Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে সুখবর

অর্থবছরের প্রথম মাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরী পোশাক রফতানিতে চলতি বছরের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে। নতুন (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে ৬৮৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা, যা দেশীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকার সমান। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৯৯ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি করে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রফতানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ওই সময়ের মধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তাতে বাজারটিতে পোশাক রফতানি ঘুরে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়। পরের বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। তবে করোনার থাবায় রফতানি নিম্নমুখী হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয় ২০২০ সালে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে রফতানি আবার বাড়তে থাকে। তবে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই বেশি কিনছেন মার্কিন নাগরিকেরা। সে কারণে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কিছুটা কমে গেছে বলে জানান বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত অর্থবছরের ন্যায় চলতি অর্থবছরেও ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে তৈরী পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ইনিকলাবকে বলেন, আমাদের তৈরী পোশাকের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। চলতি বছরের শুরু জুলাই মাসে এই বাজারে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৬৮৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৫৯৯ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আলোচিত সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও আমাদের পোশাক রফতানি ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন থেকে ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে এবং ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতি এ মুহূর্তে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং সরবরাহের ঘাটতি বিশ্ব পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেহেতু আমরা বিশ্ববাজারে কাজ করি, আমাদের শিল্পও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। গত দেড় বছরে সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, মালবাহী খরচ বেড়েছে ৫০০ শতাংশ, রঙ, রাসায়নিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ, ন্যূনতম মজুরি গত বছরের শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে এবং এর ফলে আমাদের গড় উৎপাদন গত ৫ বছরে খরচ বেড়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। একই সঙ্গে, উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা আমাদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় ৪৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে উৎপাদনশীলতা ৫৫ শতাংশ এবং তুরস্কে ৭০ শতাংশ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নির্মাতারা পণ্য এবং বাজারের অতিরিক্ত ঘনত্ব, বিশেষ বাজারে অনুপস্থিতি, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের উন্নতি ইত্যাদির মতো দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা খরচ কমিয়ে এবং আমাদের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক থাকার চেষ্টা করছি।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য জার্মানিতে আরএমজি রফতানি, বছরে ২ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৫১৭ মিলিয়নে পৌঁছেছে। স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ইতালি এবং পোল্যান্ডের মতো প্রধান দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি যথাক্রমে ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া লন্ডন এবং কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বাজার দু’টিতে ৩৬৬ দশমিক ৪২ মিলিয়ন এবং ১১২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে, অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বছরে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ৫৪৫ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি যথাক্রমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ৭১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ২২ দশমিক ২৭ বেড়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি হয়েছে ৫০১ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার ডলারের। ২০২১ সালের একই সময়ে পোশাক পণ্য রফতানি হয়েছিল ৩১৩ কোটি ১০ লাখ ৯ হাজার ডলারের। সে হিসেবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের একই সময়ে পোশাক পণ্য রফতানি বেড়েছে ১৮৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ডলারের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোশাক খাত

৩১ অক্টোবর, ২০২১
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ