পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যত আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপর নির্ভর করছে। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধি দলের দাবী সরকার না মানলেও যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষনা দিয়েছে বিরোধীদল, এ কারণে নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভ‚মিকাই নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও বিরোধীদলের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে ক্ষমতাসীনদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও একই রকম গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার কথা বলছে বর্তমান সরকার। ঘোষিত তফসিল অনুসারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাইলফলক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে শুধু বিরোধিদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সারাদেশে বিরোধিদলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, মামলাবাজির যে তান্ডব দেখা যাচ্ছে, এখনি তা বন্ধ না হলে সরকারের সদিচ্ছা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনাও নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।
গায়েবি মামলায় বিরোধি দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী অভিযুক্ত ও আটক হওয়ার অনেক আগে থেকেই গুম-খুন, বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকান্ডসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার কোনো কোনোটা গণমাধ্যম ও বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রমানীতও হয়েছে। এক পর্যায়ে বিনা ওয়ারেন্টে ও সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। নারায়নগঞ্জে চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও ৭খুনের ঘটনার পর কিছুদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকে অভিযান ও অপরাধমূলক তৎপরতা কিছুটা কমে আসলেও তা কখনো বন্ধ হয়নি। আইনের পোশাক পরেই বেপরোয়া বেআইনী ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ডে জড়িত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্য। অপহরণ, গুম-খুনের যে সব ঘটনা ঘটছে তার একটা বড় অংশের ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। গতমাসে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার সিলেট মহাসড়কে একসঙ্গে চার যুবকের অপহরণ ও গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পরও নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকেই অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশি নির্মমতার সর্বসাম্প্রতিক শিকার নরসিংদীর শিবপুরের পরিবহণ শ্রমিক আতিকুর রহমান। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, শিবপুর থানার একজন উপপরিদশর্কের নেতৃত্বে চার পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে অভিযান চালিয়ে ১১ নভেম্বর গ্রামের বাড়ি লালপুর থেকে আতিকুরকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর অটোরিক্সা চুরির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করতে পুলিশ অকথ্য নির্যাতন চার্লিয়েছে বলে আতিকুরের বাবা আব্দুল হান্নান ভ’ঁইয়া অভিযোগ করেছেন। গ্রেফতারের পরদিন আদালতে হাজির না করে থানা হাজতে নির্যাতন, গরম পানি দিয়ে শরীর ঝলসে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ১৪ নভেম্বর রাতে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আতিকুরের ডানপায়ে গুলি করে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে অত:পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা যায়।
যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই গুম-খুন, অপহরণ, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের সদম্ভ বিচরণের অভিযোগ রয়েছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু করতে না পারলেও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় এবং সাধারণ অপরাধে অভিযুক্ত আতিকুরের মত যুবককে চরম নিষ্ঠুরতার শিকারে পরিনত করা হয়েছে। আটক হওয়ার পর গরম পানিতে শরীর দগ্ধ হওয়ার পর বন্দুবযুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অবিশ্বাস্য গল্পও নাকি শুনিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে, অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। আতিকুরকে আদালতে সোর্পদ করে রিমান্ড বা জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন চাওয়ার আগেই থানা হাজতে নির্যাতন, গরম পানিতে শরীর ঝলসে দেয়া এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত জনগনের টাকায় বেতনভুক পুলিশ সদস্য যদি আইনগত বিধিবিধান লঙ্ঘন করে জনগনের টাকায় কেনা অস্ত্র ও ক্ষমতার এমন বেআইনী ব্যবহারে লিপ্ত হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এমনিতেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগনের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্যের গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এমনকি আন্তর্জাতিভাবেও প্রশ্ন উঠেছে। দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই নয়, জননিরাপত্তা, আইনের শাসন এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে পুলিশ সদস্যদেরকে বেআইনী কার্যকলাপ থেকে কঠোরভাবে নিবৃত্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি পেশাদার অপরাধী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরাধ যত বড়ই হোক, পুলিশ যদি নির্যাতক-বিচারকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়, সেখানে কোনো আইনের শাসন থাকে না। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে নির্মম নির্যাতনের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।