পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাচ্ছে এবারের জাতীয় নির্বাচন। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কখনোই ইতিবাচক অবস্থানে ছিল না। এর কারণ ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ফলে অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা নিয়ে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে এবং সেসব নির্বাচন হতে দেয়া হয়নি।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া কাম্য। কারণ এবারের নির্বাচন সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া নিয়ে এমনিতেই নানা মহলে শঙ্কা কাজ করছে। এর কারণ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই অভিযোগ উঠেছে, তারা তাদের মতো করে প্রশাসন সাজিয়েছে এবং দলীয়করণ করেছে। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়া নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এ সন্দেহ দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমেই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। জনগণই রাজনৈতিক ক্ষমতার মালিক-মোক্তার। যারা ক্ষমতাসীন হলেন জনগণের সম্মতি নিয়েই, ক্ষমতাসীন হলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ওই সময় অতিক্রান্ত হলে জনগণের কাছেই ফেরত যেতে হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই নির্ধারণ করে, কারা ক্ষমতাসীন হবেন সেই সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তাই বলা হয়, সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য করা। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা জাতীয় সংসদ (আমাদের ক্ষেত্রে) সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। এ কথা সব সময় স্মরণযোগ্য। নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ব্যবস্থাধীনে নির্বাচন হলে সবার জন্য লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সহজ।
প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে নির্বাচন কমিশনের সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক। দুঃখের বিষয়, নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত এ ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এমন কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত নয়, যাতে মানুষের মনে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাদের উচিত কথার চেয়ে কাজে বেশি মনোযোগ দেয়া। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা যথাযথভাবে নেয়া।
তাদের মনে রাখতে হবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি তা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে না পারেন, তবে তারা যেমন ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হবেন, তেমনি দেশও গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। এর পুরো দায়িত্ব তাদের উপরই বর্তাবে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে কালবিলম্ব না করে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাকে দেয়া সাংবিধানিক ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শুধু একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট নয়, যদিও তা অপরিহার্য। এর কয়েকটি কারণও রয়েছে- এক. নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক, দেশের প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ভোটদাতা এবং প্রায় ৬০ কি ৭০ হাজার ভোটকেন্দ্র তদারক করার ক্ষমতা এককভাবে নির্বাচন কমিশনের নেই। কমিশনকে দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহায়তা গ্রহণ করতেই হবে। সহায়তা গ্রহণ করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। প্রশাসনিক ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা গণতান্ত্রিক সমাজে স্বীকৃত; কিন্তু গত কয়েক বছরে, অনেকেই বলে থাকেন, সেই নিরপেক্ষতার ইমেজের বৃহৎ এক অংশ হারিয়ে গেছে। দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে এসব ব্যবস্থার একটি বৃহৎ অংশ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে; দুই. বাংলাদেশে নির্বাচন ভীষণভাবে প্রভাবিত হয় কালো টাকা এবং সন্ত্রাস দ্বারা; তিন. সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য চাই নিরপেক্ষতার এক আবহ। নিরপেক্ষতার আবহ তৈরি করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। চার. নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা সাজানো হয়েছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। একেকজনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। সার্বিক প্রয়োজনে এসব রাজনৈতিক মামলা উঠিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কোনো মামলা উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলে নির্বাচন পর্যন্ত তা স্থগিত রাখার কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনে সমতল ভূমি তৈরির দায় সর্বাগ্রে সরকারেরই। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগতভাবে হারজিতের প্রশ্নটি মুখ্য নয়। মুখ্য হলো গণতন্ত্রের জয়ের বিষয়টি। গণতন্ত্র জয়ী হলে বাকি সবকিছু এমনিতেই সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে।
লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।