Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিকল্প নাই

| প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সম্পাদক পরিষদ এবং দেশের সংবাদপত্র শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবীতে রাজপথে নেমে এসেছেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে একটি কালো আইন, ড্রাকোনিয়ান আইন, মানুষের বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করার আইন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষাপটে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে গত সোমবার সম্পাদক পরিষদের সদস্য দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকরেছেন। সাংবাদিক সমাজের নানা ইস্যুতে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর তরফ থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজপথে নানা ধরনের কর্মসূচি পালনকরলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী ধারা সমুহ বাতিলের দাবীতে আয়োজিত সম্পাদক পরিষদের এই মানব বন্ধন কর্মসূচি গত তিন দশকের মধ্যে নজিরবিহীন। গণতান্ত্রিক চেতনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মত মৌলিক স্বার্থে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অবস্থানগত মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে কালো আইনের বিরুদ্ধে সম্পাদক পরিষদ সদস্যদের এক কাতারে সামিল হওয়ার ঘটনা ও খুবই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চুড়ান্ত অনুমোদনের আগে সম্পাদক পরিষদ এ আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবী জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে সরকারের ৩জন মন্ত্রী সম্পাদক পরিষদের সাথে ওয়াদাবদ্ধ থাকলেও তারা কাজের কাজ কিছুই করেননি। জনমত, গণমাধ্যমকর্মী ও সম্পাদক পরিষদের দাবী তোয়াক্কা না করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নিবর্তন মূলক ধারাগুলো রেখেই আইনটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবারনিরাপত্তা চলমানবিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও অবাধ তথ্য প্রবাহের এই সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার মত ঘটনা বিশ্বের আর কোথাও নেই। ইতিপূর্বে আইসিটি অ্যাক্টের বেশ কয়েকটি ধারাকে মতপ্রকাশ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠলে সরকার এই ধারা বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অতি কৌশলে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সেই সাথে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের আদলে ৩২ ধারাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারার সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তার চাইতে নাগরিকের মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরকারী বাহিনীর খড়গ হিসেবে গ্রহণ কর াহয়েছে। সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক সমাজের সাথে মন্ত্রীদের ওয়াদার বরখেলাফ করে একটি নির্বতনমূলক আইন পাস করে গণমাধ্যম, জনমত ও নাগরিক সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে সরকারের বেপরোয়া মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা সরকারের এহেন ভ‚মিকার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হওয়ার পরও সম্পাদক পরিষদসহ দেশের সাংবাদিক সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে আইনে পরিবর্তনের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। গত সোমবার মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদক পরিষদের সাথে তাদের প্রতিশ্রতির কথা তুলে ধরার পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, ‘আইন তো পাস হয়ে গেছে, এখন কী করার আছে? প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য হতাশাজনক। সব মহলের উদ্বেগ এবং সংসদে স্বতন্ত্র ও বিরোধীদলের সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করেই আইনটি পাস হওয়ার পর সম্পাদক পরিষদ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রতিবাদী মানব বন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। সরকারের সংশ্লিষ্টমন্ত্রীদের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার জন্য কিছুই করা হয়নি। নির্বতনমূলক ধারাগুলো অক্ষুন্ন রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর সম্পাদক পরিষদ ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিবাদী অবস্থানের মধ্যেই সোমবার মন্ত্রীপরিষদের সভায় বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত জাতীয় সম্প্রচার আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত, প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালায়ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী ধারা সংযোজনের অভিযোগ তুলেছে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীরা। প্রস্তাবিত সম্প্রচার আইনে যা’ই থাকুক, সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এই আইন চুড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। তবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারা পরিবর্তন। আইন পাস হলেও তা এখনো গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি। সংবাদপত্র, গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে সরকার আন্তরিক হলে সংসদের শেষ অধিবেশনেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন সম্ভব। গণমাধ্যম, বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা এবং গণমাধ্যমের কম্পিউটার ও তথ্যব্যবস্থাপনায় সরকারী বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ দেশের গণমাধ্যমকর্মী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ মেনে নেবেনা। এটি শেষ পর্যন্ত কালো আইন হিসেবেই বিবেচিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা আইন


আরও
আরও পড়ুন