Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

জাতীয় নির্বাচনে সবদলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার তাকিদ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বহুদিন ধরেই দিয়ে আসছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ দাবী করে আসছে। গত শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায়ও নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি উঠে আসে। বক্তারা বলেছেন, নির্বাচনের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা নিয়ে আশঙ্কার বিষয়টিও উঠে আসছে। নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম গত শুক্রবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। এর আগে গত আগস্ট মাসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়ার সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এতে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তখন কবিতা খানমসহ চার নির্বাচন কমিশনার দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, এটা ইসির অবস্থান নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্য নির্বাচনে অনিয়মকারিদের উস্কে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। অন্যদিকে মার্কিন থিংক ট্যাংক মন্তব্য করেছে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে, এমন কিছু বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। দেখা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা শঙ্কা প্রকাশ করছে, যা কোনোভাবেই স্বস্তির বিষয় নয়।
এবারের জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাচ্ছে। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ কখনোই ইতিবাচক অবস্থানে ছিল না। এর কারণ ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ফলে অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা নিয়ে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে এবং সেসব নির্বাচন হতে দেয়া হয়নি। এবার যেহেতু বিরোধী দলগুলোর দাবী উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবং বিরোধীদলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, তাই এ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করা ক্ষমতাসীন দলের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জের তেমিন নির্বাচন কমিশনের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। এ প্রেক্ষিতে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কাবোধ করেন, তবে সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। এটা নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা এবং সক্ষমতার অভাবই প্রকাশ করে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া কাম্য। তা না করে নির্বাচন কমিশনের কেউ কেউ যদি নির্বাচনের আগেই নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করা সম্ভব না অথবা নির্বাচনে অনিয়ম হবে না এমন গ্যারান্টি দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন, তবে তাদের প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দল তো বটেই সাধারণ ভোটারদেরও আস্থা রাখার কোনো কারণ নেই। অথচ নির্বাচন কমিশনের বলা উচিত নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য তাদের শতভাগ চেষ্টা রয়েছে। এবারের নির্বাচন সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া নিয়ে এমনিতেই নানা মহলে শঙ্কা কাজ করছে। এর কারণ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই অভিযোগ উঠেছে, সে তার মতো করে প্রশাসন সাজিয়েছে এবং দলীয়করণ করেছে। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়া নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এ সন্দেহ দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে নির্বাচন কমিশনের সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক। আমরা দেখছি, নির্বাচন কমিশন প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে নিরবতা অবলম্বন করে যাচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলার এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কমিশনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছার অভাবই প্রকাশ পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা, তাতে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী মাঠকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সমতল করার পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে কমিশনকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার কথা। দুঃখের বিষয়, নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত এ ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এমন কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত নয়, যাতে মানুষের মনে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাদের উচিত কথার চেয়ে কাজে বেশি মনোযোগ দেয়া। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা যথাযথভাবে নেয়া। তাদের মনে রাখতে হবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি তা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে না পারেন, তবে তারা যেমন ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হবেন, তেমনি দেশও গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। এর পুরো দায়িত্ব তাদের উপরই বর্তাবে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে কালবিলম্ব না করে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাকে দেয়া সাংবিধানিক ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন