নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘প্লিজ, তাইজুলের জন্য একটি উইকেট রেখো!’
ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ প্রহরে এক ভক্তের আকুতি। সেই মিনতিটি যে মিরাজের প্রতি ছিলো সেটি বলে দিতে হয় না। আগের ওভারেই এক বলের ব্যবধানে এই স্পিন অলরাউন্ডার ফিরিয়েছেন গলার কাঁটা হয়ে থাকা ব্রেন্ডন টেলর আর ব্রেন্ডন মাভুতাকে। ইনিংসে চলছে ১০৬তম ওভারের খেলা। একটি বিরল মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে বল হাতে তাইজুল। তার ঘূর্ণিপাকে পড়ে নীচু হয়ে আসা ওভারের তৃতীয় বলটি ঠেকাতে চেয়েছিলেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান চাকাভা। তার চেয়েও নীচু হয়ে বল তালুবন্দী করেন শর্ট লেগে দাঁড়ানো মুমিনুল হক। এতটাই নীচু আর অস্পষ্ট ছিল ক্যাচটি যা নির্ণয় করতে থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নিতে হয়েছে কুমার ধর্মসেনার। তাতে উল্লাস থামেনি বাংলাদেশের। তাইজুল পৌঁছে যান কাক্সিক্ষত সেই লক্ষ্যে, সিলেটের দুই ইনিংসের পর মিরপুরেও পেয়ে যান আরেকটি ৫ উইকেট। সেই সঙ্গে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেটের মাইলস্টোন ছুঁলেন এই স্পিনার। মজার ব্যপার হলো, তিনজনই বাঁহাতি!
২০০৫ সালে এই কীর্তি প্রথম গড়েছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৪৫ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ঢাকায় পরের টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৯৫ রানে ৭ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানে নিয়েছিলেন ৫টি। তিন বছর পর এনামুলের কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। ২০০৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টেই বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। বøুমফন্টেইনে ১৩০ রানে ৫টি ও সেঞ্চুরিয়নে ৯৯ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। পরের মাসে নিজের পরের টেস্টে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭০ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এবার এনামুল-সাকিবের পাশে বসলেন তাইজুল।
গতকাল হ্যামিলটন মাসাকাদজার উইকেট নিয়ে শুরু তাইজুলের আক্রমণ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ¯িøপে তালুবন্দি হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। আজও তার হাত ধরে আসে প্রথম সাফল্য। নাইটওয়াচম্যান ডোনাল্ড ত্রিরিপানোকে ¯িøপে মিরাজের তালুবন্দি করান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর তাইজুল উইকেটে থিতু হতে দেননি শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজাকে। দুজনই তার ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন। জিম্বাবুয়ের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন এ বাঁহাতি। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান চাকাভা শর্ট লেগে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। চাকাভার উইকেট নিয়ে তাইজুল পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ৫ উইকেট। এর আগে সিলেটে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে ৬টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সি বাঁহাতি স্পিনার। তবে সাকিবের কীর্তিটা আলাদা দুটি দলের বিপক্ষে হলেও, তাইজুল গড়েছেন একই দলের বিপক্ষে (জিম্বাবুয়ে)।
এই টালিতে বিশ্ব রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ডানহাতি পেসার চার্লি টার্নারের। ১৮৮৮ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা ছয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন টার্নার। সবগুলোই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। টানা পাঁচ ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে ইংল্যান্ডের টম রিচার্ডসন, স্যার অ্যালেক বেডসার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেন শিলিংফোর্ডের। এছাড়া টানা চার ইনিংসে এমন অর্জন আছে ১৩ জনের।
এবার তাইজুলের সামনে সুযোগ থাকছে সাকিবের সঙ্গে আরেকটি কীর্তিতে ভাগ বসানোর। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে চারজনের। প্রথমবার এক টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। সেই ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন এই স্পিনার। এরপর টেস্ট ক্রিকেটে একই কীর্তি গড়েছেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে ১১ উইকেট নেন তাইজুল (৬, ৫)।
এক টেস্টে ১০ উইকেট চার জন নিলেও সাকিব আল হাসানের সেই কীর্তি আছে দুই বার। প্রথমবার ২০১৪ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ১০ উইকেট। আর গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন স্মরণীয় এক জয়। এই টেস্টের শেষ ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়বেন ২১তম টেস্টে ৮৫ উইকেট নেয়া তাইজুল।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ২য় টেস্ট ৩য় দিন
টস : বাংলাদেশ, শেরে বাংলা স্টেডিয়াম
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৫২২/৭ ডিক্লে.
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ১ম দিন শেষে ২৫/১ (চারি ১০*; তাইজুল ১/৫)
রান বল ৪ ৬
মাসাকাদজা ক মিরাজ ব তাইজুল ১৪ ৪৪ ২ ০
চারি ক মিরাজ ব তাইজুল ৫৩ ১২৮ ৬ ২
তিরিপানো ক মিরাজ ব তাইজুল ৮ ৪৬ ১ ০
টেলর ক তাইজুল ব মিরাজ ১১০ ১৯৪ ১০ ০
উইলিয়ামস ব তাইজুল ১১ ২৮ ১ ০
রাজা ব তাইজুল ০ ১২ ০ ০
মুর এলবিডবিøউ ব আরিফুল ৮৩ ১১৪ ১২ ১
চাকাভা ক মুমিনুল ব তাইজুল ১০ ৪২ ১ ০
মাভুতা ক আরিফুল ব মিরাজ ০ ২ ০ ০
জার্ভিস অপরাজিত ৯ ২৩ ০ ০
চাতারা অনুপস্থিত - - - -
অতিরিক্ত (বা ৫, লেবা ১) ৬
মোট (১০৫.৩ ওভার, অলআউট) ৩০৪
উইকেট পতন : ১-২০ (মাসাকাদজা), ২-৪০ (তিরিপানো), ৩-৯৬ (চারি), ৪-১২৯ (উইলিয়ামস), ৫-১৩১ (রাজা), ৬-২৭০ (মুর), ৭-২৯০ (টেলর), ৮-২৯০ (মাভুতা), ৯-৩০৪ (চাকাভা)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ২১-৮-৫৮-০, খালেদ ১৮-৭-৪৮-০, তাইজুল ৪০.৩-১০-১০৭-৫, মিরাজ ২০-৩-৬১-৩, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১৪-০, আরিফুল ৪-২-১০-১। *তৃতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।