পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের পোশাক খাতের অবস্থা ভালোর দিকে। এটা দেশের জন্য খুবই ইতিবাচক। অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য পোশাক খাতের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই বলা চলে, এ খাতের ভ‚মিকায়ই মুখ্য। নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে আমাদের পোশাক খাতকে এগুতে হচ্ছে। একটা সময় ছিল বিশ্বের বাঘা বাঘা কোম্পানি আমাদের দরজায় ভিড় করতো। কিন্তু নানামুখী সমস্যার আবর্তে পড়ে তা ধরে রাখতে আমরা অনেকাংশে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। মাঝে কয়েক বছর পোশাক খাতের অবস্থান প্রায় তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে বাস্তমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সে খাদের কিনারা থেকে আমরা আবার ফিরে এসেছি। আশার কথা হচ্ছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ায় মার্কিন ব্যবসায়ীরা আমাদের দেশে ভিড় করছে। চীনের বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে পোশাকের অর্ডার দিচ্ছে। অবশ্য এর আগেও বৈশ্বিক নানামুখী সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের দেশে ভিড় করছিল, কিন্তু আমরা তখন তাদের সবাইকে ধরে রাখতে পারিনি। এবার কি আমরা পারবো অনুক‚ল পরিবেশ বজায় রাখতে? পোশাক খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যে দেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে এবং সময় মতো পোশাক সরবরাহ করতে সক্ষম হবে সে দেশেই বড় বড় ক্রেতারা ছুটে আসবে। আামদের অনেক কারখানা এখন পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে উঠেছে। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যগত বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক ভালো। তাই বলা চলে, কর্মপরিবেশের উন্নতি ঘটায় সার্বিক পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো।
দেশের পোশাক খাতে গতবছর আয় করেছিল ৩ হাজার ৬ শ’ ৬৬ কোটি ডলার। আর এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯ শ’ কোটি ডলার, যার মধ্যে ইতোমধ্যে এসেছে ৮ শত ১৯ কোটি ডলার। নিট পোশাক থেকে এসেছে ৪ শ’ ২০ কোটি ৬৮ লাখ ডলার আর ওভেন থেকে এসেছে ৩ শ’ ৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। ওভেনে প্রবৃদ্ধির ধারা ১৭ শতাংশ এবং নিট পোশাকে ১২ শতাংশ। গত অর্থবছরের তিন মাসে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৭৬ শতাংশ। তার আগে প্রবৃদ্ধিতে ধস ছিল। তখন প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক শূন্য দুই শূন্য শতাংশ। আর এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৪.৬৬ শতাংশ। এ ধারা বর্তমানে বেড়েই চলেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৯ শত ৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি এবং বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। দেশের মোট পণ্য রফতানির ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে।
চীনের ব্যবসা এখন আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। নতুন নতুন অনেক ক্রেতা এখন বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। আর আগের পুরনো ক্রেতারাও তাদের ক্রয়াদেশ বাড়াচ্ছেন। পুরনো ক্রেতারা আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কার্যাদেশ বাড়াচ্ছে। আর এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের আয় বাড়তে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে আগে চীনের বাজার ছিল ২ হাজার ৭ শ’ ৩ কোটি টাকা। এখন তা কমে গেছে। আগে তাদের আয় ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এখন তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৯০ শতাংশ। দিন দিন এ পরিসংখ্যান আরো নিচের দিকে যাচ্ছে।
পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ালেও আমাদের চামড়া খাত এখন নিচের দিকে ধাবমান। সেখানে আয় কমে গেছে। গত তিন মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ২৬ কোটি ডলার মূল্যের। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তা ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। তাছাড়া পাটের বাজারও বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারেনি। সেখানেও ধস নেমেছে। প্রথম ৩ মাসে এ খাত থেকে এসেছে ২১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। তাছাড়া চিংড়ি মাছে আয় কমে গেছে। অর্থনীতির জটিল সমীকরণে দেখা যাচ্ছে, পোশাকসহ কয়েকটি খাতে আয় বাড়লেও আবার কিছু পণ্যে আমাদের আয় কমে যাচ্ছে। যেগুলোতে আয় কমছে তার সমস্যা এবং সংকট চিহ্নিতকরণ করা এবং সংকট নিরসনে ভ‚মিকা রাখতে পারলে এ অবস্থা থেকেও আমাদের বের হতে তেমন কোন বেগ পেতে হবে না। কৃষি অর্থনীতির অবস্থা ভালোর দিকে। গত অর্থবছরের চেয়ে এ খাতে এবার বেশি আয় হয়েছে। কৃষিতে আমরা যতটুকু আয় করেছি তার চেয়েও আরো অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের বাজার আমরা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি শুধু মাত্র অসাধুতার কারণে। যেখানে আমাদের কৃষিপণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ করার মতো। সেখানে দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের কৃষিপণ্যের ব্রান্ড এবং সুনাম আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হইনি। অনেক আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্য কম দেওয়ার দুর্নাম রয়েছে। যেখানে ৫ কেজির একটা প্যাকেটে অন্যান্য দেশের পণ্যে প্যাকেট ছাড়াই সঠিকভাবে ৫ কেজি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আমরা প্যাকেটসহ ৫ কেজি দিচ্ছি। তাছাড়া কৃষিপণ্যের প্যাকিজিং ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের চেয়ে মানহীন হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
একটা সময় দেশের পোশাক খাত থেকে বায়াররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তার কারণ, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ভালো ছিল না কারখানাগুলোতে। রানা প্লাজা ধসের পর দেশের কারখানাগুলোর মালিকরা নড়েচড়ে বসে। তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। অনেক কারখানাই এখন পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আরো কয়েক শত কারখানা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই সর্বোপরি বলতে গেলে তৈরি পোশাক নিয়ে যে আবহ এবং গতিশীলতা বিরাজ করছে তা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রাখতে হবে।
তবে আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়াও শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে যদি এ খাতের মালিকরা নজর না দেয় তাহলে তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এ খাতে। পোশাক মালিকরা সরকারের কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। আর বর্তমানে তাদের ব্যবসায় গতিপ্রবাহ ভালো। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে পিছপা হওয়া উচিৎ না। সামনে নির্বাচন। দেশ যে কোনো সময় উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু শত প্রতিক‚লতার মাঝেও যাতে তৈরি পোশাকের রফতানি সিডিউল কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য তৎপর থাকতে হবে। পোশাকের চালান নির্বিঘ্ন করতে যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থাও জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।