পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যদি প্রশ্ন করা হয়, এ মুহূর্তে প্রধান জাতীয় ইস্যু কি? অবশ্যই উত্তর হবে, সংসদ নির্বাচন। এবং শুধু নির্বাচন নয়, সবাই এক বাক্যে বলবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একাদশ সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী, বিদ্যমান সংসদের মেয়াদকালে শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে পরবর্তী সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে মোতাবেক, জানুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। সেই নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, একথা এই জন্য বলা হচ্ছে যে, দশম সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক হয়নি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অধিকাংশ দল তাতে অংশ নেয়নি। সে নির্বাচন ছিল একতরফা, জব্বদস্তিমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য। একটি সুপরিকল্পিত ব্লপ্রিন্ট অনুযায়ী আয়োজিত সে নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বীদ্বতাহীন। তখন নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। বলা হয়, নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সুকৌশলে তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। তাই নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। আরো বলা হয়, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের উপযুক্ত প্রতিকার বা বিকল্প হতে পারে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, খুব শিগগিরই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। সরকার সে কথা রাখেনি।
এখন যখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দিন বাকী নেই, তখন সঙ্গতকারণেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের পক্ষে দশম সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন বলে স্বীকার করে নেয়া হলেও এবং ওই রকম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আর নয় বলে জানানো হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বিরোধী রাজনৈতিক দল, নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার। বলতে হয়, এ বিষয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাকিদ দিয়ে আসছে আগাগোড়া। তারাও এখন অনেক বেশি সরব। এমন কি যে ভারত দশম সংসদ নির্বাচনে সরকারের অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছিল এবং নির্বাচনে প্রভাবক ভ‚মিকা রেখেছিল সেই ভারতও এখন বলছে, সেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। সুতরাং, একথা নিদ্বিধায় বলা যায়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে একাট্রা।
সংহত জাতীয় ঐকমত্য ও আন্তর্জাতিক মহলের তাকিদের কারণেই হোক কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, ক্ষমতাসীন মহল থেকেও এখন বলা হচ্ছে, সেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন চায় এবং সেরকম একটি নির্বাচন হবে বলে আশা করে। নিউইয়র্ক সফরকালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরিমি হান্টের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ অভিমতকে অনেকেই সাধুবাদযোগ্য ও তাৎপর্যপূণ বলে মনে করছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিমত, অভিপ্রায় ও প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনিই সবচেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্ডোনিও গুতেরেস আবারও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে জাতিসংঘ মহাসচিব এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বের যে সব রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধির দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তা হয়েছে তারা সবাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে তাদের অভিমত দিয়েছেন। পররাষ্ট্র সচিব একথা জানিয়ে বলেছেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এই প্রত্যাশা এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করা কতদূর সম্ভব এবং আদৌ সম্ভব কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আজকের বিশ্বে, যেখানে রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরনির্ভরতা অনিবার্য, সেখানে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক অভিমত বেতোয়াক্কা করা কিংবা একলা চলা নীতি অনুসরণ করা সম্ভব নয়। এতে যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। বিষয়টি যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন বা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তাদের না বুঝার কিছু নেই।
কিছু দিন আগে পর্যন্তও নির্বাচন সম্পর্কে ক্ষমতাসীন মহলের অভিমত ছিল, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে যারা চাইবে অংশ নেবে, যারা চাইবে না, অংশ নেবে না। এ ব্যাপারে সরকার বা সরকারি দলের কিছু করার নেই। বিএনপির দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে কোনোরূপ সংলাপ বা আলোচনায় বসতে নারাজি প্রকাশ করে বলা হয়, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। এই অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি। বিএনপিকে বাইরে রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।
প্রশ্ন উঠতে পারে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার দায়িত্ব কার? উত্তরে বলা যায়, প্রথমত সরকারের। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চত হতে পারে না। নিশ্চিত হতে পারেনা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন এতটাই সরকারের আজ্ঞাবহ ও অথর্ব যে, তার পক্ষে স্বাধীনভাবে, সংবিধানিকভাবে কিছুই করা সম্ভব নয়। কাজেই যা করার সরকারকেই করতে হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো যদি সদিচ্ছাপ্রবণ না হয়, তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হতে পারে না। এক্ষেত্রে তাদের স্বত:স্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপিসহ ছোট-বড় সকল দলই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ পর্যন্ত কোনো দল এমন কোনো ঘোষণা দেয়নি যে, নির্বাচনে অংশ নেবে না। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, সে নির্বাচনে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রে নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের আর কোনো রাস্তা নেই। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার যেমন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আছে, তেমনি কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকতে চায়, তবে সে অধিকারও তার আছে। আমাদের দেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি আওয়ামী লীগ, অন্যটি বিএনপি। এ দুটি দল রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিদ্ব›দ্বীও বটে। এই দুটি দলের কোনো একটি দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় অর্থাৎ কোনো কারণে নির্বাচন বয়কট করে তবে সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলে সাব্যস্ত হয় না। এ ধরনের নজির বা বাস্তবতা আমরা শুধু ২০১৪ সালেই প্রত্যক্ষ করিনি, এর আগেও করেছি। অতএব, নির্বাচনে এই দু’দলসহ সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, একাদশ সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, খুব সময় বাকি নেই। অথচ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম উপস্থিতিও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি দলের তরফে ট্রেন মার্চ, রোড মার্চ করা হয়েছে। আরো অনুরূপ মার্চ হবে বলে জানা গেছে। সভা-সমাবেশ তো চলছেই। পক্ষান্তরে বিএনপি মাঠেই নামতে পারছে না। ঢাকায় একটি সমাবেশ করার জন্য দলটির পক্ষে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সমাবেশের সম্ভব্য দিনে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে পাল্টা সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ‘বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার কর্মীদের গলিতে গলিতে আটকে দেয়ার এবং হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এটা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের কথা হতে পারে না।
হামলা-মামলা-গ্রেফতারের মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থিত হতে না দেয়া কিংবা সব সময় দৌঁড়ের ওপর রাখার একটা নীতি সরকার প্রায় শুরু থেকেই অবলম্বন করে আসছে। অতি সম্প্রতি এতে আরো গতি আনা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে বিএনপির উদ্যোগ ও প্রয়াসের প্রেক্ষিতে গত কিছুদিন মামলা ও গ্রেফতারের রীতিমত হিড়িক পড়ে গেছে। বিএনপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, নতুন কয়েক হাজার মামলায় দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভুতুড়ে মামলার সন্ধান দিয়েছে সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমগুলো। এসব মামলায় মৃতু, অসুস্থ্য, চলন্তশক্তিহীন এবং বিদেশে অবস্থানরতদেরও আসামী করা হয়েছে।
কেন এ ধরনের গায়েবি মামলা, তার কোনো জবাব মামলা দায়েরকারীরা দিতে পারেননি। কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, উপরের নির্দেশে মামলা করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা-গ্রেফতারের তাণ্ডব ততই বাড়ানো হবে।
বিএনপিকে এভাবে দাবড়ানোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী হতে পারে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বদ্বীতাসক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়াই এর আসল এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। একদিকে অংশগ্রহণমূলক নিবাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করা হবে, অন্যদিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনাকে অসম্ভব করে তোলা হবে, এটা নির্বাচনের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার পরিচয় বহন করে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলে অবশ্যই সকল দলের জন্য অভিন্ন ও সমান সুযোগ অবারিত করে দিতে হবে। ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির কিছু দাবি আছে। এখন সেগুলো সকল বিরোধীদল ও নাগরিক সমাজেরও দাবি। মোটা দাগে বা সংক্ষেপ এ দাবিগুলো হলো : ১. নির্দলীয়- নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। ২. নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। ৩. বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দিতে হবে। ৪. রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, নতুন মামলা দায়ের ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। ৫. নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করতে হবে। ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে চলবেনা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইতোমধ্যে যুক্তফ্রণ্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া যে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছে, বিএনপির দাবিনামার সঙ্গে তার মিল রয়েছে। অন্যান্য বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও অনুরূপ দাবি জানানো হয়েছে। বলা যায়, এসব দাবির ক্ষেত্রেও এক ধরনের বৃহত্তর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দাবিগুলো মানা না হলে কিংবা এসব বিষয়ে সকল পক্ষের সম্মত সিদ্ধান্ত না হলে অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে না। এজন্য সংলাপ-আলোচনা খুবই প্রয়োজন, যার দাবি সরকারি মহল ব্যতিরেকে সকল মহল থেকেই জানানো হয়েছে।
সরকার বরাবরই দাবিগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে আসছে। এই অবস্থান এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত আছে। সরকারের এই অনড় অবস্থানের কারণে সামনের দিনগুলোতে দেশে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছে পর্যবেক্ষক মহল। সরকারের তরফে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে। এটা আশঙ্কার দিকটিই স্পষ্ট করে। বিএনপি কঠোর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহত্তর ঐক্য গঠনের জন্য যে সব সংগঠন সক্রিয়, তারাও আন্দোলনে নামার কথাই বলছে। ‘কঠোর আন্দোলন’ এবং তার মোকাবেলায় ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়ার পরিণতি যে সংঘাত-সহিংসতা, তা বিশাদ ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। আশঙ্কার এই প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট আইনজীবী, তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইনকিলাবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন : ‘দেশ আজ গভীর সংকটে। দেশের অবস্থা ভয়াবহ ও বিপদজ্জনক। এ বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই’। বিশিষ্ট রাজনীতিক এলডিপির প্রধান ড. অলি আহমদ আগামীতে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার ও রক্তপাতের আশংকা প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত বাম চিন্তক বদরুদ্দীন উমর ১৯৯০ সালের মতো অস্থায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনই আশংকিত পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র উপায়। সেক্ষেত্রে আলোচনা-সমঝোতা অবিকল্প। সরকার এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত যে অনমনীয় অবস্থানের রয়েছে, তাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন, সরকারের কাজ কি জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ করা? অত:পর তিনি বলেছেন, দ্রুত সমঝোতা এবং সরকার নমনীয় না হলে আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবো এবং সে পরিস্থিতিতে আমাদের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সমাধান সূত্র, বলাই বাহুল্য, সরকারের হাতে। দেশকে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে এবং উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশ তরান্বিত করতে হলে সরকারকেই ভূমিকা রাখতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যম অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই জনপ্রত্যাশা। আমরা আশা করি, সরকার জনপ্রত্যাশা উপেক্ষা করবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।