পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রফতানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। একক মাস হিসেবে এপ্রিলে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ (৪দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এনেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর অর্থবছরের হিসাবে ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রফতানিকারকরা। এ অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল) চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি। এদিকে রফতানিতে আগের মতোই পোশাকের আধিপত্য বজায় রয়েছে।
গতকাল প্রকাশিত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০ মাসের হিসাবে সার্বিক রফতানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ।
সূত্র মতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়। তিন মাস পার হলেও যুদ্ধ থামেনি। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে জ্বালানির দাম। জাহাজভাড়াসহ বিশ্ববাণিজ্যে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের রফতানিখাতে যুদ্ধের প্রভাবে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও তা হয়নি। মূলতঃ তৈরি পোশাক রফতানির উপর ভর করেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রফতানি আয়ে এই উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এতে খুশি রফতানিকারকরা। অর্থবছরের বাকি দুই মাসেও (মে ও জুন) এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা। এটি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে এবার রফতানি আয় ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রফতানি বাণিজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ।
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এপ্রিল মাসের এ আয় চতুর্থ সর্বোচ্চ; সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার।
এপ্রিল মাসে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রফতানি থেকে ৩১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। ১০ মাসের হিসাবে সার্বিক রফতানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে রফতানির লক্ষ্য ছিল ৩৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই ১০ মাসে আয় হয়েছিল ৩২ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট আয় হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
প্রকাশিত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রফতানিতে পোশাকের আধিপত্য বজায় রয়েছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ খাত থেকে আয় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এ ১০ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হিমায়িত মৎস্য রফতানি করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কৃষিপণ্যে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচার পণ্যে ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিটিক্যাল পণ্যে ৪৫ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া চামড়াজাত পণ্যে ৩২ দশমিক ৯৭, কুটির শিল্পে ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ, সিরামিক পণ্যে ৩৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে, গত কয়েক মাসের মতো রফতানিতে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে পাটখাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ পিছিয়ে আছে। পাট ও পাটজাত পণ্যখাত থেকে রফতানি হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।