেশের ৮০টি থানায় এই গরুর বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্রাহমা জাতের ক্রস বাছুর জন্ম নিয়ে বেশ নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছে। বাছুরগুলোর বেড়ে উঠা দেখে লোকজন আশান্বিত হয়ে উঠছে। উৎপাদন কর্মসূচি সফল হলে দেশে দেশে কুরবানির গরু সংকট অনেকাংশেই কমে যাবে এবং গরুর গোশত উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। ব্রাহমা প্রজাতির গরু উৎপাদনে সরকার সচেষ্ট হলে আগামী ৫ বছর পর ভারত তথা বিদেশ থেকে আর গরু আমদানী করতে হবে না।
এই আশা নরসিংদীসহ দেশের গো-সম্পদ বিশেষজ্ঞদের। ব্রয়লার ও কক মোরগের মতই গরুর গোশ্ত’র প্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়ে সহজলভ্য হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে গরুর গোশত খেতে সক্ষম হবে।
এক বেসরকারি পরিসংখান থেকে জানা গেছে, দেশে গোশতের চাহিদা কমবেশী সাড়ে ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ১.২৬ লাখ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উৎপাদিত গোশতের মধ্যে গরুর গোশতের উৎপাদন মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন। অথচ গরুর গোশতের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে কয়েগুণ বেশী। বেসরকারি হিসেব মতে দেশে বর্তমানে হালের বলদ, গাভী, বাছুর ও ষাড়সহ কমবেশী আড়াই কোটি গৃহপালিত গরু রয়েছে। এসব গরু থেকে প্রতি বছর কমবেশী ৪৭ লাখ গরু জবাই হয়। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে জবাই হয় ১৫ লাখ গরু। বাস্তবতা হচ্ছে এসব গরু বেশীরভাগই আমাদের দেশী গরু থেকে প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হয়। প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ গরু জবাই হয় তার তুলনায় গরুর উৎপাদনের হার খুবই কম। যার জন্যে বছর বছরই দেশের মানুষকে ভারতীয় গরু আমদানীর প্রতি তাকিয়ে থাকতে হয়। যদিও বিগত কয়েক বছর যাবত দেশী গরুর গোশত দিয়েই চাহিদা মিটানো হচ্ছে এবং দেশী গরুই বেশী কোরবানি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা দূরীকরণে সরকার দেশে গোশতবহুল জাতের গরু উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রজনন, উৎপাদন ও সংরক্ষণ উপযোগী ব্রাহমা জাতের গোশতবহুল গরু বাছাই করে তা আমদানী করে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, ব্রাহমা জাতের গরুর আদি আবাসস্থল ভারতীয় উপমহাদেশে। গুজরাট, নেলোর ও পীর নামে তিনটি উপজাতের সংমিশ্রনে এই ব্রাহমা জাতের গরুর জাত তৈরী করা হয়েছে। ১৮৭০ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ২৬৬টি ষাড় ও ২২টি গাভী নিয়ে জাত উন্নয়নের কাজ শুরু করে। অতপর জেনারেশনের পর জেনারেশন সংকরায়ণের মাধ্যমে প্রজননীয় পারফরমেন্স বিস্তারিত গবেষণা শেষে বর্তমান ব্রাহমা জাত উন্নয়ন করে।
এই জাতের গরু ১ হাজার কেজি বা এক মেট্রিক টন বা ২৫ মনেরও বেশী পর্যন্ত ওজন হতে পারে। নরসিংদীর প্রাণী সম্পদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে মোট ১৮০টি দেশী জাতের গাভীর সাথে ব্রাহমা জাতের বীজের প্রজনন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫০টি বাছুর জন্ম নিয়ে দ্রæত বেড়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও কমবেশী সমসংখ্যক বাছুর জন্ম নিয়েছে। বাছুরগুলো ৪/৫ মাস বয়সেই বেশ নাদুস নুদুস আকৃতি ধারণ করেছে। প্রাণী বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, প্রথম বার প্রজননকৃত বাছুরগুলো শতকরা ৫০ভাগ ব্রাহমা জাত নিয়ে জন্ম ও বড় হবে। এই বাছুরগুলো বড় হবার পর এদের মধ্য থেকে যে বাছুর জন্ম নিবে তার মধ্যে জাত রক্ষিত হবে ৭৫ ভাগ। এরপর এর পরবর্তী জেনারেশনে ৮০ভাগ এবং এর পরবর্তী জেনারেশনে ৮৫ভাগ জাত নিয়ে জন্ম ও বড় হবে ব্রাহমা জাতের গরু।
এভাবে পর পর ২/৩ জেনারেশন পর থেকেই ব্রাহমা জাতের গরু শতকরা ৮৫ ভাগ পর্যন্ত জাত সংরক্ষণ করবে। অর্থাৎ আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে দেশে ব্রাহমা জাতের গরু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এসব ব্রাহমা জাতের গরু বড় হলে দেশে গরুর গোশত উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যাবে। গরুর খামারি তথা ব্রাহমা জাতের গরুর বাছুর পালনকারী কয়েকজন চাষি জানিয়েছে, ব্রাহমা জাতের গরু পালন খুবই সহজ। এদের রোগ বালাই খুবই কম। সরকারি ডাক্তারদের সঠিক নজরদারী, প্রয়োজনীয় খাবার ও সঠিক পরিচর্যা পেলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে গরু ও গরুর গোশতের সংকট দুরীভূত হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।