যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মানুষের ৮ ঘন্টা ঘুমের সুপারিশ করেছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে প্রাপ্ত বয়স্কদের দু-তৃতীয়াংশই ঘুমের এ মেয়াদ পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ও স্নায়ু বিজ্ঞানী ম্যাথু ওয়াকারের মতে, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর চেয়েও বিপজ্জনক। কম ঘুমালে তা নারী ও পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াকার উল্লেখ করেন যে, যেসব পুরুষ রাতে ৫ ঘন্টা ঘুমায় তাদের অন্ডকোষ যারা রাতে ৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমায় তাদের চাইতে আকারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছোট হয়ে যায়। কম ঘুম ক্যান্সার, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, মেদবৃদ্ধি, হৃদযন্ত্র বন্ধ, আলঝেইমার রোগ ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
‘কেন আমরা ঘুমাই’ নামে ওয়াকারের একটি অডিও বুক আছে। সেটা নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং’বুক। ওয়াকার তাতে উল্লেখ করেছেনঃ ‘১৯ ঘন্টা না ঘুমানো কোনো ব্যক্তির অবস্থা দাঁড়ায় একজন মাতালের মতই। কোনো ব্যক্তি ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর তার ব্রেন অচল হতে শুরু করে। বোধবুদ্ধি সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য মানুষকে প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টারও বেশি সময় ঘুমাতে হবে। দশদিন যদি কেউ ৭ ঘন্টা ঘুমায় তাহলে তার ব্রেন সে রকম অকার্যকর হয়ে পড়বে যেমনটা কেউ যদি ২৪ ঘন্টা ঘুমহীনভাবে কাটায়।’
অতিরিক্ত এক বা দু’ঘন্টা ঘুম আপনার কাজ, স্বাস্থ্য, পরিবার, সম্পর্ক ও ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালো বনাম মহতের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণায়ক হতে পারে। এখানে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক পন্থার কথা বলা হল যা আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে ও অতিরিক্ত সময় ঘুম ফিরে পেতে সাহায্য করবেঃ
১, একটানা ঘুমের সময় বহাল রাখা :
নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ওয়াকার বলেন, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আপনার শরীরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য অন্যতম উত্তম পন্থা হচ্ছে বিছানায় যাওয়া এবং প্রতিদিন একই সময় জেগে ওঠা, তা রাতে আপনার ভালো ঘুম হোক আর না হোক।
ওয়াকার বলেন, আপনার শুতে যাবার সময়টি আপনি যে সময়ে ঘুমানোর চিন্তা করেছেন তার একঘন্টা আগে ফোনে সে সময়টি সেট করে রাখুন যাতে সময়টি এলে রিমাইন্ডার টোন বাজে। আরেকটি কার্যকর পন্থা হল ঘুম-পূর্ব একটি রুটিন গড়ে তোলা যা আপনার দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করবে।
উদাহরণ স্বরূপ, ঘুম-পূর্ব রুটিন সময়ে আমি পাঁচ মিনিট স্ট্রেচিং ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করি। তারপর বিছানায় শুয়ে একটি বই পড়ি এবং বইপড়া শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যাই।
ঘুম-পূর্ব সময়ে কী করলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় তা পরীক্ষা করে দেখুন।
২. ঘুমের জন্য অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি :
আমরা এখন অন্ধকারবিহীন সমাজে বাস করি। কিন্তু সন্ধ্যায় মেলাটোনিন নিঃসরণে সাহায্যের জন্য আমাদের অন্ধকার দরকার। মেলাটোনিন হচ্ছে সেই হরমোন যা আমাদের সুষ্ঠু ঘুমের সময় নির্ধারণ করে। নীল আলো আপনার ব্রেনকে বোকা বানাতে পারে এ চিন্তায় যে, এখনো দিনের বেলা যদিও তখন রাতের বেলা এবং আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করছেন।
ওয়াকার বলেনঃ ‘ এমনকি ৮ থেকে ১০ লাক্স ডিম লাইটের আভাসও দেখা গেছে মানুষের রাত্রিকালীন মেলাটোনিন নিঃসরণকে বিলম্বিত করেছে। মানুষ ঘুমাতে যাবার আগে পর্যন্ত যেখানে পর্যাপ্ত আলোয় আলোকিত যে লিভিং রুমে অবস্থান করে সেখানে আলো থাকে ২০০ লাক্স। মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ দিনের আলোর শক্তি সত্ত্বেও এই আলোর মাত্রা ব্রেনে ৫০ শতাংশ মেলাটোনিন-দমন মূলক প্রভাব ফেলতে পারে।’ (সূত্র ঃ কেন আমরা ঘুমাই)
ওয়াকারের পরামর্শঃ আপনার বাড়ির আলোর অর্ধেকের আলো কমিয়ে দিন এবং ঘুমাতে যাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে সকল ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বন্ধ করে দিন। এভাবে আপনি আপনার ঘুমের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবেন।
৩. শরীর ঠান্ডা রাখা :
ওয়াকারের মতে, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আমাদের শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস প্রয়োজন যা আমাদের মেলাটোনিন মাত্রাকে প্রভাবিত করে। যদি আপনি জেগেও ওঠেন, দেখেন যে আপনার হাত-পা দেহাবরণের বাইরে রয়েছে তাহলে সেটা এই লক্ষণ যে, আপনার শরীর ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আসল উত্তাপ যথেষ্ট কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আপনার শোবার ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
শরীরের মূল উত্তাপ হ্রাস ও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার আরেকটি পন্থা হচ্ছে বিছানায় যাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল।
ওয়াকার বলেনঃ ‘আপনি গোসল করলে তা আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ নিঃসরণে সাহায্য করে এবং উত্তাপ হ্রাস পায়। এর ফলে আপনার শরীরের অভ্যন্তরের মূল তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আপনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। শোয়ার আগে গরম পানিতে গোসল স্বাস্থ্যবান বয়স্কদের ঘুম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পরিমাণ গভীর করে।
৪. রাত ২টার পর ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার :
আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মস্তিষ্কে ঘুমের চাপ সৃষ্টির জন্য অ্য্যাডেনোসাইন নামে এক রাসায়নিকের সৃষ্টি হয় এবং আমরা বেশি সময় জেগে থাকলে ঘুমের প্রয়োজন বোধ করি। ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর অ্যাডেনোসাইনের কারণে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট ক্লান্ত বোধ করি। ক্যাফেইনের একটি ডোজের পর, যেমন এক কাপ কফি থেকে, ক্যাফেইন ব্রেনে অ্যাডেনোসাইন গ্রহণের একটি রিসেপ্টর বন্ধ করে দেয় ও আবরণে ঢেকে ফেলে।
১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর আপনার ব্রেন এ চিন্তায় বোকনা হয়ে থাকে যে, সে ১৬ ঘন্টা জেগে নেই, তা সে যতই ঝিমাক আর ক্লান্তি বোধ করুক না কেন। এটা এ কারণে , ক্যাফেইন অ্যাডেনোসাইনের ব্রেন সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়েছে, সাথে সাথে ব্রেনে ঘুমের চাপ নির্দেশককেও নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।
ক্যাফেইন যতক্ষণ অ্যাডেনোসাইনকে বন্ধ করে রাখবে, আপনার দেহব্যবস্থায় অ্যাডেনোসাইনের বিশাল পরিমাণ ঘুমের রসায়ন তৈরি হয়। যখন আপনার শরীরের ব্যবস্থা ক্যাফেইন থেকে মুক্ত হয় তখন আপনি শুধু ক্যাফেইন গ্রহণের পূর্বের ঘুমেই ফিরে আসেন না, আপনি অতিরিক্ত ঘুমের চাপেও আবিষ্ট হন যা তৈরি করে অ্যাডেনোসাইন। এটাই হচ্ছে ‘ক্যাফেইন ক্র্যাশ’ যে অভিজ্ঞতা আগেও লাভ করেছেন। অন্য যে কোনো বদ অভ্যাসের মত আপনি আপনার খারাপ অভ্যাসগুলোকে আরো জোরদার করতে নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য আরেক ডোজ ক্যাফেইন নিতে পারেন।
ক্যাফেইনের গড় স্থিতি শক্তি ৫ থেকে ৭ ঘন্টা। সে কারণেই ওয়াকার রাত ২টার পর ক্যাফেইন খাওয়া পরিহার করতে বলেছেন। ‘আমরা কেন ঘুমাই’-তে ওয়াকার পরামর্শ দিয়েছেন যে, সন্ধ্যার পর মদ, এমনকি ওয়াইন বা হুইস্কি খাওয়া ভালো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালকোহল মধ্যরাতে ঘুমের ব্যাঘাতের বহুমুখী কারণ সৃষ্টি করে। সে সাথে আমাদের আরইএম ও স্বপ্নময় ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৫.জাগার পর বিছানায় থাকবেন না :
আপনি জেগে ওঠার সময় নির্ধারণ করে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ সে সময়ের এক বা দু’ ঘন্টা আগে জেগে গেলেন। আপনি জানেন যে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আপনি না ঘুমান তাহলে অতিরিক্তি সময়ের ঘুমটাও হারাবেন। কিন্তু কিছু কারণে আপনি দুশ্চিন্তায় আছেন। তাই আপনি ঘুমাতে পারছেন না বা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, ঘুমাবেন নাকি উঠে দিনের কাজ শুরু করবেন। আমাদের ব্রেন অত্যন্ত সতর্ক। তাই আমরা যদি বিছানায় সকালের অতিরিক্ত সময় কাটাই তখন ব্রেন আমাদেরকে জেগে থাকতেই সহায়তা করবে, ঘুমাতে নয়।
ওয়াকার বলেন, এই সমস্যা সমাধানের শ্রেষ্ঠ উপায় হল আরেকটি মৃদু আলোকিত রুমে চলে যাওয়া উচিত এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত বই পড়ুন, ঘুম এলেই বিছানায় ফিরে আসুন।
ওয়াকার মেডিটেশন বা ধ্যানকে দ্রুত ঘুমানোর একটা পন্থা বলে মনে করেন, বিশেষ করে দীর্ঘ বিমানযাত্রা ও তার ফলে সৃষ্প জেটল্যাগের ঘটনায়। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করে ও নার্ভাস সিস্টেমের সাথে লড়াই দুর্বল করে যা ইন্সমোনিয়ার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ঘুমানো বিজ্ঞানের একটি আর্ট। এসব বৈজ্ঞানিক পন্থা আপনাকে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করবে, তবে তা পাথরে খোদিত নির্দেশ নয়। আর সব কিছুর মত যা আপনার জীবনশৈলি ও পরিস্থিতির জন্য ভালো ও উপকারী আপনি তা পরীক্ষা করুন। তবে প্রধান বিষয় হচ্ছে সুস্থ, উৎপাদনশীল ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য ঘুম জরুরি। তাই আপনার জীবনে ঘুমকে গুরুত্ব দিন।
*নিবন্ধকার মায়ো ওশিন মায়ো ওশিন ডটকমে লিখে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।