Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবিলম্বে অবৈধ বিলবোর্ড সরাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজধানী এখন অবৈধ বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। বিলবোর্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যেদিকে চোখ যায়, কেবল বিলবোর্ড আর বিলবোর্ড। এটি যে একটি রাজধানী তা বোঝার কোনো উপায় নেই। এমন রাজধানী বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। অথচ সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি এবং শীঘ্রই উন্নত দেশে পরিণত হবো। একটি উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী কেমন হতে হয়, সে সম্পর্কে বোধকরি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের ধারণা নেই। তা নাহলে রাজধানী কীভাবে অবৈধ বিলবোর্ডের জঞ্জালে পরিণত হয়? বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এসব বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনরাই যত্রতত্র ঝুলিয়ে দিয়েছে। তার উপর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিলবোর্ড তো রয়েছেই। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড নেই। এতে যে রাজধানীর যেটুকু সৌন্দর্য রয়েছে, তা ঢেকে দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে, এ নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যাথা নেই। বলা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাজধানীর সৌন্দর্য নিয়ে এক ধরনের ছিনিমিনি খেলছে। আমার ক্ষমতা আছে, তাই যেভাবে খুশি, যেখানে খুশি ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ঝুলিয়ে দিতে পারব, এমন মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে কারো কিছু করার নেই। দুই সিটি করপোরেশনের আচরণেও মনে হচ্ছে, তাদের কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার নেই।

বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা বেশ কয়েকবার শীর্ষ স্থানে ছিল। এখন কিছুটা উন্নতি করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসোযোগ্য শহর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবার মান, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো-এই পাঁচটি মূল বিষয় এবং এর অধীনে ৩০টি সূচক ধরে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ১০০ পয়েন্টের সূচকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পয়েন্ট পেয়ে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। অবশ্য ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য তা বোঝার জন্য কোনো জরিপের প্রয়োজন পড়ে না। একজন সাধারণ মানুষও তা বোঝে। এক যানজটের কারণে প্রতিদিন মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। বছরে এর ক্ষতির পরিমাণও আকাশচুম্বী। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্যে দেখা গেছে, যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ বিপুল ক্ষতি নিয়েই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি বলে বলা হচ্ছে। অথচ এর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ন্যূনতম পর্যায়ে নেই। বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে থাকা এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেগুলোর রাজধানীর চিত্র ঢাকার চেয়ে সুশৃঙ্খল, পরিপাটি ও বাসযোগ্য। মেট্রোপলিটান সিটি বা মাদার সিটি বলতে যা বোঝায়, ঢাকায় তার বৈশিষ্ট্য থাকলেও, সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত নয়। একটি মেট্রোপলিটান সিটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া। সুদীর্ঘকাল ধরে ঢাকা মেগা বা মাদার সিটি হিসেবে পরিচিতি পেলেও এর গঠন ও বিন্যাস পরিকল্পিতভাবে হয়নি, গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগও খুব একটা দেখা যায় না। এখনও অপরিকল্পিতভাবে এর বিস্তৃতি ঘটছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা কাক্সিক্ষত মানের নয়। তার উপর চলছে, যেমন খুশি তেমন কর্মকাণ্ড। নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারের যে আগ্রাসন চলছে, তাতে ঢাকাকে কোনোভাবেই রাজধানী হিসেবে মনে হচ্ছে না। এগুলোর কারণে মানুষের দৃষ্টিও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যেটুকু সৌন্দর্য রয়েছে, তা ঢেকে দেয়া হয়েছে। এমনকি কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত যে গুলশান, সেখানেও বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বলা যায়, এসবের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা বা চেহারা মানুষকে দেখানোর এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। এগুলো সরানোর মতো সাহস কারো আছে বলে মনে হয় না। যে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নগরকে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা, সেই সিটি করপোরেশনও যেন নীরবে এই অরাজকতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে গিনেস বুকে স্থান পেয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অথচ সেই সিটি করপোরেশনের এলাকায়ই এখন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে রয়েছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন লাগানোর আইন ও নিয়ম থাকলেও তা কেউ তোয়াক্কা করছে না। আইনে বলা আছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা দেয়াল লিখন করলে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা ১৫ থেকে ৩০ দিন জেল দেয়া যাবে। দেখা যাচ্ছে, আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নেই। যে সিটি করপোরেশনের এসব বিষয় দেখার কথা, তারাই হাত গুটিয়ে বসে আছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ বলেই কি আইনের এই ব্যত্যয় ঘটছে?

যে কোনো শহরে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন থাকতেই পারে। তবে সেগুলো নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকলে দেখতেও ভালো লাগে, নগরীর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে যেভাবে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলানো হচ্ছে, তাতে এর পুরো সৌন্দর্যই ঢেকে যাচ্ছে। এগুলো যদি এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা এবং সরানো না হয়, তাহলে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে রাজধানীর চেহারা কী হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। আমার মনে করি, রাজধানীতে নিয়ম লঙ্ঘন করে যেসব বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে। রাজধানীকে কোনোভাবেই এসবের জঞ্জালে পরিণত করা যাবে না। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে তার নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সচেতন করা উচিত। দুই সিটি করপোরেশনেরও দায়িত্ব রাজধানীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য তার নিয়মিত কাজ করে যাওয়া। কোন দলের কোন নেতার বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন তা না দেখে উচ্ছেদ অভিযান চালানো। যেখানেই অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ দেখা যাবে, সেখানেই অভিযান চালিয়ে তা সরাতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলবোর্ড

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন