পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের মামলা, হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের নাগরিক সমাজের ৫১ জন। গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল রোববার এই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত লেখক মুশতাক আহমেদ দীর্ঘ ২৯৫ দিন কারাবাসের পর ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে’ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারাগারে আটক অবস্থায় লেখক মুশতাকের এই মৃত্যুকে আমরা ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড’ বলে মনে করি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের’ প্রতিবাদে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সভা-সামাবেশ ও আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মশাল মিছিলে পুলিশ ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ চালায়। এসময় কমপক্ষে ৩০ জন আন্দোলনরত অধিকার কর্মীকে আহত এবং ৭ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে, খুলনার পাটকল শ্রমিক নেতা ও শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন এই আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করলে খুলনার ডিবি পুলিশের ৩০-৪০ জনের একটি দল রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
২৭ ফেব্রুয়ারি রুহুল আমিনের নামে অন্যায্য, অসমীচীন ও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয় এবং খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ডে দেন।
এছাড়া ঢাকার শাহবাগে মশাল মিছিল থেকে আটককৃত সাতজন শিক্ষার্থীর নামে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩০৭/৩৫৩/৪২৭/১০৯ ধারাসমূহে অভিযোগ এনে একটি নিবর্তনমূলক মামলা শাহবাগ থানায় করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা সাধারণ নাগরিকবৃন্দ অত্যন্তক্ষুব্ধ। আমরা এই মামলা হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
৫১ নাগরিক বিবৃতিতে বলেন, ঔপনিবেশিক শাসন আমলের অপরাধ আইন দন্ডবিধি-১৮৬০ ও নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো দানবীয় আইন ব্যবহার করবার পরিপ্রেক্ষিতে, নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা তীব্র প্রতিবাদের সাথে পাঁচটি দাবি পেশ করছে। এগুলো হলো- মুশতাক হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার সংগঠন রুহুল আমিনসহ ৭জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্যায্য মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও বন্দিদের মুক্তি, শাহবাগে আয়োজিত মশাল মিছিলে বর্বরোচিত পুলিশি হামলায় আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং জাতিসংঘ প্রণীত ‘আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বল প্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহার মূলনীতি’ এর আলোকে হামলাকারীদের বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য উদ্ধারের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বন্ধ এবং চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করবার জন্য যাদের নামে অন্যায্য- অসমীচীন ও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, আটক কার্টুনিস্ট কিশোরের উন্নত চিকিৎসা জন্য অবিলম্বে জামিনসহ, যারা তাকে হেফাজতে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর আলোকে বিচার এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রেখে ধীরে ধীরে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবার যে অভিযোগ নাগরিকদের থেকে উঠেছে; সে বিষয়ে যথাযথ, প্রয়োজনীয়, গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন- সর্বোপরি অধিকারভিত্তিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে সই করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বেলার প্রধান নির্বাহী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী শহিদুল আহমেদ, শিক্ষক ও অধিকার কর্মী সি আর আবরার, নারীবাদী পরিবেশবাদী খুশি কবীর, নারী অধিকার আন্দোলন কর্মী ফরিদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন খন্দকার, গবেষক ও সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক মাহা মির্জা, সোয়াস, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক গবেষণা সহযোগী স্বপন আদনান, শিক্ষক ও গেøাবাল সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ, নিউ ইয়র্কের সহ-সভাপতি আজফার হোসেন, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দীনা সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌভিক রেজা, আইনজীবী আদিলুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, কাজলী সেহরীন ইসলাম, লেখক ওমর তারেক চৌধুরী, আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, অধিকার কর্মী নাসিরুদ্দিন এলান, মানবাধিবার কর্মী নুর খান, লেযলি ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক নাফিসা তানজীম, ল্যাঙ্কাসটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদাফ নূর, কিউরেটর তাঞ্জিম ওয়াহাব, আলোকচিত্রী খন্দকার তানভীর মুরাদ, লেখক বর্নালি সাহা, সাংস্কৃতিক সংগঠক বীথি ঘোষ, সাংস্কৃতিক সংগঠক অমল আকাশ, সাংস্কৃতিক সংগঠক রেবেকা নীলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্সা সাঞ্জানা সাজিদ, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস, আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান, লেখক অরূপ রাহী, অধিকার কর্মী শিরীন হক, মানবাধিকার কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, অধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, আন্দোলন কর্মী বাকী বিল্লাহ, আইনজীবী রুহি নাজ, মুক্তিফোরাম সংগঠক অনুপম দেবাশীষ রায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়েমা খাতুন, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক বিনা ডি কস্তা, গবেষক রোজীনা বেগম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।