নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’ তার বিখ্যাত এই উক্তিটিই সত্য প্রমাণীত হলো। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে তাদেরকে হারানো কঠিন হলেও তা সহজ প্রমাণ করে অবশেষে কিউই দুর্গ ভাঙলেন ইবাদত হোসেন-তাসকিন আহমেদরা। বড় জয় তুলে নিয়ে এপিজে আব্দুল কালামের ঐতিহাসিক উক্তি ফের যেন মনে করলেন, বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। কারণ মঙ্গলবার রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি। গতকাল ম্যাচ শেষে তা অপকটে স্বীকারও করলেন মুমিনুল। ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে লিড মাত্র ১৭ রানের, সাজঘরে ফিরে গেছেন প্রথম পাঁচ ব্যাটার। সচরাচর টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের এমন অবস্থায় দেখে অভ্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু ২০২২ সালের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ঠিক এ অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল মুমিনুল হকের দল। যা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য রীতিমতো স্বপ্নের মতো ঘটনা। তবু স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবে রূপ দিতে তুলে নিতে হতো নিউজিল্যান্ডের বাকি পাঁচ উইকেট। তা পুরোপুরি পেশাদারিত্বের সঙ্গেই করেছেন টাইগার বোলাররা। যে কারণে কাল শেষদিন মাত্র ২২ রান তুলতেই বাকি ৫ উইকেট হারায় কিউইরা! এরপর স্বাগতিকদের দেওয়া ৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। যা এনে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা এক জয়। আর এ জয়ের অপেক্ষা কিংবা দুশ্চিন্তা অথবা কৌতূহলে আগের রাতে ঘুমাতেই পারেননি অধিনায়ক মুমিনুল। ম্যাচ শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, কী অনুভব করছি। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সত্যি কথা বলতে, আমি গত (মঙ্গলবার) রাতে ঘুমাতে পারিনি, আজ (গতকাল) কী হবে সেটা ভেবে। যখনই ৫ উইকেট পড়ে গেল, মনে হয়েছে ওরা কম রানেই অলআউট হয়ে যেতে পারে।’
টেস্টে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। সফরকারী সব দলের জন্যই নিউজিল্যান্ড সফর মানেই এখন প্রায় ‘মিশন ইম্পসিবল।’ উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য আরো বেশি। পাকিস্তান এখানে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছে ২০১১ সালে। শ্রীলঙ্কা সর্বশেষ জিতেছে ২০০৬ সালে। যে ভারত এখন ক্রিকেটে বিশ্বজুড়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তারা এখানে সর্বশেষ জিতেছে ২০০৯ সালে। বিরাট কোহলির দল সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে টেস্টে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। নিজেদের মাটিতে শেষ ১৭ টেস্টে অপরাজিত। সবচেয়ে বড় কথা, টেস্ট তো দূরে থাক তাদের মাটিতে ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেই সাফল্য ছিল না বাংলাদেশের। সেই নিউজিল্যান্ডের দুর্গে ১৭ সেশনের ১৬ সেশনেই দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য এক জয়। নতুন এক ইতিহাস। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও কি কেউ ভেবেছিলেন এমন কোনো ফলাফল আসতে পারে মাউন্ট মঙ্গানুইতে। রীতিমতো ভঙ্গুর একটি দল নিয়ে এ সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত কারণে যাননি দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার তামিম ইকবাল যেতে পারেননি ইনজুরির কারণে। তাই এক ঝাঁক তরুণদের উপরই আস্থা রাখে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে তো নয়ই, নিজেদের মাঠেই টেস্টে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে রীতিমতো বিধ্বস্তই হয়েছে তারা। বৃষ্টিতে প্রায় আড়াই দিন পণ্ড হওয়ার পরও পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আর দেশের বাইরে জয় বলতে গেলে কেবল শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েতে। তাও দলগুলোর সেরা তারকাদের অনুপস্থিতিতে। সেখানে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই দাপট বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত জয়। বিশ্বাস করতে পারছেন না অধিনায়ক মুমিনুল হক নিজেও। এ জয়ের কথা যদি ম্যাচের আগে বলতেন তিনি তাহলে পাগল আখ্যা পেতেন বলে জানান। মূলত প্রক্রিয়া ধরে রাখার দিকেই মনোযোগী ছিল বাংলাদেশ। মুমিনুলের কথায়, ‘আমরা ফল নিয়ে কিন্তু চিন্তা করিনি। আমি যদি বলতাম নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় ওদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জিতব, তাহলে সবাই বলত পাগল হয়ে গেছে লোকটা। আমাদের ভেতরে ছিল, প্রক্রিয়া অনুযায়ী যেন খেলতে পারি। যেমন ব্যাটিংয়ের সময় লক্ষ্য ছিল লম্বা সময় ধরে খেলার। বোলিংয়ে একটা জায়গায় বল করা।’ তিনি আরো বলেন, আমি সবসময় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আমার প্রক্রিয়া ও শরীরী ভাষা ঠিক থাকলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বোলারদের প্রতি বার্তা ছিল, আমরা শেষ চারদিন যে বল করেছি, সেভাবেই যেন করি। উইকেটের জন্য যাব না। পরিকল্পনা ছিল, উইকেটের জন্য বল করতে গিয়ে যেন রান না দেই। শেষ চারদিন যে প্রক্রিয়া ছিল, সেটাই অনুসরণ করা, চাপ তৈরি করা। ফল আসলে আসবে, না আসলে নেই।’
ইতিহাস বলে টাইগাররা যখন দল হিসেবে খেলতে পেরেছে, তখন উড়ে গেছে প্রতিপক্ষ সব দলই। তা সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন। ম্যাচ জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন হলেও জয়ে অবদান রয়েছে সবারই। শভমফ সতীর্থ সবারই জয়গান গাইলেন অধিনায়ক। এছাড়া দলের কোচিং স্টাফসহ সবার অবদানকেও তুলে ধরলেন মুমিনুল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।